E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নীলফামারীর রাজনীতির গতি প্রকৃতি

২০২৪ জানুয়ারি ১৬ ১৬:০০:৫৭
নীলফামারীর রাজনীতির গতি প্রকৃতি

ওয়াজেদুর রহমান কনক


৬ অক্টোবর, ২০২১ দৈনিক বাংলা ৭১ পত্রিকার প্রথম পাতায় 'মুক্তিযোদ্ধারা প্রতি মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুসরণ করেছে' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সেদিন নীলফামারী শহরের মশিউর রহমান কলেজ মাঠে সদর উপজেলা এবং সৈয়দপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় যে বক্তব্য রাখেন সেটি নিয়েই খবরটি প্রচার করা হয়েছিল।

জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা দেন নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম, সাবেক সংসদ সদস্য জোনাব আলী, সাবেক সংসদ সদস্য শামসুদ্দোহা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম মোক্তারুজ্জামান, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডিপুটি কমান্ডার কান্তি ভূষণ কুন্ডু, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুজার রহমান, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

এই অনুষ্ঠানে সে সময়কার জেলা পরিষদ প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গের একথাটা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয়কে ৯ অক্টোবর 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানো' আমন্ত্রণ জানানো হয়।

নীলফামারীতে এবি পার্টির নামে জামায়াত -শিবিরকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছিল আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। ২০২২সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে নীলফামারী পৌর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী সমাবেশ থেকে এই অভিযোগ করা হয়েছে। নীলফামারীতে শোকের মাস আগষ্টে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে রবিবার পৌর আওয়ামী লীগের আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করেছে। নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পৌর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বিরাট বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করেছে। বিকেলে বিক্ষোভ মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। এরপর এখানে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মশফিকুল ইসলাম রিন্টুর সভাপতিত্বে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কৃষিবিদ দেওয়ান কামাল আহমেদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন মুন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিত ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক নীলফামারীতে এবি পার্টির নামে সহিংসতার ঘটনায় অভিযুক্ত জামায়াতের নেতাকে নিয়ে এবি পার্টির কার্যালয়ের উদ্বোধন প্রসঙ্গে বলেন, যতই মানুষের কাছে সার্বজনীন হতে চান না কেন, বাংলার মানুষ সচেতন। যারা যে অবস্থায় জামায়াত শিবিরকে মদদ দিচ্ছেন, প্রশ্রয় দিচ্ছেন- জঙ্গলের জামায়াত শিবিরকে, রাতের অন্ধকারের জামায়াত শিবিরকে আলোয় নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন, আপনাদের এই তৎপরতা সফল হবে না। যত জামায়াত রাজাকারকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেন - এটা ফলপ্রসু হবে না। জনগণের কাছে কখনো বাহাবা পাবেন না। ধিকৃত হয়ে, কোণঠাসা হয়ে রাজনীতিতে থাকতে হবে।

২০২২ সালের আগস্টে নীলফামারী জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলী হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ৩০ আগস্ট হত্যাকান্ডের ৪৭তম বার্ষিকীতে বুধবার শহরের স্বাধীনতা অম্লান চত্বরে সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তিন ঘন্টাব্যাপী তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। জেলা যুবলীগের আয়োজনে এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে জেলা আওয়ামী লীগসহ সকল অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সুধীর রায়ের সভাপতিত্বে প্রখ্যাত শ্রমিক ও যুবনেতা ইয়াকুব আলীর হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করে মানববন্ধন চলাকালে অনুষ্ঠিত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন নীলফামারী ২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা (সাবেক উপসচিব) আমিনুল হক, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদর উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা কান্তি ভূষণ রায়, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবুজার রহমান, জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি দেওয়ান সেলিম আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক নিকসু ভিপি কামরুজ্জামান কামরুল, সাধারণ সম্পাদক দীপক চক্রবর্তী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফি সবুজ, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি প্রনবানন্দ রায় রাখাল, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ সরকার প্রমুখ।

৭৫ এর ৩০ আগস্ট নীলফামারীতে মর্মান্বিত হত্যাকান্ডে নিহত শ্রমিক ও যুবনেতা ইয়াকুব আলীর স্মৃতিচারণ করে নীলফামারী ২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আগস্ট আমাদের জন্য কষ্টের মাস, বেদনার মাস। এক ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশকে তুলে এনে নিপুণ কর্মযজ্ঞে লিপ্ত ছিলেন জাতির জনক। পাকিস্থানের সাথে যুদ্ধ করে আমরা যে ভাবধারা পরিত্যাগ করেছি, পরাজিত শক্তি সেই ভাবধারাই ফিরিয়ে আনতে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছিল। সেই চক্রান্তের সূত্র ধরেই ৭৫ এর ১৫ আগস্টের সূচনা, এরই সূত্র ধরে ১৭ আগস্ট আর ২১ আগস্টের সূচনা। এই সূত্র ধরেই ৭৫ এর ৩০ আগস্ট নীলফামারীতে ইয়াকুব আলী হত্যাকান্ডের শিকার হন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র কৃষিবিদ দেওয়ান কামাল আহমেদ বলেন, ৭৫ এর ৩০ আগস্ট ইয়াকুব আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীরা স্বাধীনতা মেনে নিতে চায়নি। এরই ধারাবাহিকতায় নীলফামারীতে ইয়াকুব আলী হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। তিনি সরকার ও প্রশাসনের কাছে ইয়াকুব আলী হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন।

নীলফামারী সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শহীদুল ইসলাম বলেন, আমাদের আফসোস হয়, দুঃখ হয় স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও যদি মানবতারবিরোধীদের বিচার হয়, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়, যে রাজনৈতিক শুন্যতা সৃষ্টির জন্য জাসদের গণবাহিনী প্রখ্যাত যুব ও শ্রমিক নেতা ইয়াকুব আলীকে গুলি করে হত্যা করে, এর বিচার না হয়, তবে এই দুঃখ আমরা রাখবো কোথায়।

২০২২ ডিসেম্বর ০৭ দৈনিক বাংলা ৭১ পত্রিকায় প্রকাশিত 'নীলফামারী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানকে সংবর্ধনা ‘পরাজিত প্রার্থী ক্রমাগত ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন’ আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মমতাজুল হককে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয় । সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি হিসেবে এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক ছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মশফিকুল ইসলাম রিন্টু, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ রহমান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুজার রহমান।

বিজয়ের মাসে সকল শহীদ ও নির্যাচিত মা-বোনদের স্মরণে উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রথম নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মমতাজুল হককে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন।

সংবর্ধনার জবাবে ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ওই বেচারা এখন একটা মাইক নিয়ে হাটে বাজারে যেভাবে ওষুধ বিক্রি করে সেভাবে হাটে-বাজারে যাচ্ছে আর মাইকিং করছে। এটাও প্রতিহত করতে হবে। এটা আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ, এটা আওয়ামী লীগের নীলফামারী।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীকে ভদ্র ভাবে কথা বলার পরামর্শ দিলেন জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক। উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে তিনি অভিযোগ করে বলেন, উনি এখনো উল্টা পাল্টা কথা বলছেন।

ক্রমাগত তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন নিজের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় তুলে ধরে এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক বলেন, আমি ২০০৬ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী সম্পর্কে বলেন, উনি কি করেন, উনি কখনো করেন জাসদ, কখনো বাসদ, কখনো জাতীয় পার্টি, কখনো এবি পার্টি।

২০২১ অক্টোবর ০৬ ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ এই শব্দ গুলো একটার সাথে একটার এমন গভীর সম্পর্ক যে একটিকে জানলে অন্যটিও জানা হয়ে যায়। কেউ যদি বঙ্গবন্ধুকে জানতে চায়, তবে তার মুক্তিযুদ্ধটাও জানা হয়ে যায়। কেউ যদি মুক্তিযুদ্ধকে জানতে চায়, তবে তার বাংলাদেশকেও জানা হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ যে এই তিনটির রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবাহিত হয়েছে, তাও কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক, আওয়ামী লীগের উপস্থিতি ছাড়া তাঁদের মর্যাদা রক্ষা করার আর কেউ আছে কি ? রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা করা চলে, কিন্তু ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’-এর কোন বিরোধীতা চলে না।

মুজিব বর্ষে দল-মত নির্বিশেষে যে যার অবস্থান থেকে স্মরণ করবে, এটাকে বাঁকা চোখে দেখার কিছু নাই। মুজিব বর্ষে অনেক জামায়াত-শিবিরের প্রতিষ্ঠানের সামনেও শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার টাঙ্গানো হয়েছে । বিপত্তিটা আসলে অন্য জায়গায়। যখন ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে পুঁজি করে কেউ রাজনৈতিক ফয়দা লোটার চেষ্টা করবে বিপত্তিটা আসলে সেখানেই।

নতুন প্রজন্মের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে জানানো দ্বায়িত্বটা আসলে কার ? নিশ্চয়ই জামায়াত-শিবির এই দ্বায়িত্ব পালন করবে না। যদি তারা সেটা করেও তবে তারা কোন পয়েন্ট অব ভিউ থেকে নতুন প্রজন্মের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে জানানোর প্রয়াস চালায় অথবা চালানোর চেষ্টা করে সেটা বোঝার জন্য কি তাহলে শেষ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ হতে হবে!

ভোটের রাজনীতির জন্যই হোক আর অন্য যেকোন কারণেই হোক আওয়ামী লীগে যে অনুপ্রবেশকারীদের অস্থিত্ব বিদ্যমান, আশা করি একথা কেউ অস্বীকার করবে না। দুই একবার নৌকার টিকিট পেলেই যে সে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের একজন হয়ে গেল, একথা বিশ্বাস করলে ক্ষতিটা আর কারো না হোক, ক্ষতিটা হবে আওয়ামী লীগের। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করতে সবাই এক কাতারে শামিল হলেও সবার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এক ছিল না। বামপন্থীদের একটা অংশ ‘দুই কুত্তার কামড়াকামড়ি’ আখ্যা দিয়ে শত্রু পক্ষ- মিত্র পক্ষ এই দুই পক্ষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এখন এদের কাছে থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প কেন শুনতে হবে ? কমিউনিস্ট পার্টির সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আর নতুন করে কিছু বলার নাই। কমিউনিস্ট পার্টি বঙ্গবন্ধুর কোন মর্যাদাহানি ঘটায়নি। কমিউনিস্ট পার্টির কাছে থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনা যেতে পারে, কিন্তু অন্যান্য দল গুলোর ক্ষেত্রে ? সব দলকেই কি কমিউনিস্ট পার্টির কাতারে ফেলা যায় ?

স্বাধীনতা পূর্ববতী সময়ে যারা ছাত্রলীগ/ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে না থেকে এনএসএফ-এর সাথে রাজনীতি করেছে, তাদের কাছে থেকে কি রকম মুক্তির সংগ্রামের গল্প আশা করা যায় ! স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাসদের ভূমিকা কি ছিল, তারা কি রকম মুক্তির সংগ্রামের গল্প মানুষকে শোনাতে চায়! স্বাধীনতার পর প্রায় দুই দশক যারা আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি করে পৌর চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছে তারা কেমন মুক্তিযুদ্ধকে জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে। যারা আপাদমস্তক একজন জাত আওয়ামী লীগারের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে পারে, তারা কেমন মুক্তিযুদ্ধকে জানাতে আসছে! নৌকার মনোনয়ন না পেলে যারা ‘বিদ্রোহী’ হয় এরা আবার কেমন মুক্তিযুদ্ধের কথা জানাতে চায়!

আগামী ৯ অক্টোবর নীলফামারীতে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে জানো’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। ইতিমধ্যে শহরের দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারে গেছে। ৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নীলফামারী সফর করে গেছেন। আর তিনদিন পরের এই অনুষ্ঠানেও তাঁর উপস্থিত থাকার কথা পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে। সাথে বিশেষ অতিথি হিসেবে নীলফামারী-২ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের নামও ঘোষণা করা হচ্ছে। তবে, অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত থাকবেন কি না একথা স্পষ্ট করে আওয়ামী লীগের কেউ বলছে না।

‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’-এর মর্যাদা অন্য কেউ এসে রক্ষা করবে না, কেউ না। যদি মর্যাদা রক্ষা করতে হয়, তবে আওয়ামী লীগকেই এগিয়ে আসতে হবে। ‘বঙ্গবন্ধু’ ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ‘বাংলাদেশ’ কে পুঁজি করে ফয়দা লোটার চেষ্টা রুখে দিতে পারবে কি আওয়ামী লীগ ? আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হয়ে গেল। সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের টিম কাজ করেছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নৌকা প্রতীকের জন্য কাজ করেছি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু ৮৬% ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন। ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করেছিলেন। এই বিজয় কারো দয়ার দান ছিল না।'

'৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা লক্ষ্য করলাম। আমাদের মধ্য কিছু বীর মুক্তিযোদ্ধা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছে। তাদের আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বলতে পারি না। '

এই সকল মুক্তিযোদ্ধাকে 'খন্দকার মোস্তাকের' সাথে তুলনা করলেন সাবেক নীলফামারী মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সাবেক যুগ্ন-সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক।

তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি অনুগত নয়, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

এ কথা আগে বলা হয়নি, কিন্তু আজ আমরা একথা বলছি, তাদের আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করতে পারি না।

আমরা বিজয় লাভ করেছি, মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক নৌকার বিজয় হয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাবিরোধীরা আমাদের কাছে পরাজিত হয়েছে।

সরকারের সাবেক এই যুগ্ম-সচিব বলেন, এই পরাজিত শত্রুরা শেখ হাসিনাকেও হত্যার চেষ্টা করেছে। নির্বাচন ঠেকাও বলে যারা জ্বালাও-পোড়াও করেছে, আগামীতেও তারা এই ঘটনা আবারও ঘটাতে পারে বলে মন্তব্য করেন সাবেক ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক। এসময় তিনি উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো, পরাজিত অপশক্তির বিষয়ে সজাগ থাকবো। মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক, স্বার্বভৌমত্বের প্রতীক নৌকা রক্ষা করতে হবে।

আজ দুপুরে নীলফামারী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সভায় নীলফামারীর নেতৃত্বস্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য এইসব বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে।

নির্বাচন পরবর্তী এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক (সাবেক উপ-সচিব), মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমিটির সাবেক ডেপুটি কমান্ডার কান্তি ভুষণ কুন্ডু, সদর উপজেলা কমিটির সাবেক কমান্ডার শহিদুল ইসলাম, সদর উপজেলা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুধাংশু রায়, সদর উপজেলা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দীনসহ জেলার নেতৃত্বস্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test