E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মানুষের আস্থার প্রতিদান দিতে হবে সরকারকে

২০২৪ জানুয়ারি ২৯ ১৬:৪৮:০৫
মানুষের আস্থার প্রতিদান দিতে হবে সরকারকে

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিএনপি বিহীন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। পশ্চিমা দেশের চাপের কাছে মাথা নত না করে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন বন্ধ না করে এগিয়ে যান দ্রুত গতিতে। নির্বাচনের তিন দিন পর ১০ জানুয়ারি নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন স্পিকারের নিকট। এরপরদিন রাষ্ট্রপতির নিকট শপথ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা। ভিন্ন রকমের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বর্তমান সরকারের যাত্রা শুরু হল এ কথা বলা চলে। যদিও নির্বাচন নিয়ে সবসময় একটা চ্যালেঞ্জের মধ্যেই ছিলেন বর্তমান সরকার প্রধান ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। নির্বাচনের শুরুতেই বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল। শেষে সেই সংশয়ই সত্যি হয়। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে জনসাধারণকে ভোট বর্জনের আহবান জানান। তারা হরতাল অবরোধ ও নির্বাচন বর্জনের জন্য লিফলেট বিতরণ করে। বিএনপি দাবী করছে তাদের আন্দোলন সফল হয়েছে অন্যদিকে সরকার বলছে বিএনপির আবেদন সাধারণ মানুষ প্রত্যাখান করেছে। 

স্বাভাবিক ভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে দুপক্ষের কথারই কিছুটা সত্যতা রয়েছে। কারন ভোটারের উপস্থিতি সরকারকে কিছুটা হলেও বিব্রত করেছে। তবে আন্দোলনে বিএনপি যে সফল হয়েছে সে কথাও বলা চলে না। কারন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কত শতাংশ ভোট হলে সেটা গ্রহণযোগ্য সেটা বলা নেই। অন্যদিকে উপস্থিতি একেবারেই হেলাফেলা করার মতো না। ভোটার উপস্থিতি কম হলেও যারা ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে তারা সহজেই ভোট দিতে পেরেছেএবং তাদের মতের প্রতিফলন ঘটেছে এটা সত্য যা গণতন্ত্রের জন্য একান্ত কাম্য। অধিক ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করা না গেলেও ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল একথা বলা চলে। দুএকটি বিছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে এটা অসত্য নয়। নির্বাচনের পর সরকার গঠন নিয়েও উত্তেজনা ছিল সবার মাঝে। সংসদীয় গণতন্ত্রে মন্ত্রী পরিষদ নিয়োগের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপর। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১জন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশ এই সরকারকে অভিনন্দন জানাতে থাকে এবং একসাথে কাজ করে যাবে বলে আশস্ত করে যাচ্ছেন।

নির্বাচনের আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র এ নির্বাচনের বিরোধীতা করে আসছিল এবং এ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞা দেয়ার চিন্তা করছিল। কিন্তু সরকার যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করার ব্যাপারে ছিল বদ্ধ পরিকর। তাই বলা চলে নানা সমীকরণে বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। এখন আলোচ্য বিষয় হলো সামনের সময়ে কি কি চ্যালেঞ্জ রয়েছে সরকারের ? এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কিভাবে এগিয়ে যাবে ? ইতোমধ্যে দেশ উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে এবং মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সামনে রয়েছে আরো বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যেসব বড় বড় প্রকল্প বিদেশিদের সহায়তায় বাস্তবায়ন হচ্ছে সেগুলি পড়তে পারে চ্যালেঞ্জের মুখে। একদিকে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচী অন্যদিকে বহিঃবিশ্বের নানামুখি চাপ। এছাড়াও গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের নামে বিদেশি প্রভূদের সন্তুষ্ট রাখা বড় কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে দাঁড়াবে বলেই মনেই হয়। তবে একথা মানতে হবে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন চাপ মাথায় নিয়েই বলা চলে একহাতে সামলে যাচ্ছেন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ।

ইতোমধ্যে নতুন পুরাতনের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে মন্ত্রীসভা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারনে যারা সমালোচিত হয়েছেন তাদেরকে বাদ রাখা হয়েছে এবারের মন্ত্রী সভায়। বিশিষ্ট জনদের মতে এবারের মন্ত্রীসভা তুলনামূলক ভাবে অনেক স্মার্ট হয়েছে বলে শুনা যাচ্ছে। যদিও এর প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের কার্যক্রমে। আপাতত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কূটনীতিতে অস্বস্তি কাটানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সামনের সময়গুলিতে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তাদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন রকমের পথ খুঁজবে যেহেতু তাদের কথা মতো নির্বাচন করা হয়নি। বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাঁধা তৈরি করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাদের লক্ষ্য থাকবে দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব বিস্তার করা। সেজন্য তারা বিরোধী দলীয় শক্তিকে ব্যবহার করতে চাইবে আর যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে আসে নাই তাই তারা চাইবে যেকোনো মূল্যে দেশের সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে এ কারনে অর্থনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হতে পারে সরকার। সংসদেও বিরাজ করতে পারে অশান্তি। কারণ বিরোধী দল হিসেবে জাপা তাদের নিজেদের দল ঠিক রাখতে হিমশিম খাচ্ছে এর প্রভাব পড়তে পারে সংসদেও।

অন্যদিকে ম্বতন্ত্ররাও সরকারের লোক হিসেবেই সংসদে থাকতে আগ্রহী বেশি। তাই সংসদ হতে পারে প্রাণহীন যা গণতন্ত্রের জন্য শোভনীয় নয়। সামনে আসছে উপজেলা নির্বাচন আর এ নির্বাচনে বিএনপি না আসার সম্ভাবনাই বেশি। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মতো এ নির্বাচনও হবে দলীয় লোকদের মাঝে। দলীয় লোকরা একে অন্যের প্রতিপক্ষ হওয়ায় দলে বাড়ছে বিভেদ। যে বিভেদ সামনে আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে। একসময় তা চলে যাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং ভেঙ্গে পড়তে পারে দলের চেইন অফ কমান্ড। ইতোমধ্যে সাধারণ জনগণের মাঝে বর্তমান সরকারের উপর আস্থা পরিলক্ষিত হতে শুরু করেছে। তবে সবচেয়ে সমস্যাটা হলো দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি। মানুষের মাঝে এ বিষয়টি চরম হতাশা বিরাজ করছে। একসময় করোনা ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হলেও এগুলো আর মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। মানুষ চায় কাজ করতে শান্তিতে চারটা ভাত খেতে তাই এ নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে। অন্যদিকে বিএনপিকে ভবিষ্যতে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে বিদেশি নির্ভরতা কমাতে হবে। তাদের এটাই মনে রাখতে হবে যে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে জনগণকে সাথে নিয়েই সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করতে হবে।

আমাদের দেশে কোন সরকারের আমলেই বিরোধীদের রাজনীতি করা সহজ ছিল না। কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই সামনে এগুতে হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীর উপর হামলা মামলা কোন সময়ই কম ছিল না। তাই রাজনীতি হতে হবে দেশের জনগণের সাথে ও মাঝে দেশ কে বাঁচিয়ে। না হলে হতে হবে দেশ বিরোধী। অন্যদিকে সরকারকে মানুষের আস্থা ধরে রাখার জন্য সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে হবে এবং বিরোধীদেরও রাজনীতি করা সুযোগ দিতে হবে। জনগণ যদি তাদের আস্থার প্রতিদান না পায় তাহলে সুযোগ মতো তারাই মুখ ফিরিয়ে নিবে। কারন যে দলই আন্দোলন করুক তাতে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে আন্দোলনে সফল হওয়া যাবে না। তাই সবক্ষেত্রেই জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।

লেখক :শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক।

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test