E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্যাংক খাত সংকটে, আতঙ্কে আমানতকারী

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ১৪ ১৬:৫২:১৬
ব্যাংক খাত সংকটে, আতঙ্কে আমানতকারী

চৌধুরী আবদুল হান্নান


বর্তমানে দেশে সবচেয়ে ব্যাপক আলোচিত বিষয় ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে। ব্যাংক ব্যবস্থার দুরবস্থা নিয়ে আলোচনা নতুন নয়, দীর্ঘদিনের; এখন তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ব্যাংকে জমাকৃত টাকা চাহিদা মতো ফেরত পাওয়া যাবে তো? এমন আশঙ্কা তাড়া করে ফিরছে অনেকের মনে।আমানতকারীদের জমা টাকায়ই তো ব্যাংক চলে, তবে কেন ব্যাংকে টাকার ঘাটতি পড়বে? তবে কি তারা সব টাকা তুলে নিয়ে গেল? ঘটনা তা নয়।

আসলে ব্যাংকাররা যাচাই বাছাই না করে অপাত্রে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে দিয়ে নিজেরা ফাঁদে পড়েছেন, আদায় করতে পারছেন না এবং ব্যাংকারদের অদক্ষতায় ওই সকল ব্যাংক এখন ডুবন্ত তরী।

দুর্বল ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক একটু বেশি; যদি ব্যাংক বন্ধ হয়ে যায়, তাদের আমানতের কী হবে? আতঙ্কের সাথে যখন গুজব যুক্ত হয়, তখন আমানতকারীদের মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়ে যেতে পারে। এমন নজির অতীতে আছেও।

দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুরবস্থা নিরসনে, সুশাসন ফেরাতে ব্যাংক খাত নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার অন্ত নেই এবং এ সকল নিষ্ফল কার্যক্রম নিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদ পত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে মানুষের মনে বিরাজমান আতঙ্ক আরও তীব্র হচ্ছে।

অনিয়মে জর্জরিত একটি ব্যাংকে ১৯৯৪ সালে প্রথম পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ধীরে ধীরে সরকারি, বেসরকারি অনেক ব্যাংকে তা বিস্তৃতি লাভ করে। এ পদক্ষেপে ব্যাংক খাতে কোনো সুফল মিলেনি; অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তো আর বসে থাকতে পারে না, এবার আর পর্যবেক্ষক নয়, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া শুরু হলো সমন্বয়ক।পর্যবেক্ষক আর সমন্বয়ক, এদের কাজের পার্থক্যই তো বুঝা গেল না। এ সকল ব্যর্থ প্রচেষ্টা অনবরত প্রত্যক্ষ করতে থাকলে “ল্যাজে গোবরে” কথাটি বার বার মনে হবে।

ব্যাংক ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবার কিছু নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনা, দুর্বল ব্যাংককে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ ইত্যাদি।

নিয়মের মধ্যে ফিরিয়ে আনা এবং গ্রহকের আস্থা ধরে রাখার জন্য যত পরিকল্পনা করা হোক না কেন, ব্যাংক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ভাবনা দূর করা সহজ নয়।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মইনুল ইসলামের একটি মতামত এখানে প্রণিধানযোগ্য, তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রোডম্যাপ সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে সমানভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে মনে হয় না” (সমকাল ০৭/০২/২৪ ইং)।

যে সকল আমানতকারী ব্যাংকে তিলে তিলে সঞ্চয় করা জীবনের শেষ সম্বল ফেরত পাওয়া নিয়ে অতিরিক্ত দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত, তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, ব্যাংকে জমা টাকা ফেরত পাওয়া যায় না- এমন ঘটনা ঘটে না, অতীতেও ঘটেনি।

কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেলেও আমানতকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, সকল ব্যাংকের অভিভাবক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জমা টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করবে; সর্বোপরি সরকারের দায় তো রয়েছেই।

সীমাহীন দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাংক অব ক্রেডিট এ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) নামের আন্তর্জাতিক ব্যাংকটি নব্বই দশকের প্রথম দিকে বন্ধ হয়ে গেলে এমন হয়েছিল। তখন বাংলাদেশি আমানতকারীদের টাকা বিশেষ ব্যবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

সে যাই হোক, অর্থনীতি বাঁচাতে ব্যাংক ব্যবস্থাকে অর্থ লুটপাট আর বিদেশে অর্থ পাচারের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার হতে দেওয়া যায় না। রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থাপত্র দেখলে মনে হবে শরীরে বাসা বেধে থাকা ব্যাধি সঠিকভাবে চিহ্নিত না করেই চিকিৎসা শুরু হয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে কি পরিমান খেলাপি ঋণ, বেনামি ঋণ, অবলোপনকৃত ঋণ রয়েছে একদিকে যেমন তার সঠিক তথ্য নেই, অন্যদিকে ব্যাংকারদের মধ্যে এ সকল তথ্য গোপন করে রাখার প্রবণতা রয়েছে।

এ অবস্থায় আইএমএফ এর দেওয়া শর্ত পূরণের সুবিধার্থে আদায়ের ক্ষেত্রে কঠোরতার পরিবর্তে অবলোপন নীতিমালা আরও শিথিল করে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর কৌশল বাতলে দিলে তা ব্যাংক ব্যবস্থার জন্য শুভ হবে না।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test