E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সংরক্ষিত নারী আসনেও শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে ব্যবসায়ীরা

২০২৪ মার্চ ১০ ১৬:১২:২৫
সংরক্ষিত নারী আসনেও শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে ব্যবসায়ীরা

সাইফুল হক মিঠু


নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখার প্রচলন শুরু হয় স্বাধীনতার পরপরই। সেসময় ১৫টি আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। এরপর পার হয়েছে অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময়। এসময়ে ১৫ থেকে বেড়ে ৫০টিতে দাঁড়িয়েছে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা। সময় যত গড়িয়েছে ধীরে ধীরে সংসদে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। সংরক্ষিত নারী আসনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এভাবে নারীর ক্ষমতায়ন কতটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলগুলোতে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত না থাকায় সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক বিবেচনায় হয়। ফলে বাদ পড়ছেন ত্যাগী, অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত ৫০ জনের মধ্যে ১৯ জনই ব্যবসায়ী। একাদশ জাতীয় সংসদে যা ছিল ৯ জন। এবার ব্যবসায়ী ছাড়াও নিজেদের পেশা গৃহিণী উল্লেখ করেছেন পাঁচজন। সাতজন নিজেকে রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন সাংবাদিক, কৃষিজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী। কয়েকজন পেশার কথা উল্লেখ না করলেও তারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। সংরক্ষিত নারী আসনের ৫০ জনের মধ্যে ২৯ জনই বসবাস করেন রাজধানীতে।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইটে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত তথ্যের হলফনামা প্রকাশ করা হয়। ওই হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত আসনে ৫০ নারীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ হয়। পরদিন তারা শপথ নেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে ২২৪ আসনে। জাতীয় পার্টি ১১ ও ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি করে আসন। সংরক্ষিত ৫০ নারী আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্রদের সমর্থন নিয়ে পেয়েছে ৪৮ আসন। বাকি দুটি পেয়েছে জাতীয় পার্টি। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগ পায় ৪৩টি। এছাড়া সংখ্যানুপাতে বিএনপি পায় একটি, জাতীয় পার্টি ৪টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ও স্বতন্ত্র একটি করে আসন পায়।

দ্বাদশ সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হলফনামায় ব্যবসাকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ১৯ জন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আগে দুবার সংসদ সদস্য থাকা ওয়াসিকা আয়শা খান ও সাবেক সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত হলেও সেটাকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেননি। তারানা হালিম জানিয়েছেন, নবম জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার পর তিনি আইন পেশা ছেড়ে দেন। কানন আরা বেগম তার পেশা সম্পর্কে জানিয়েছেন, তিনি গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পরামর্শক।

এছাড়া শিক্ষকতায় যুক্ত আছেন নাছিমা জামান ববি (ইংরেজি শিক্ষক), পারভীন জামান, রুনু রেজা (অধ্যাপনা ও ব্যবসা), লায়লা পারভীন, ফারজানা সুমি, অনিমা মুক্তি গোমেজ (সংগীত শিল্পী ও শিক্ষকতা) ও আশ্রাফুন নেছা। পারুল আক্তার, সাবেরা বেগম, দিলোয়ারা ইউসুফ, জ্বরতী তঞ্চঙ্গ্যাঁ, মাহফুজা সুলতানা (ব্যবসায়ী ও গৃহিণী) নিজেদের গৃহিণী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

অন্যদের মধ্যে রেজিয়া ইসলামের পেশা কৃষি, রোকেয়া সুলতানা চিকিৎসক, ফরিদা আক্তার বানু ও খালেদা বাহার বিউটি সমাজকর্মী। রেজিয়া ইসলাম ও নাজনীন নাহার রশীদের আয় হয় কৃষি থেকে, শাম্মী আহমেদ অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী, বেগম শামসুন নাহার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও সামাজসেবক, ফজিলাতুন নেসা অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি কর্মকর্তা, শেখ আনার কলি পুতুল চাকরিজীবী, ফরিদা ইয়াসমিন (সাংবাদিক) ও আরমা দত্ত বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকার কর্মী।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২০০ সংসদ সদস্যের পেশা ব্যবসা বলে জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা বলছে, শতকরা হিসাবে সংসদ সদস্যদের ৬৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। একাদশ জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী ছিলেন ১৮৫ জন বা মোট সংসদ সদস্যের ৬১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এবারের সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিতদের ৩৮ শতাংশই ব্যবসায়ী।

কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক তানিয়া সুলতানা হ্যাপী। তৃণমূলে রাজনীতি করে উঠে আসা এ নেত্রীর মতে, শুধু রাজনীতি নয়, নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে দিতে আর্থিক সমৃদ্ধিও প্রয়োজন। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা যারা শুধু রাজনীতিই করেছি, তারা অনেকটা ছিটকে পড়েছি। রাজনীতির পাশাপাশি আমাদের অন্যদিকে উন্নতি করার দরকার ছিল। সেই জায়গায় আমাদের গ্যাপ আছে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে নারীরা জিতেছেন মাত্র ২০টিতে। একাদশ সংসদে এ সংখ্যা ছিল ২২টি। বিগত চার নির্বাচনে এ সংখ্যা ১৮ থেকে ২২ জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ, সংসদে ও রাজনৈতিক দলগুলোতে নারীর অবস্থান প্রায় একই রয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমে বলেন, ‘সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সবদিক বিবেচনা করে প্রার্থী পছন্দ করেছে। এখানে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও দলের প্রতি আনুগত্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।’

জাতীয় পার্টিরে যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম গণমাধ্যমে জানান, ‘সংরক্ষিত নারী আসনে তাদেরই মনোনীত করা হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে আছেন। যোগ্য দুজনকেই মনোনয়ন দিয়েছে জাতীয় পার্টি।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে প্রক্রিয়ায় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন রাখা হয়েছে সেটা নতুন করে ভাবা দরকার। জয়ী দল তার পছন্দের প্রার্থীদের মনোনীত করে কোটা পূরণ করবে, এভাবে যোগ্য নারী নেত্রীরা নির্বাচিত হচ্ছেন কি না- তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। যারা এখানে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অনেকেই মৌলিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি। দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন এমন কেউ কেউ হয়তো আছেন। তবে বিশাল অংশ অন্যভাবে এসেছেন। ফলে রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের বিকাশ হচ্ছে না।

সংরক্ষিত নারী আসনে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য মূল ধারার রাজনীতির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমে বলেন, ‘সংসদে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবসায়ী। সংরক্ষিত আসনেও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে। এটা বাস্তবতারই প্রতিফলন।’

বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র নিশ্চিত হলে যোগ্য নারীরা সুযোগ পাবেন, নিশ্চিত হবে নারীর ক্ষমতায়ন। দলগুলোর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বিধান রয়েছে। সেটা যদি বাস্তবায়ন করে তাহলে এমনিতেই রাজনৈতিকভাবে নারীরা অনেক বেশি যোগ্য হয়ে গড়ে উঠবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিল দিন বদলের সনদ নামে; সেখানে তারা বলেছে সংরক্ষিত নারী আসন এক-তৃতীয়াংশ করা হবে। সেখানে সরাসরি নির্বাচন হবে। ভোটারদের ভোটে এই প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন। সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। যারা সরকারে থাকেন, বেশিরভাগ আসনে তাদের অনুগ্রহের প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। সংসদের আসন অনুপাতে জাতীয় পার্টি থেকে দুজন সুযোগ পেয়েছেন। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৩৮ আসন, স্বতন্ত্ররাও তো আওয়ামী লীগের। তারা আওয়ামী লীগকে ১০টি সংরক্ষিত আসন ছেড়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ৪৮ আসন। এখানে দলগুলো তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী নির্বাচিত করেছে। ক্ষমতা বা প্রভাবের কারণে ব্যবসায়ী ও রাজধানীতে বসবাস করা প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এতে ৬৪ জেলার মধ্যে মাত্র ৩০ জেলা থেকে সংরক্ষিত আসনে নারীরা নির্বাচিত হয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, সংরক্ষিত আসনের বেশিরভাগ সংসদ সদস্যই নারীদের নয় ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবসায়ীদের সন্তুষ্ট করছে। এসব সংসদ সদস্যের মূল্যায়ন রাজনীতিবিদ কিংবা নারী হিসেবে হয়নি। তাদের মূল্যায়ন হয়েছে ব্যবসায়ী কিংবা ব্যবসায়ীর স্ত্রী হিসেবে। নারী নেতৃত্ব দিয়েছেন, নারীদের জন্য লড়েছেন- এমন প্রার্থী খুব বেশি নেই।

যেভাবে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের প্রচলন

১৯৭২ সালের সংবিধানে ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বিধান রাখা হয়। তখন একটি উপধারায় এ ঘোষণাও দেওয়া হয় যে ‘সংবিধান প্রবর্তন হওয়ার ১০ বছর পার হওয়ার পর সংসদ ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত ১৫টি আসন নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। তারা আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন।’

পরবর্তীসময়ে পঁচাত্তরের পর সামরিক শাসনকালে সংবিধানের এই ধারায় পরিবর্তন আনা হয়। সামরিক ফরমানের দ্বিতীয় ঘোষণাপত্রের ৬ নম্বর সংশোধন আদেশে (১৯৭৮) ‘১০ বছরের’ জায়গায় করা হয় ১৫ বছর এবং নারীদের সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ১৫ থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৩০টি। ২০১১ সালে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে এ সংখ্যা বাড়িয়ে ১০ বছর মেয়াদে করা হয় ৫০টি। তবে ১০ বছর শেষ হওয়ার আগেই ২০১৮ সালের ৮ জুলাই ১৭তম সংশোধনীতে আসন সংখ্যা ২৫ বছরের জন্য বাড়িয়ে ৫০টিতে উন্নীত করা হয়।

সংসদের ৩০০ সাধারণ আসনে সরাসরি জনগণের ভোটের মাধ্যমে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হয় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটে। তবে এসব আসনের মনোনয়ন যেহেতু দলীয়ভাবে দেওয়া হয়, তাই অন্য কোনো প্রার্থী না থাকায় সংরক্ষিত আসনে কখনোই নির্বাচন হয়নি।

সংবিধান অনুসারে, সংরক্ষিত ৫০ নারী আসনকে ৩০০ (দেশের নির্বাচনী এলাকা) দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত ভাগফলকে কোনো দল বা জোটের এমপি সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে যে ফল পাওয়া যাবে, তারা তত সংখ্যক সংরক্ষিত নারী আসন পাবে। গুণফল ভগ্নাংশ হলে শূন্য দশমিক ৫ বা তার থেকে বেশি ভগ্নাংশের জন্য একটি আসন পাওয়া যাবে। অবশ্য বণ্টন করা আসন সংখ্যা মোট আসনের থেকে বেশি হলে ভগ্নাংশের হিসাবে হেরফের হতে পারে।

কার কী সম্পদ আছে

জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান নূরুন নাহারের আছে ৬ ভরি স্বর্ণ। যার মূল্য তিনি দেখিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২০০ শতক জমির কথা উল্লেখ করলেও তার মূল্য জানাননি। তবে স্বামীর নামে ঢাকায় ১২ লাখ টাকা মূল্যের বাড়ি, ২০ হাজার টাকা মূল্যে গ্রামে আধাপাকা বাড়ি ও ৮০ হাজার টাকা মূল্যে গ্রামে ৭০০ শতক জমির কথা জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টির অপর সংরক্ষিত এমপি যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমা ইসলাম শত কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের কথা জানিয়েছেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন। তার বার্ষিক আয় ১২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। নগদ ৮ লাখ ৪৩ হাজার ও ব্যাংকে ২ লাখ টাকা থাকার তথ্য দিয়েছেন ফরিদা ইয়াসমিন। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। পাশাপাশি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ৭৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেখিয়েছেন হলফনামায়।

অস্থাবর সম্পদ কোটি টাকার বেশি রয়েছে বেশ কয়েকজন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যর। তারা হলেন ফরিদা খানম, আশ্রাফুন নেছা, শামীমা হারুন, পারভীন জামান, রুনু রেজা, নাদিয়া বিনতে আমিন, ফজিলাতুন নেসা, শবনম জাহান, বেদৌরা আহমেদ সালাম ও আরমা দত্ত। ওয়াসিকা আয়েশা খানের নিজ নামে এক কোটি ৭৫ লাখ ও স্বামীর নামে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সম্পদ আছে। শামীমা হারুন নিজ নামে ৫ কোটি ২৭ লাখ ও তার স্বামী আবদুল্লহ আল হারুনের নামে ৭ কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন। স্কুল শিক্ষিকা আশ্রাফুন নেছার রয়েছে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১২০ ভরি সোনা। আরমা দত্তের রয়েছে ৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সম্পদ। টকশো করে বছরে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় করেন নাজমা আকতার। মাসুদা সিদ্দিকী রোজির রয়েছে রাজধানী অভিজাত এলাকায় ১১ কাঠা জমি। শাহেদা তারেখ দিপ্তী ৭২ ভরি সম্পদের মূল্য দেখিছেন ৬৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা, ২ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মূল্য দেখিয়েছেন ৪৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। শাম্মী আহমেদ অস্ট্রেলিয়ায় থাকা দুটি বাড়ির মূল্য দেখিয়েছেন ৪৫ কোটি ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া তিনি ২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের কথা জানিয়েছেন। নাজনীন নাহার রশীদ কৃষিখাত থেকে আয় করেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী দেওয়া হয় সেখানে বর্তমান বাজারমূল্য দেখানোর সুযোগ নেই। সেখানে অর্জনকালীন (যে সময়ে ওই সম্পদ অর্জন করেছেন) মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে। হলফনামায় স্থাবর সম্পত্তির দাম উল্লেখ করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। কেউ কেউ উল্লেখ করতে পারেন, অনেকেই উল্লেখ করেন না। সম্পদের যে হিসাব হলফনামায় দেখানো হয়, সেটা প্রকৃত সম্পদের চেয়ে অনেক কম। এজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে ছক পরিবর্তনের কথা বলেছি। ছকে বর্তমান বাজারমূল্য দেওয়া ও সব সম্পদের মূল্য দেওয়ার ব্যবস্থার কথা বলেছি।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test