E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রহিম আব্দুর রহিম’র নাটক পশুর বয়ান এবং বাস্তবতা

২০২৪ এপ্রিল ০৫ ১৭:২৩:১০
রহিম আব্দুর রহিম’র নাটক পশুর বয়ান এবং বাস্তবতা

বদরুদ্দোজা


নাটক জীবনের কথা বলে, যেখানে সত্য সুন্দর প্রতিষ্ঠা ও সমাজ- রাষ্ট্রে গেঁড়ে বসা সকল প্রকার অন্যায়, অনাচারের বিরুদ্ধে সরব আন্দোলনের বজ্রকন্ঠ উচ্চারিত হয়। একজন নাট্যকার সর্বদায় বিদ্রোহের অগ্নিমশাল প্রজ্জলন করে সমাজের সুপ্ত বিবেক উত্তপ্ত করে। রহিম আব্দুর রহিম, এমন একজন নাট্যকার যাঁর প্রতিটি নাটকের সংলাপে খুঁজে পাওয়া যায় হাজার বছরের আবেদন। যিনি 'বিদ্রোহী শিশু কিশোর থিয়েটার' নামক একটি নাট্য সংগঠনের মাধ্যমে নাট্যোনোন্দল চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর রচিত ও নির্দেশিত নাটক দেশ ছাঁপিয়ে বিদেশের মঞ্চে মঞ্চস্থ হচ্ছে। যাঁর মঞ্চায়িত ১৭টি নাটকের মধ্যে 'পশুর বয়ান' নাটকটি দেশ এবং বিদেশের নাট্য গবেষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। যেটি ভারত-পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু শিক্ষায় পঞ্চকুশের প্রয়োগের আওতায় প্রদর্শিত হচ্ছে।

এই নাট্যসাহিত্যে মানবজাতির প্রতি প্রাণিরকূলের ধিক্কার, ঘৃণা উঠে এসেছে। বনের বাঘ তার পশুরাজ সিংহের কাছে অভিযোগ করতে গিয়ে বয়ান করেছে; আমি বাঘ, আমার একটা লেজ আছে, আমার লাজ-লজ্জাও আছে।কিন্তু লেজহীন মানুষদের লাজ লজ্জাও নাই। একইভাবে সকল প্রাণ প্রাণি'র কন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে প্রাণির প্রতি মানবজাতির নির্মম নির্যাতন ও খবরদারির কথা। শুধু তাই নয়, প্রকৃতির আকাশ, বায়ু, জল স্থল, নদী-নালা, বন-বাদর, পাহাড় পর্বতও মানুষের নির্মম অনাচারের কথা ঘৃণাভরে উচ্চারণ করেছে।

পশুর বয়ান নাটকটির সারসংক্ষেপ, 'প্রকৃতির আলো-বাতাস, নদী-নালা, খাল-বিল, গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বত সবাই সবার অবস্থান থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠ এবং রাজা মনে করে অহংকার করে। একসময় এদের মধ্যে কে বড়, কে ছোট এই নিয়ে ভীষণ বাকযুদ্ধ শুরু হয়, পরে দিগন্ত জুড়ে আকাশ তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের মিমাংসা করে এই বলে যে, প্রকৃতির সকল প্রাণ-প্রাণিরা যদি মাটি নামক ভূ-ভাগকে মা বলে মেনে নেয় এবং এই মায়ের সেবা করে তবে সবাই রাজা হতে পারবে। তার কথা সবাই মেনে নিলে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।

অপরদিকে প্রকৃতির প্রাণ-প্রাণি, গাছ-গাছালি, বন-বাদর মানব সভ্যতার নিষ্ঠুরতায় একের পর এক ধ্বংস হতে থাকে। একসময় পশু প্রাণিদের খাদ্য এবং আবাসন ধ্বংস হওয়ায় তারা লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে করে এক ব্যক্তি বাঘের কবলে পড়ে যায়। ক্ষুর্ধাত বাঘ তাকে আক্রমন করলে সেই পশুরাজ সিংহের কাছে আশ্রয় নিয়ে প্রাণভিক্ষা কামনা করে। সিংহ তাকে বাঘের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তাকে বলে, মানুষ যে সৃষ্টির শ্রেষ্টজীব তা প্রমাণ করতে পারবে কি না? এই নিয়ে পশুরাজ্যের এক বিচারালয়ে শুরু হয় শুনানী। মানবজাতির হাতে প্রকৃতি পরিবেশের পরিপূরক প্রাণিকূলের নির্মম হত্যা, ধ্বংস যজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রাণিরাজ্যের প্রাণিরা তাদের ক্ষোভ, দুঃখ পশুরাজকে জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে পশুরাজ সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে রায় দেয়, পৃথিবীর মানুষরাই অমানুষ।'

নাটকটির উপভোগ্য মঞ্চায়ন দেখে মনে হয়েছে এধরণের নাটক শুধু মঞ্চস্থ নয়, ব্যাপক প্রচারের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ যেমন জরুরী তেমনি পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্তও সময়ের দাবী।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক, সাধারণ সদস্য, বাংলা একাডেমি।

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test