E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বিশ্ব ফুসফুস দিবস : বিপজ্জনক এই রোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই

২০২৪ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৭:০৬:১২
বিশ্ব ফুসফুস দিবস : বিপজ্জনক এই রোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ


আজ বুধবার বিশ্ব ফুসফুস দিবস ২০২৪। এবারের প্রতিপাদ্য—সবার জন্য সুস্থ ফুসফুস। আমাদের শরীরের একটি অন্যতম অঙ্গ হচ্ছে ফুসফুস। এটির মাধ্যমেই আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকি। কিন্তু এ অঙ্গটি প্রতিনিয়তই বাতাস থেকে বিভিন্ন দূষিত উপাদান গ্রহণ করে চলে।

বিশেষ করে যারা ধূমপান করেন এবং বেশি ধুলাবালি যুক্ত রাস্তায় বা স্থানে চলাচল করেন, তাদের ফুসফুস আরও বেশি দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর এর কারণে অনেক সময় হাঁপানি, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ এবং সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো সমস্যা দেখা দেয়। আর ফুসফুসের অন্যতম শত্রু হলো দূষিত বায়ু। বায়ুদূষণ হলো বায়ুমণ্ডলে এমন সব পদার্থের উপস্থিতির কারণে হওয়া দূষণ, যা মানুষ এবং অন্যান্য জীবের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি মূলত রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ, শারীরিক বা জৈব মাধ্যম দ্বারা গঠিত ভেতরের বা বাইরের পরিবেশের একপ্রকার দূষণ, যা বায়ুমণ্ডলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে পরিবর্তন করে দেয়।

জলবায়ু পরিবর্তনে যখন সারা বিশ্ব সতর্ক অবস্থান নিয়ে কাজ করছে, তখনই বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে ঢাকা। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাইবিষয়ক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের বায়ুমান সূচকে দেখা যায়, গত সোমবার সকালে বিশ্বের ১২০টি শহরের মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ছিল বায়ুদূষণের শীর্ষে। এ সময় ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা ছিল ২৭৮। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে ছিল যথাক্রমে পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের দিল্লি। এ দুটি শহরের দূষণের মাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৭৭ ও ১৬৭।

আর দেশের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ অ্যাজমা রোগে ভুগছে। সংস্থাটি আরও জানায়, বিশ্বের সর্বোচ্চ যক্ষ্মা আক্রান্ত ২২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশের চল্লিশোর্ধ্ব মোট জনগোষ্ঠীর ২১ ভাগই ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজে (সিওপিডি) আক্রান্ত। যাদের ৬২ শতাংশ ধূমপায়ী। ফুসফুস রোগের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বায়ুদূষণ, ধূমপান, অতিরিক্ত জনসংখ্যা, দরিদ্রতা, সামাজিক সচেতনতার অভাব। বাংলাদেশের ফুসফুসের প্রধান রোগগুলোর মধ্যে রয়েছে
-হৃদরোগ, কাশি, নিউমোনিয়াসহ ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ, ফুসফুসের ক্যানসার, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগ, স্ট্রোক, চোখে ছানি পড়া, শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সমস্যা। বায়ুদূষণ যেভাবে কমানো যেতে পারে : বায়ুদূষণ কমাতে আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানতে হবে।

জলবায়ু পরির্বতন ও বায়ুদূষণ রোধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আরও যেসব কাজ করা যেতে পারে তা হলো-পরিকল্পিতভাবে কারখানাগুলোর ধোঁয়া কমিয়ে আনা; কারখানাগুলো শহরের বাইরে নিয়ে যাওয়া; যানজটের সমাধান; উন্নত জ্বালানি ব্যবহার করা; এয়ার কন্ডিশনার কম ব্যবহার করা; বাড়িঘর ও আবাসিক এলাকাগুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা, যেখানে উদ্যান ও পুকুর থাকবে; নির্মাণকাজগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে করা, যাতে সেটি দূষণের কারণ না হয়; স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে এমন পদার্থের বায়ুমণ্ডলে নির্গমন কমাতে বা নির্মূল করতে প্রচুর বনায়ন করা।

ফুসফুসের রোগ কি

ফুসফুসের রোগগুলি বিশ্বের কয়েকটি সাধারণ শ্বাসযন্ত্রের অবস্থা। এটি এমন ব্যাধিগুলিকে বোঝায় যা ফুসফুস এবং অন্যান্য অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করে যা আমাদের শ্বাস নিতে সক্ষম করে। বেশিরভাগ শ্বাসকষ্ট ফুসফুসের রোগের কারণে হয় এবং শরীরকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পেতে বাধা দিতে পারে। এর কয়েকটি উদাহরণের মধ্যে রয়েছে হাঁপানি, এমফিসেমা, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, পালমোনারি ফাইব্রোসিস, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং আরও অনেক কিছু। ফুসফুসের রোগের প্রধানত তিন প্রকার। তারা হল:

* শ্বাসনালীর রোগ: এগুলি ফুসফুসের মধ্যে এবং বাইরে অক্সিজেন এবং অন্যান্য গ্যাস বহনকারী টিউব বা শ্বাসনালীগুলিকে প্রভাবিত করে। এগুলি প্রায়শই শ্বাসনালী সংকীর্ণ বা বাধা সৃষ্টি করে এবং হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস, সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) এবং আরও অনেক কিছুর মতো রোগ অন্তর্ভুক্ত করে।

* ফুসফুসের টিস্যু রোগ: এগুলি ফুসফুসের টিস্যুর গঠনকে প্রভাবিত করে। টিস্যুর প্রদাহ বা দাগ ফুসফুসের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত করা কঠিন করে তোলে। এইভাবে, ফুসফুসের জন্য অক্সিজেন গ্রহণ করা এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করা কঠিন করে তোলে। ফলস্বরূপ, ফুসফুসের টিস্যু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারেন না। এর কয়েকটি উদাহরণের মধ্যে রয়েছে সারকোইডোসিস এবং পালমোনারি ফাইব্রোসিস।

* ফুসফুসের সঞ্চালন রোগ: এগুলি ফুসফুসের রক্তনালীগুলিকে প্রভাবিত করে এবং রক্তনালীগুলির জমাট বাঁধা, প্রদাহ বা দাগের কারণে ঘটে। তারা ফুসফুসের অক্সিজেন গ্রহণ এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। কিছু ক্ষেত্রে, এটি হৃৎপিণ্ডের কাজকেও প্রভাবিত করতে পারে। ফুসফুসীয় উচ্চ রক্তচাপ ফুসফুসের সঞ্চালন রোগের একটি উদাহরণ। যাইহোক, এটা জানা অত্যাবশ্যক যে বেশিরভাগ ফুসফুসের রোগে এই ধরনের সংমিশ্রণ জড়িত।

ফুসফুসের রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ কি?

একটি কাশি বা শ্বাসকষ্ট আমাদের ব্যস্ত দিনগুলিতে সবেমাত্র নিবন্ধন করতে পারে। যাইহোক, এমনকি হালকা লক্ষণগুলির দিকেও মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়শই লোকেরা মনে করে যে শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে এমন কিছু যা বয়সের সাথে আসে। এই ধরনের উপসর্গগুলিতে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন কারণ এগুলি ফুসফুসের রোগের প্রথম লক্ষণ হতে পারে। রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি জানা আপনাকে নিজের জন্য প্রস্তুত করতে এবং রোগটি গুরুতর বা প্রাণঘাতী হওয়ার আগে আরও ভাল চিকিত্সা পেতে সহায়তা করতে পারে। ফুসফুসের রোগের সম্ভাবনা শনাক্ত করার জন্য এখানে নীচে কয়েকটি সতর্কতা লক্ষণ রয়েছে যা আপনাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

* ঘ্রাণ: শ্বাসকষ্ট, যাকে কোলাহলপূর্ণ শ্বাস-প্রশ্বাসও বলা হয় এটি একটি লক্ষণ যে কিছু আপনার ফুসফুসের শ্বাসনালীকে অবরুদ্ধ করে তাদের সরু করে দিচ্ছে। এইভাবে, আপনি ঘ্রাণ ঘটাচ্ছে.

* দীর্ঘস্থায়ী শ্লেষ্মা উত্পাদন: থুতু, যাকে সাধারণত শ্লেষ্মা বা কফ বলা হয় শ্বাসনালী দ্বারা সংক্রমণ বা জ্বালাপোড়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা হিসাবে উত্পাদিত হয়। যদি আপনার শ্লেষ্মা উত্পাদন এক মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকে তবে এটি ফুসফুসের রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।

* নিঃশ্বাসের দুর্বলতা: ওয়ার্কআউট সেশনের পরে বা আপনি সামান্য পরিশ্রম করার পরে শ্বাসকষ্ট দূর হয় না এমনটি অনুভব করা স্বাভাবিক নয়। কঠিন বা পরিশ্রমী শ্বাস প্রশ্বাসের রোগের একটি সতর্কতা লক্ষণ হতে পারে।

* রক্ত কাশি: আপনি যদি কাশিতে থাকেন তবে এটি আপনার উপরের শ্বাস নালীর বা ফুসফুস থেকে রক্ত আসতে পারে। এটি যেখান থেকে আসছে না কেন, এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ।

ফুসফুসের রোগের কারণ

সমস্ত ফুসফুসের রোগের কারণ এখনও অজানা। যাইহোক, কয়েকটি কারণ অন্তর্ভুক্ত:

* ধূমপান: সিগার, সিগারেট বা পাইপ থেকে নির্গত ধোঁয়া ফুসফুসের রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। অতএব, আপনি যদি ধূমপায়ী হন তবে আপনার ধূমপান ত্যাগ করা অপরিহার্য। সেকেন্ড-হ্যান্ড ধূমপান এড়াতেও পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি সমস্ত শিশু, শিশু এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

* অ্যাসবেস্টস: একটি প্রাকৃতিক খনিজ ফাইবার, অ্যাসবেস্টস একটি যা অগ্নিরোধী উপকরণ, গাড়ির ব্রেক, নিরোধক এবং অন্যান্য পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত হয়। এটি ছোট ফাইবারগুলিকে ছেড়ে দিতে পারে যা কখনও কখনও ছোট হয় এবং শ্বাস নেওয়া যায়। এছাড়া এটি ফুসফুসের কোষেরও ক্ষতি করে এবং ফুসফুসের দাগ বা ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টি করে।

* রেডন: এটি একটি বর্ণহীন এবং গন্ধহীন গ্যাস যা অনেক বাড়িতে থাকে এবং এটি ফুসফুসের ক্যান্সারের একটি পরিচিত কারণ। হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে কেনা বেশিরভাগ কিটগুলিতে প্রায়শই রেডন থাকে।

ফুসফুসে সমস্যার প্রাথমিক সংকেত সমূহ : ফুসফুসের সমস্যায় বর্তমানে অনেকেই ভুগছেন। ধূমপান বা দূষণের কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তবে অনেকেই বুঝতে পারেন তার ফুসফুস ক্রমশ কার্যকারিতা হারাচ্ছে।

বুকে হালকা ব্যথা কিংবা মাঝেমধ্যেই ঠান্ডা লেগে যাওয়া অনেকেরই তো হয়ে থাকে। তবে এসব লক্ষণ কিন্তু মোটেও ভালো নয়। এটি হতে পারে ফুসফুসের ক্যানসার কিংবা গুরুতর ব্রঙ্কাইটিস। অল্পবয়সী অনেকেই ভাবেন, ফুসফুসের সমস্যা বোধ হয় বয়স্কদেরই হয়। তবে এ ধারণা ভুল।

মনে রাখবেন, রোগ-ব্যাধির কোনো বয়স নেই। এ কারণে সামান্য লক্ষণ দেখলেও সতর্ক হতে হবে। ধূমপানের অভ্যাস না থাকলেও বুকে ব্যথা হলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

জেনে নিন কোন কোন সঙ্কেত পেলে বেশি সাবধান হতে হবে-

* প্রায়ই সর্দি-কাশি হওয়া মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। এমনটি হলে বুঝতে হবে শরীরের ভেতরে কোনো সমস্যা হচ্ছে। অনেকের ক্ষেত্রে কাশি হলেও কমতে চায় না। এমন প্রবণতা দেখলে সাবধান হওয়া জরুরি।

* ঘুম থেকে উঠেই কাঁধ ও পিঠে ব্যথা অনুভব করা কিন্তু সাধারণ ক্লান্তি নয়। এর কারণ হলো শরীরের এক অংশে সমস্যা হলে অন্যান্য অংশেও অসুবিধা দেখা দেয়। এ ধরনের ব্যথাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ‘রেফার্ড পেইন’।

* শ্বাস নেওয়ার সময় যদি কষ্ট হয় তাহলে অবহেলা করবেন না। এ সংকেতে বুঝতে হবে ফুসফুসে কোনো সমস্যা আছে। ফুসফুসের আশপাশে প্রদাহ সৃষ্টি হলে এমন হয়ে থাকে।

* সারক্ষণ ক্লান্তবোধ করা, উদ্বেগ ও অবসাদ সাধারণ কোনো সমস্যা নয়। ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ঢোকে না। এর থেকেই ক্লান্তি আসতে পারে।

* ইদানিং কি আপনার গলার আওয়াজে পরিবর্তন এসেছে? অনেকেই মনে করেন সর্দি-কাশির কারণে হয়তো গলার স্বর বদলেছে। তবে দিনের পর দিন এমনই চললে সমস্যা আরও মারাত্মক হতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

* বুকে কফ জমার সমস্যা একসময় কঠিন নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে। ফলে ফুসফুস কার্যকারিতা হারায়। তাই বুকে কফ জমলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

ফুসফুসের সংক্রমণের লক্ষণ

হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত ফুসফুসের সংক্রমণের সাথে বিভিন্ন উপসর্গ যুক্ত। এটি আপনার বয়স, সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সংক্রমণের কারণের উপর ভিত্তি করে। সর্দি বা ফ্লুর লক্ষণ একই রকম হতে পারে কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

* কাশি: কাশি শুষ্ক বা "ভিজা" (শ্লেষ্মা উৎপন্নকারী) বা হালকা বা গুরুতর হতে পারে।

* শ্লেষ্মা উৎপাদন: এটি পরিবর্তিত হতে পারে, তবে এটি প্রায়শই পরিষ্কার, হলুদ, সবুজ, বাদামী, বা গন্ধ ছাড়াই মরিচা।

* ঘ্রাণ: শ্বাসকষ্ট প্রায়শই মেয়াদ শেষ হওয়ার (মেয়াদ শেষ হওয়ার) সময় ঘটে, তবে কিছু ক্ষেত্রে, এটি শেষ এবং অনুপ্রেরণায় উভয়ই ঘটতে পারে। শ্বাস নেওয়ার সময়, সাধারণত একটি উচ্চ-পিচ শব্দ হয়, যাকে বলা হয় স্ট্রিডোর, যা মূলত অনুপ্রেরণার কারণে ঘটে। স্ট্রিডোরকে প্রায়শই ফুসফুসের উপরে শ্বাসনালীতে সংক্রমণ দেখা যায়, যেমন এপিগ্লোটাইটিস সহ উইন্ডপাইপ (শ্বাসনালী)। জ্বর হালকা হতে পারে (তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে), মাঝারি (তাপমাত্রা ১০১ এবং ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে), বা উচ্চ (তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের উপরে)।

* শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া (গুরুতর সর্দি-কাশিকে ঠাণ্ডা বলা যেতে পারে): জ্বর বাড়লে এগুলি ঘটতে পারে এবং জ্বর কমে গেলে কখনও কখনও ঘাম হতে পারে।

* উপরের শ্বাস নালীর উপসর্গ: নাক বন্ধ, গলা ব্যথা, কর্কশতা, ল্যারিঞ্জাইটিস এবং মাথাব্যথা সাধারণ, বিশেষ করে ভাইরাল সংক্রমণ।

* শরীরের ব্যাথা: আপনার ফুসফুসে সংক্রমণ হলে আপনি আপনার পেশী এবং পিঠে ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এটি মায়ালজিয়াতে ব্যথা। কখনও কখনও আপনি আপনার পেশীতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারেন যা আপনার সংক্রমণ হলে ব্যথা হতে পারে।

* ত্বক বা ঠোঁটের নীলচে ভাব: অক্সিজেনের অভাবের কারণে আপনার ঠোঁট বা নখের রঙ নীল হতে পারে।

* নিঃশ্বাসের দুর্বলতা: শ্বাসকষ্ট মানে আপনার মনে হচ্ছে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বা আপনি পুরোপুরিডস শ্বাস নিতে পারছেন না। আপনার যদি শ্বাস নিতে অসুবিধা হয় তবে আপনার অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ফুসফুসের সংক্রমণের কারণ

নিউমোনিয়া সাধারণত সংক্রামক রোগজীবাণু, যেমন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই প্যাথোজেনগুলি মানুষের স্পর্শের পৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে কাশি এবং হাঁচির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বেশিরভাগ লোক তাদের ফুসফুসের ছোট বায়ু থলির মাধ্যমে শ্বাস নেওয়ার ফলে জীবাণুর কারণে নিউমোনিয়া হয়। শরীরের ইমিউন সিস্টেম শ্বেত রক্ত কণিকা প্রেরণ করে সংক্রমণকে আক্রমণ করে, যা বাতাসের থলিতে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। ফলস্বরূপ, অ্যালভিওলি তরল এবং পুঁজ দিয়ে ভরাট করে, নিউমোনিয়া সৃষ্টি করে।

ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকির কারণ

ফুসফুসের সংক্রমণের ঝুঁকির কারণগুলি একটি নির্দিষ্ট সংক্রমণের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ কারণ এই সংক্রমণগুলির মধ্যে কিছু না হলেও কিছুকে বাড়িয়ে দেয়।

সাধারণ ঝুঁকির কারণগুলি হল:

* ধূমপান বা পরোক্ষ ধূমপানের এক্সপোজার

* কর্মক্ষেত্রে বায়ু দূষণ বা ধূলিকণার এক্সপোজার

* হাঁপানি বা অ্যালার্জির ইতিহাস

* জনাকীর্ণ বসবাসের পরিবেশ

* উত্তর গোলার্ধের শীতের চাঁদ

* শুকনো শ্লেষ্মা ঝিল্লি

* গ্যাস্ট্রোসোফাজাল রিফ্লক্স রোগ (জিইআরডি) মুখ, মাথা, ঘাড় বা শ্বাসনালী সম্পর্কিত

* শারীরবৃত্তীয় সমস্যা, যেমন নাকের পলিপ এবং নাকের পলিপের মতো সমস্যা।

ফুসফুসকে দূষণমুক্ত করতে ঘরোয়া সমাধান

১) আনারসের রস: ফুসফুসে জমা নিকোটিন বা অন্য দূষিত পদার্থ সাফ করতে পারে আনারস। নিয়মিত এই ফল বা তার রস খেলে ফুসফুস চাঙ্গা থাকে।

২. কাজু, আখরোট, পেস্তা, চিনাবাদামসহ মিষ্টি কুমড়ার বীজ ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন ‘ই’ রয়েছে। সেই-সঙ্গে খনিজ লবণ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এসব খাবার ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ এবং প্রদাহজনিত সমস্যা রোধ করতে সাহায্য করে।

৩. মধুতে অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল ও প্রদাহনাশক ক্ষমতা রয়েছে, যা ফুসফুস পরিষ্কার করে। তাই প্রতিদিন এক চা চামচ মধু খেলে তা হবে ফুসফুসের জন্য উপকারী।

৪. ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা রোধে বেশ কার্যকরী। বিশেষ করে ভিটামিন ডি’র অভাবে শিশুদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এর মূল উৎস সূর্য। এ ছাড়া দুধ, ডিম, দই, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে।

৫. তুলসী পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। আর এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফুসফুস সুরক্ষায় খুবই কার্যকর। বাতাসে থাকা ধূলিকণা শোষণ করতে পারে তুলসী। তাই শ্বাসযন্ত্রের দূষিত পদার্থ দূর করতে তুলসীপাতার রস কিংবা এই পাতা পানিতে ফুটিয়ে পান করুন। ফুসফুস ভালো থাকবে।

৬. ফুসফুস ভালো রাখতে কালোজিরা অনেক ভালো কাজ করে। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শ্বাসনালির প্রদাহ রোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আধা চা চামচ কালোজিরার গুঁড়া এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ফুসফুস ভালো থাকবে।

৭. ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবারের কোনো বিকল্প নেই। ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা রোধ করে এই ভিটামিন। শ্বাসযন্ত্রে অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে এবং শ্বাসনালির জীবাণু ধ্বংস করে। লেবু, আমলকি, কমলা, আপেল, পেয়ারা ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

৮. রসুনে রয়েছে প্রচুর সেলিনিয়াম ও অ্যালিসিন। এ দুটি প্রাকৃতিক উপাদান ফুসফুস ও শ্বাসনালি ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ রোধে রসুনের ব্যবহার হয়ে আসছে।

৯. শারীরিক কসরতের বিকল্প নেই। শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি ব্যায়াম আপনার ফুসফুসকে ভালো রাখবে। এ জন্য এরোবিক্স, ইয়োগা বা কার্ডিও এক্সারসাইজ প্রতিদিন করতে হবে।

১০. গ্রিন টি বা সবুজ চায়ে ফ্ল্যাবিনয়েড নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ফুসফুসের কার্য পরিচালনায় সহায়তা করে। সে সঙ্গে ফুসফুস থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।

১১. হলুদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কারকিউমিন ফুসফুসকে দূষিত পদার্থের প্রভাব থেকে সুরক্ষা করে। সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট হলে কাঁচা হলুদের রস করে মাখন বা ঘির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ভালো কাজ হয়।

১২. সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ রাখুন।

১৩) গাজরের রস: চোখ ভাল রাখতে নিয়মিত গাজর খেতে বলেন পুষ্টিবিদেরা। ফুসফুস পরিষ্কার করার মোক্ষম দাওয়াইও হতে পারে গাজর। রোজ গাজরের রস খেলে ফুসফুস দূষণমুক্ত থাকে, শ্বাসতন্ত্র থাকে চাঙ্গা।

১৪) লেবু-মধুর পানি: ওজন ঝরাতে অনেকেই ঘুম থেকে উঠে পানি লেবু, মধু মিশিয়ে খান। এই পানীয় কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সমান কার্যকর। ফুসফুস দূষণমুক্ত রাখতেও এই পানীয়ে চুমুক দিতে পারেন।

হোমিও সমাধান

রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় আধুনিক ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে রোগীর লক্ষণগুলো সংগ্রহ করে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করতে পারলে তাহলে ফুসফুসের সমস্যা সহ যেকোন চিকিৎসা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে আল্লাহর রহমতে সম্ভব। তাই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি রোগীর দ্রুত উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন পদ্ধতি, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ঘুম, ব্যায়াম, মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপন ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। একজন হোমিও চিকিৎসক মূলত রোগীর হিস্ট্রি নিয়ে তার সার্বদৈহিক অবস্থা এবং জেনেটিক অবস্থা বিবেচনা পূর্বক নির্দিষ্ট ঔষধ নির্দিষ্ট শক্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রয়োগ করে। লক্ষণ অনুযায়ী প্রাথমিক ভাবে অভিজ্ঞ চিকিৎসকগন নিম্নোক্ত ওষুধগুলো ব্যবহার করে থাকেন, অ্যান্টিমোনিয়াম আর্স,অ্যান্টিমোনিয়াম টার্ট, এমফিসেমায়, আর্সেনিকামঅ্যালব, অ্যাসপিডোস্পার্মা, Bryonia alba, ক্যালকেরিয়া হাইপোফস, কোকা কিউ, Elapscor, Hydrocyanicum acidum, Quebracho, সেনেগা, স্পঞ্জিয়া সহ আরো অনেক মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কেউ ওষুধ নিজে নিজে ব্যবহার করিবেন না।

পরিশেষে বলতে চাই, বিপজ্জনক এই রোগ থেকে বাঁচাতে সচেতনতার বিকল্প নেই। ফুসফুস মানব শরীরের অন্যতম প্রধান একটি অংশ। এর প্রধান কাজ হলো বাতাস থেকে অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে নেওয়া এবং রক্তপ্রবাহ হতে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা। এটিই আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই আমাদের উচিৎ ফুসফুসের সঠিক যত্ন নেওয়া এবং ক্ষতিকারক সবকিছু থেকে সাবধানে থাকা। তাই বর্তমান এ সময় সুস্থ থাকতে ফুসফুসের বাড়তি যত্ন নেওয়ার বিকল্প নেই। এজন্য জীবনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা জরুরি।

লেখক : চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক, প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

পাঠকের মতামত:

০৭ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test