E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী রাণীনগরের সানজিদা আক্তার

২০১৮ নভেম্বর ১৬ ১৫:৩২:৪৮
সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী রাণীনগরের সানজিদা আক্তার

সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ) : কুজাইল দক্ষিণপাড়া নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত ছবির মতো একটি ছোট্ট গ্রাম। সেই গ্রামের একজন সফল নারী সানজিদা আক্তার তৃশা। নদীর তীরে স্বামীর পরিত্যাক্ত জমিতে সবজি চাষ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন সানজিদা। স্বামীর পাশাপাশি তিনিও এখন নিজের সংসারে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছেন। তার দেখে উৎসাহিত হচ্ছে আশেপাশের অন্য নারীরাও। সফল নারী সানজিদা আক্তার তৃশা কুজাইল গ্রামের কৃষক মো: আবু হাসান ওরফে চমক এর স্ত্রী।

জানা গেছে, উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের কুজাইল গ্রামে ছোট যমুনা নদীর তীরে গেলে চোখে পড়বে সবুজে ঘেরা সবজি খেত। খেতের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পেয়াজ, রসুন, আলু, ধনিয়া, মরিচ ও মুলার গাছসহ নানা সবজির গাছ। প্রায় ৩ বছর আগে সানজিদা পার্শ্ববর্তী এক কৃষকের সবজি চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হোন। পুরুষেরা পারলে মেয়েরা কেন পারবে না এই ইচ্ছে শক্তি থেকে সানজিদাও শুরু করেন নদীর তীরে তার স্বামীর পরিত্যাক্ত প্রায় ১৫ শতাংশ জমিতে বিভিন্ন প্রকারের সবজির চাষ।

সফল নারী সানজিদা বলেন, এক সময় সংসারের কাজকর্ম শেষ করার পর থেকে বসে বসে সময় কাটাতাম। পাশের এক কৃষক নদীর তীরে তার জমিতে বছরের পুরো সময় কোন না কোন সবজি চাষ করতো। সেই কৃষক নিজের পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাজারে সবজি বিক্রি করে ভালো লাভ করতো। তখন আমার মনে একটি জেদ কাজ করলো যে পুরুষরা পারলে আমি পারবো না কেন। তখন আমার স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে শুরু করি সবজি চাষ। সবজি চাষের প্রথম বছরে বাজারে আমার জমির মূলা সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছিলো।

তিনি আরো বলেন, আমি নিজেই সবজি জমিতে সার, বীজ বপন করি, পানি সেচ দেওয়া থেকে শুরু করে ফসলের রক্ষণাবেক্ষণের সব কাজ নিজেই করি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমি নিজের খেতে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করে নিজের পরিবারকে খাওয়াতে পারছি। কারণ বর্তমানে বাজারের প্রতিটি সবজিতেই দেওয়া থাকে মাত্রারিক্ত সার ও কীটনাশক যা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমি নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করে স্থানীয় বাজারে এই সবজি বিক্রি করে বছরে প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করছি। সেই অর্থ দিয়ে নিজের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ যোগানসহ অন্যান্য চাহিদা পূরন করতে পারছি। স্বামীর কাছ থেকে আমাকে আর হাত পেতে অর্থ নিতে হয় না। আজ আমার দেখাদেখি আশেপাশের অনেক নারীরা এই সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। আমার কাছে অন্যরা পরামর্শ নিতে এলে আমি তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা ও তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করি। তবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমি আমার এই সবজি চাষের পরিসরটাকে আরো বৃদ্ধি করতে চাই।

ওই গ্রামের হালিমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী দিনমজুরের কাজ করে। আমার সংসারে এক সময় অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। সানজিদা আপার পরামর্শে আমিও আমার বাড়ির উঠানে অল্প অল্প করে শিম, লাউ, পালংশাকসহ নানা প্রজাতির সবজি চাষ করছি। এখন আমার সংসারের জন্য বাজার থেকে তেমন সবজি কিনতে হয় না। নিজের সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে আমি অতিরিক্ত সবজিগুলো বাজারে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছি।

একই গ্রামের শবনব আক্তার বলেন, সানজিদা আপার দেখাদেখি আমিও আমার বাড়ি উঠানে ও পরিত্যাক্ত জমিতে সবজি চাষ শুরু করেছি। আমি বর্তমানে অলস সময়কে এই সবজি চাষ করার কাজে ব্যয় করছি। নিজেদের উৎপাদিত বিষমুক্ত এই সবজি যেমন নিজেদের জন্য ভালো তেমনি দেশের জন্য ভালো।

রানীনগর উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: আহসান হাবিব রতন বলেন, সানজিদা আপা এই অঞ্চলের একটি দৃষ্টান্তর। আমি তাকে সার্বক্ষণিক ভাবে সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। সানজিদা আপার দেখাদেখি আশেপাশের আরো অনেক মহিলারা সাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছেন। কেউ হাঁস-মুরগী পালন করছেন, কেউ গরু-ছাগল আবার কেউ সবজি চাষ করছেন। আমি তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছি।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি নিজে গিয়ে সানজিদা আপার সবজি খেতসহ অন্যান্য মহিলাদের সবজি খেত পরিদর্শন করেছি। আসলেই তাদের এই উদ্যোগ প্রশাংসার দাবীদার। দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে গ্রামাঞ্চলের মহিলারাও পুরুষের পাশাপাশি ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। সানজিদাসহ যে কেউ আমাদের কাছে কৃষি সম্পর্কিত সহযোগিতা ও পরামর্শ চাইলে আমি ও আমার অফিস সব সময় তাদের পরামর্শ দিতে প্রস্তুত রয়েছি। আমি আশা রাখি শুধু সানজিদা নয় এক সময় উপজেলার সব মহিলারা তাদের পরিত্যাক্ত বাড়ির উঠান ও জমিতে সাধ্যমতো সবজি চাষ করে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করবেন।

(এসকেপি/এসপি/নভেম্বর ১৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test