E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বৈরী আবহাওয়ায় ঈশ্বরদীতে লিচু চাষে চরম বিপর্যয়

২০১৮ মার্চ ১৫ ১৬:১৬:৪৬
বৈরী আবহাওয়ায় ঈশ্বরদীতে লিচু চাষে চরম বিপর্যয়

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা) : লিচুর রাজধানী বলে খ্যাত ঈশ্বরদীতে এবারে অর্থকরী ফসল লিচুর ফলন বিপর্যয়ে হতাশ এখানকার লিচু চাষি ও বাগান মালিকরা। এবারে ভাগ লিচুর গাছগুলোতে অর্ধেক মুকুলও আসেনি। ফলে বিপুল ক্ষতির আশংকায় দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন বাগান মালিকরা। ঈশ্বরদীর অনেক পরিবারের সারা বছরের জীবন-জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন এখানকার লিচু। পাশাপাশি ঈশ্বরদীর গ্রামীণ অর্থনীতিতেও লিচু বিপর্যয়ের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে স্থানীয় অর্থনীতিবিদরা আশংকা করছেন। লিচু বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ অতিবৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়াকে দায়ী করেছেন।

উপজেলা কৃষি বিভাগের জরিপে ঈশ্বরদীতে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। লিচু গাছের সংখ্যা তিন লক্ষাধিক। এরমধ্যে দুই লাখ লিচু গাছের বয়স ১৫ বছরের বেশি। এছাড়াও ঈশ্বরদীর ৭টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলের বসতবাড়ি এবং আশপাশে রয়েছে বিপুল সংখ্যক লিচুর গাছ।

লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই ঈশ্বরদীতে বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় লিচু চাষি ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে প্রতিবছর ৩০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণই ভিন্ন। গাছে লিচুর মুকুল কম আসায় লিচু থেকে বাগান মালিকদের আয়ও এবারে অনেকাংশে কমে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরেজমিনে ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকার বাগান ঘুরে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি লিচুর চাষ হয়, সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর, মানিকনগর, মিরকামারি, জগন্নাথপুর, বক্তারপুর, বড়ইচারা, সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়া, সাহাপুর, বাঁশেরবাদা, লক্ষীকুণ্ডা ইউনিয়নের কামালপুর চররূপপুর, দাদাপুর চর এলাকায়। এছাড়া দাশুড়িয়া, মুলাডুলি ও সাঁড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামেও লিচুর ব্যাপক আবাদ শুরু হয়েছে। এখানে দেশি (আঁটি) লিচু এবং কলম করে বোম্বাই লিচুর চাষ বেশি হয়। চায়না জাতের লিচুর গাছও রয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত কম।

ঈশ্বরদীর মানিকনগর গ্রামের বাগান মালিক জহুরুল ইসলাম জানান, তাঁর ৩ বিঘা জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। গত বছর ফলন ভালো হওয়ায় প্রায় তিন লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু এবারে তাঁর অর্ধেক গাছেই মুকুল আসেনি। এছাড়া রোজার মাসে লিচু পাকবে এবং বাজারজাত হবে। সবমিলিয়ে গতবারের চেয়ে অর্ধেক মূল্যে লিচু বিক্রি করতে পারবেন কি না এনিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন।

মানিকনগর গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী রমজান আলী মজুমদার বলেন, এলাকায় দুই ভাবে লিচুর ব্যবসা হয়। ফাল্গন মাসে লিচুর ফুল আসে। ফুল থেকে গুটি বের হলেই ব্যাপারীরা গুটি অনুমান করে দাম ধরে আগাম বাগান কিনতে শুরু করেন। এরপর বাগানের পরিচর্যা, সেচ, সার, কীটনাশক থেকে যাবতীয় খরচ ব্যাপারীদেরই করতে হয়। আবার কোন কোন চাষি নিজেই বাগান পরিচর্যা এবং গাছ হতে লিচু ভেঙ্গে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন।

গতবছর বাগানে বোম্বাই লিচু পাকা অবস্থায় প্রতি হাজার ১ হাজার ৮০০ টাকা হতে ২ হাজার ২০০ টাকা পাইকারী দরে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার ফলন কম হওয়ায় চাষিরা দাম বাগানের গুটি বিক্রিতে বেশি দাম হাকছেন। গুটি লিচুই আনুমানিক ১ হাজার ৫০০ টাকা হতে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত দাম চাওয়া হচ্ছে। এরপর গাছের পরিচর্যা, বাগান পাহারা এবং গাছ হতে লিচু ভাঙ্গার খরচ করতে হবে। তাতে এবারে লিচুর দাম বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে রমযান। যেকারণে অনেক লিচু ব্যবসায়ী বা ব্যাপারীরা বাগান ক্রয়ের বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন।

ঈশ্বরদীর সুনামধন্য লিচু চাষী ও জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক কিতাব মন্ডল ওরফে লিচু কিতাব জানান, আবহাওয়া বিপর্যয়ের কারণে লিচুর মুকুল কম এসেছে। লিচুর ফলন কম হওয়ার বিষয়টি কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি অফিসের কর্মকর্তার পর্যবেক্ষণ করছেন। ফলন কম হওয়ায় কারণে চাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঈশ্বরদীর গ্রামীণ অর্থনীতিতেও এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ ইত্তেফাককে জানান, অতি বৃষ্টি ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে লিচু গাছের দ্রুত প্রবৃদ্ধি কোষ বেড়ে গেছে। ফলে গাছের নতুন পাতা গজিয়ে গেছে। প্রবৃদ্ধি কোষ দ্রুত বেড়ে গেলে প্রজনন কোষ কমে যায় অর্থাৎ ফলন কমে যায়। এছাড়াও আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। শীতের শেষে কখনও ১০ ডিগ্রী আবার কখনও ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে তাপমাত্রা উঠানামা করেছে। শীত আরো ১৫ দিন স্থায়ী হলে লিচুর ফলন কিছুটা ভাল হতো।

ঈশ্বরদী কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মুখ্য প্রশিক্ষক খুরশিদ আলম জানান, আবহাওয়ার বিপর্যয়ের কারণে গাছে লিচুর মুকুল কম এসেছে। এবার অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও অতিবৃষ্টি হয়েছে। অসময়ের বৃষ্টির ফলে গাছে দ্রুত নতুন পাতা গজিয়েছে ফলে অধিকাংশ গাছে এবার মুকুল ধরেনি।

(এসকেকে/এসপি/মার্চ ১৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test