E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্লাস্ট আর ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ধানক্ষেত, দিশেহারা কৃষক

২০১৮ এপ্রিল ৩০ ১৭:০৪:৪০
ব্লাস্ট আর ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ধানক্ষেত, দিশেহারা কৃষক

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা :  ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বিস্তীর্ণ বোরো ধানের ক্ষেত। এ রোগের কারণে কয়েক শত হেক্টর জমির ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। ফসল ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে একদিকে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ, অন্যদিকে ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতিতে দিশেহারা চাষিরা। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানের আশঙ্কা এবং মাথার ওপর থাকা ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলার কৃষকরা।

পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষেত্রে ধানে পাক ধরেছে। ক’দিন পরেই পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন কৃষকরা। আধাপাকা ধানের জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে ব্লাস্ট রোগ। ফলে সেই আশা ধূলিসাৎ হয়েছে কৃষকের।

বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, এর আগে দু’দফায় বন্যায় তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই ব্যাংক ঋণ আর ধারদেনা করে চড়া দামে চারা কিনে বোর ধানের আবাদ করেন। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। শুরুতে দু-একটি জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলেও আস্তে আস্তে বেশিরভাগ জমিতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ধান পাকার আগেই শীষ সাদা ও চিটা হয়ে যাচ্ছে।

রোগ দমনে তেমন কোনও উদ্যোগ নেই কৃষি বিভাগের। মাঠপর্যায়ে থাকা কৃষি বিভাগের দু-একজনের কাছে পরামর্শ নিয়ে ছত্রাক জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনও সমাধান পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা।এছাড়া কয়েক দফায় শিলাবৃষ্টিতে পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের কারণে জমিতেই পাকা ধান ঝড়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে।

অনেক জমির আধাপাকা ধানক্ষেত নুয়ে পড়ে পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নিরুপায় অনেক কৃষক জমির আধাপাকা ধান কেটে ফেলছেন। এভাবে রোগ বিস্তার আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে চললে উৎপাদন আর ক্ষতির আশঙ্কায় দিশেহারা কৃষকরা। এমতাবস্থায় ধানের উৎপাদন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

হোসেনপুর গ্রামের কৃষক আবদুল খালেক বলেন, দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ব্রি-২৮ ধান চাষ করেছেন। সঠিক সময়ে সার, কীটনাশক আর ঘামঝরা পরিচর্যার কারণে ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু আধাপাকা ধানের জমিতে হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়েছে ব্লাস্ট রোগ। ধানের শীর্ষ সাদা হয়ে বিবর্ণ হয়েছে। ধানের শীর্ষে দেখা দিয়েছে চিটা। এ অবস্থায় ধান কেটে ঘরে তুললেও উৎপাদন খরচ উঠবে না।

হিজলগাড়ী গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, একদিকে ধানের জমিতে ব্লাস্ট রোগ, অন্যদিকে ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক আশার ফসলে এমন বিপর্যয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন। খরচ উঠা তো দূরের কথা, খাবার জুটবে কিনা তা নিয়েই দিশেহারা হয়েছি।

ঝালিঙি গ্রামের কৃষক টুকু মিয়া জানান, দেড় বিঘা জমিতে বোর ধানের চাষ করেছেন। জমিতে ধানের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ধান পাকার আগ মুহূর্তে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। পুরো জমির পাকা ধান ক্ষেতের শীর্ষ নষ্ট হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। তার ওপর আবার কয়েক দফায় ঝড় শিলাবৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাধ্য হয়ে জমির আধাপাকা ধান কেটে আনতে হয়েছে। এতে এক বিঘা জমিতে ২০-২৫ মণ ধান হওয়ার কথা থাকলেও বিঘাপ্রতি ধান হচ্ছে মাত্র ১০-১২ মণ।তবে চাষিরা বলছেন, ঋণ আর ধারদেনার টাকা পরিশোধ তো দূরের কথা, খরচ উঠা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তাই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন চাষিরা।

তবে সমস্যা সমাধানে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের স্প্রে ব্যবহার করাসহ নানা পরামর্শ দিচ্ছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। তাছাড়া এ রোগ মোট উৎপাদনে কোনও ঘাটতি হবে না, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চালের উৎপাদন অর্জিত হবে বলে আশা করছেন তিনি।

(এসআইআর/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test