E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝিনাইদহে মাঠভরা পাকা ধান, দাম না থাকায় কৃষকদের স্বপ্ন ভঙ্গ 

২০১৮ নভেম্বর ২৬ ১৯:১৮:৫৩
ঝিনাইদহে মাঠভরা পাকা ধান, দাম না থাকায় কৃষকদের স্বপ্ন ভঙ্গ 

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ : বৈরী আবহাওয়ায় গত বোরো মৌসুমে কৃষকেরা ক্ষেতের ধান ঠিকমত ঘরে তুলতে পানেননি। ধারদেনায় চাষ করে অনেকের খরচের টাকাটাও তুলতে পারেননি। কেননা তাদের ক্ষেতের অনেক ধান পাকার সময়ে লাগাতর কয়েক দিনের দমকা হাওয়ার সাথে বর্ষার পানিতে একাকার হয়ে পঁচে গলে ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে, বোরো মৌসুমে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষকেরা ঠিকমত পাকাধান ঘরে তুলতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ লোকসান কাটিয়ে উঠতে চলতি আমন মৌসুমে কোমর বেধে লেগেছে। মাঠের পর মাঠে চাষ হয়েছে আমন ধান। মাঠ পর্য়ায়ের কৃষি আফিসাররা বলছে, চলতি আমন মৌসুমে কালীগঞ্জ উপজেলাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান চাষ হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ উপজেলাতে চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার হেক্টোর জমিতে। কিন্তু চাষ হয়েছে ১৮ হাজার হেক্টোর জমিতে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার হেক্টোর বেশি জমিতে আমন চাষ হয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠের পর মাঠের আমন ধান নজরে পড়ে। ক্ষেতের ধানগুলো পাকতে শুরু করেছে।

কৃষক সূত্রে জানা গেছে, গত বোরো মৌসুমে যখন সারা মাঠের ধান পেকেছিল তখন অভিষাপ হয়ে আসে বৈরি আবহাওয়া। এ সময় ঝড়ো বাতাসে মাঠের পর মাঠের পাকা ধান ক্ষেতে পড়ে মাটির সাথে মিশে যায়। এরপর কয়েক দফা ভারী বর্ষনে ক্ষেতে হাটুপানি জমে ধান গাছ গুলো পানির নিচে চলে যায়। সব মাঠের ধান এক সাথে পাকার কারণে এবং সব কৃষকের প্রয়োজনের সময়ে বৃষ্টির ধানের ভরা মৌসুমে কৃষি শ্রমিক আয়ত্বে নিতে প্রতিযোগীতা শুরু হয়। এ সুযোগে অধিক মজুরী হাঁকাতে থাকেন শ্রমিকেরা। সাড়ে ৩ থেকে ৪’শত টাকার মজুরীর স্থলে ১ হাজার থেকে ১২’শ টাকা দিয়েও অনেকে কৃষি শ্রমিক মেলাতে পারেননি। এমন অবস্থায় কৃষকেরা কাঁদামাটি ভরা ভেজা ধান ঘরে তুললেও পারলেও অনেক কৃষক তাদের অপেক্ষাকৃত নিচু জমির ধান গুলো ঘরে তুলতে পারেননি। পানিতে হাবুডুবু খাওয়া ক্ষেত মালিক অনেকে ক্ষেতেই যাননি। ফলে পানিতে পঁচে গলে নষ্ট হয়েছে তাদের পরিশ্রমের ধন। কৃষকদের ভাষ্য বিগত বোরো মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কমপক্ষে ২৫ ভাগ ধান ঘরে তুলতে না পেরে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

তবে তারা এটাও বলেন, এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকেরা চলতি আমন মৌসুমে রেকর্ড পরিমানে আমন চাষ করেছেন। ক্ষেতে ধানও হয়েছে ভালো তারা আশা করছেন লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কালীগঞ্জ উপজেলার জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন কুমার বিশ্বাস, ও রামনগর গ্রামের মহিদুল ইসলাম জানান, তাদের গ্রামের ফসলী মাঠটি বেশ নিচু। কিন্তু ধান পাকার সময়ে সপ্তাহজুড়ে ভারী বর্ষায় তাদের মাঠের সব ধান পানির নিচে চলে যায়। সে সময়ে জলাবদ্ধ ক্ষেতের ধান কৃষি শ্রমিকদের অর্ধেকটা দেয়ার শর্তেও শ্রমিকেরা রাজি হয়নি। ফলে বেশির ভাগ নিচু জমির ধান ক্ষেতেই পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি জানান, কৃষি নির্ভর তাদের এ গ্রামটিতে সে সময়ে বাড়ি বাড়ি হাহাকার চলছিল। সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমন মৌসুমে কৃষকেরা কোমর বেধে লেগে ধান লাগিয়েছেন। ক্ষেতে ধানও হয়েছে ভালো। গ্রামের কৃষকেরা আশা করছেন বোরো মৌসুমের ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

কামালহাট গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান জানান, গত বোরো মৌসুমে ৩ বিঘা বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। ক্ষেতে ধানও হয়েছিল ভালো। অর্ধেকটা ধান ভালোভাবে ঘরে তুলেছিলেন। বাকিটা লাগাতর বর্ষার পানিতে ডোবা ধান ঘরে তুলেছিলেন কৃষি শ্রমিকের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে। তারপরও ডোবা জমির ধান বাজারে নিয়ে খুব কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রামে তার একার নয় অনেক কৃষকেরই তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল। অনেকে বিলের মধ্যকার ডোবা জমির পাকা ধান ঘরে তুলতে পানেনি। তিনি বলেন, এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমন মৌসুমে তাদের গ্রামে রেকর্ড পরিমানে ধান চাষ করেছেন। সারা মাঠের ধান ইতোমধ্যে পাক ধরেছে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কাঁটা শুরু হবে। আশা করছেন বিগত দিনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

সাদিকপুর গ্রামের কৃষক সাজেদুল ইসলাম জানান, তিনি গত বোরো মৌসুমে ১১ বিঘা জমিতে বোরোর চাষ করেছিলেন। দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কৃষি শ্রমিকদের দ্বিগুন টাকা মজুরী দিয়ে বহু কষ্ট করে ঘরে তুলতে পেরেছিলেন ৯ বিঘা জমির ধান। আর বাকি ৩ বিঘা পানির নিচে হাবুডুবু খাওয়া ধান তুলতে না পেরে ক্ষেতেই পঁচে গলে নষ্ট হয়েছিল। এটা কাটিয়ে উঠতে আমন মৌসুমে ১৩ বিঘা ধান চাষ করেছেন। ক্ষেতের ধানের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এ মৌসুমে বেশ লাভ করতে পারবেন।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, বিগত বোরো মৌসুমে কৃষকেরা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখানে কারও কিছু করার নেই। কারণ প্রকৃতিতে কারও হাত নেই।

তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর ধানের দাম ভালো পাওয়া এবং বোরোর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এ উপজেলাতে রেকর্ড পরিমানে আমন ধানের চাষ হয়েছে। তার দাবি, ক্ষেতে যে পরিমানে ধান রয়েছে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। যা দেশের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ভ’মিকা রাখবে।

(জেআরটি/এসপি/নভেম্বর ২৬, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test