E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আগৈলঝাড়ায় বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

২০২০ মে ০৮ ১৫:৪৮:১৪
আগৈলঝাড়ায় বাম্পার ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় চলতি বোরো মৌসুমে ফসলের বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। কাল বৈশাখীর ছোবল, অহরহ ভাড়ি বৃষ্টিস্নাতে ফসলী জমিতে পানি জমে যাওয়া ও করোনা ভাইরাসের কারণে অন্য জেলা থেকে ধান কাটতে কাঙ্খিত শ্রমিক না আসায় মাঠের উঠতি পাকা ফসল কেটে ঘরে তোলার অনিশ্চয়তার কারনে উদ্বিগ্ন আর চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন চাষিরা। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমি ইরি-বোরো চাষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ পানি সংকটে কারনে ১শ হেক্টার জমি কম চাষ হয়ে মোট চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৪শ ৫০হেক্টর। চাষ করা জমির মধ্যে ৮ হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড ধান ও ৬শ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফসী) বোরো ধান রয়েছে।

ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ৪৯ হাজার ৮শ ৮মেট্রিক টন চাল। এবছর বাম্পর ফলন হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী ধান উৎপাদন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, উপজেলার রাজিহার গ্রামের কৃষক জেমস মৃদুল হালদারের ব্রি-ধান ৫৮ এর বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী ক্রপ কাটিং করা হয়েছে। ওই ক্রপ কাটিংএ হেক্টর প্রতি সাড়ে ৭ মেট্টিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে বলে জানান তিন। যা বাম্পার ফলন হিসেবে ধরা হয়।

উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ফরিদপুর, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ি, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটা শ্রমিকদের ধান কাটতে আগৈলঝাড়ায় আসার ব্যবস্থা গ্রহন করলেও এবছর উল্লেখযোগ্য কোন শ্রমিক না আসায় জমির ধান কাটতে না পেরে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ফসল।

এদিকে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত কাল বৈশাখী ঝড় সাথে একটানা ২/৩ ঘন্টা ভাড়ি বৃষ্টি হওয়ায় এলাকার ৮০ভাগ পাকা ধানের জমিতে হাটু সমান পানি জমেছে। কাল বৈশাখীর ছোবলে অনেক মাঠের কাঁচা-পাকা ও পাকা ধান পানিতে পরে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।

ধান কাটা জন্য সরকারের ভর্তুকীর হারভেষ্ট মেশিনসহ যান্ত্রিক মেশিনগুলোও মাঠে পানির জন্য কৃষকের তেমন কোন কাজেই আসছে না। বাম্পার ফলনের পরেও ভরা মৌসুমেও পাকা ধান ঘরে তুলতে না পারায় হাসি নেই কৃষকের মুখে।

উপজেলার বড় বাশাইল গ্রামের কৃষক শাহ আলম মোল্লা জানান, এবছর বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে পানি জমায় তাদের ধান কাটতে আসা শ্রমিকেরা এখন ধান কাটতে চাইছেন না। আবার যারা ধান কাটতে এসেছেন তাদের অনেকেই পানিতে তলানো ধান না কেটে ফেরত চলে যাচ্ছেন। ধান কাটার ভরা মৌসুমে অব্যাহত বৃষ্টি ও শ্রমিক সংকটের কারণে উঠতি পাঁকা ফসল ঘরে তুলতে না পেরে কৃষকরা চরম হতাশাগ্রস্থ হয়ে পরেছেন।

বর্গা চাষিরা জানান, বেশিরভাগ চাষী স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে মৌসুমের শুরুতে প্রতি হাজার টাকায় ১মন ধান ও আসলের ১হাজার টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতিতে টাকা নিয়ে জমি চাষাবাদ করেছিলেন। পাঁকা ফসল বিনষ্ট হওয়ায় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নেয়া ঋণ ও সুদের ধান ও টাকার চিন্তায় এখন বিপর্যস্ত হয়ে পরেছেন তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বাম্পার ফলনের পরেও ঝড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টিপাত, কনোরার কারনে শ্রমিক সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এবছর চাষীরা পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে সত্যি বিপদের মুখে রয়েছেন। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর উঠতি ফসলের বাজার মূল্য অনেক ভাল বলেও জানান তিনি।

(টিবি/এসপি/মে ০৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test