E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন 

২০২০ জুন ০৭ ১৮:৪৯:৩৯
টাঙ্গাইলে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন 

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের সারা বছরের স্বপ্ন বোরো ধান। ধান কেটে ঘরে ওঠাতে না পেরে চরম বিপাকে পরেছেন কৃষকরা। একদিকে মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের থাবা অপরদিকে প্রায় প্রতিদিনের বৃষ্টিতে মাঠের বোরো ধানের জমি পানিতে ডুবে গেছে। ফলে এক মণ ধানের দামেও একজন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। বাধ্যহয়ে নিজেদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের নিয়ে এবং অতিমূল্যে ২-৪ জন শ্রমিক নিয়ে ধান কাটছেন। ক্ষেতে পানি থাকায় অন্য সময়ের তুলনায় অর্ধেক কাজও করতে পারছেন না তারা। তবে বৃষ্টির পানিতে ধানের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানাতে পারেনি। 

জেলা কৃষিসম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় এক লাখ ৭১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ছয় লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন। সেখানে জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর, বাসাইল উপজেলায় ১১ হাজার ১২০ হেক্টর, কালিহাতী উপজেলায় ১৮ হাজার ২৫২ হেক্টর, ঘাটাইল উপজেলায় ২০ হাজার ৯৭৪ হেক্টর, নাগরপুর উপজেলায় ১৬ হাজার ৬৮ হেক্টর, মির্জাপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৮১০ হেক্টর, মধুপুর উপজেলায় ১২ হাজার ৪২০ হেক্টর, ভূঞাপুর উপজেলায় ৬ হাজার ৯০০ হেক্টর, গোপালপুর উপজেলায় ১৩ হাজার ৭০০ হেক্টর, সখীপুর উপজেলায় ১৫ হাজার ৭৩৫ হেক্টর, দেলদুয়ার উপজেলায় ৯ হাজার ৬২০ হেক্টর, ধনবাড়ী উপজেলায় ১০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।

সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাগমারা, এনায়েতপুর, বাইমাইল, ধরেরবাড়ী, কোনাবাড়ি, লাউজানা, বানিবাড়ী, পিচুরিয়া, গালা, কুইজবাড়ী ও বড় বাসালিয়া এলাকায় দেখা যায়, হাটু থেকে প্রায় কোমড় পর্যন্ত বৃষ্টির পানিতে ধান ক্ষেত ডুবে রয়েছে। পানিতে দাঁড়িয়ে কৃষক ও শ্রমিকেরা ধান কাটছে। কাটা শেষে ধানের আটি পানিতে রশি দিয়ে টেনে টেনে বাড়ি নিচ্ছেন। কেউ আবার ধান ক্ষেতের পাশেই পানির মধ্যে খড় বিছিয়ে নেট অথবা প্লাস্টিকের মাদুর বিছিয়ে ধান মারাই করছে। পানি থাকার কারণে আগের নির্ধারিত জায়গায় কৃষকরা ধান শুকাতে পারছেন না। শুকনো জায়গায় নিয়ে ধান শুকাতে হচ্ছে। ক্ষেতে পানি থাকার কারণে শ্রমিক ও সময় এবং মজুরি বেশি লাগছে। সব মিলিয়ে কৃষকেরা মারাত্মক দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।

কাগমারা এলাকার রূপচান মিয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে ধানক্ষেতে পানি থাকায় শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে। অন্যদিকে ধান কাটা থেকে শুরু করে মাড়াই এবং শুকানো পর্যন্ত সময়ও লাগছে বেশি। বৃষ্টির আগে যেখানে ধান মাড়াই ও শুকানো পরিকল্পনা করেছিলাম সেখানে পানি ওঠেছে। তাই পাশের বাইমাইল এলাকার এক আত্মীয় বাড়ি নিয়ে ধান শুকাচ্ছেন। সব মিলে খরচও কয়েকগুণ বেশি হচ্ছে।

একই এলাকার সরোয়ার হোসেন বলেন, চার বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলাম। এর মধ্যে দুই বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছি। বাকি দুই বিঘা জমির ধান বৃষ্টির কারণে পানিতে ডুবে গেছে। ধানকাটতে শ্রমিকের সংখ্যা বেশি লাগছে।

তিনি বলেন, শুধু আমার নয়। আমার স্কীমে প্রায় ৪০ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। সেখান থেকে আংশিক ধান কৃষক কাটতে পেরেছেন। বেশিরভাগই পানিতে ডুবে গেছে।

কৃষক মো. মামুন মিয়া বলেন, টাকা ধার করে ধান চাষ করেছিলাম। ভেবেছিলাম ধান বিক্রি করে ধারের টাকা পরিশোধ করতে পারবো। কিন্তু পানিতে ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তাই শ্রমিক ও সময় বেশি লাগায় খরচও বেশি হচ্ছে। খরচের তুলনায় ধানের দাম খুবই কম। পানির কারণে পাকা ধান ঘরে তোলা ও দেনা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

কৃষক আলীম মিয়া বলেন, ধান কাটা শ্রমিকের ধান খুবই বেশি। ৭৫০ থেকে শুরু করে ৮৫০ টাকা পর্যন্ত। এর মধ্যে আবার তিন বেলা খাবার দিতে হয়। প্রতিজনকে তিনবেলা খাবারে ১৫০ থেকে শুরু করে ২০০ টাকা খরচ হয়। সব মিলে ধান চাষ করে এ বছর খরচের টাকাও উঠবে না। ভাবছি আগামিতে আর ধান চাষ করবো না। কী পরিমাণ ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে ও কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে হিসাব দিতে পারেননি টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন।

(আরকেপি/এসপি/জুন ০৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test