E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে আশার আলো জাগয়েছে ব্রি ধান ৮৭

২০২০ নভেম্বর ২১ ১৩:৪৯:২৪
দিনাজপুরে আশার আলো জাগয়েছে ব্রি ধান ৮৭

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : উত্তরের শষ্য ভান্ডার দিনাজপুরে আমন মৌসুমে আগামজাতের ব্রি ধান ৮৭ কৃষকদের মাঝে আশার আলো জাগিয়েছে। স্বল্পমেয়াদি, খরাসহিষ্ণু হওয়ায় এ জাতের ধান চাষ লাভজনক বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। আমন মৌসুমে প্রচলিত ধানের চেয়ে হেক্টর প্রতি এক টন ফলন বাড়াবে নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৮৭ নামের উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। আগাম এ ধান ঘরে তুলতে পেরে এবং এধানের ফলন ও দামও ভালো পেয়ে খুশি কৃষক। এ ধান কাটার পর পরিত্যক্ত জমিতে আলু,সরিষাসহ চাষ হচ্ছে শীতকালীন বিভিন্ন সব্জি। এতে বাড়ছে জমিতে ফসলের নিবিড়তা।

দিনাজপুরের সদর উপজেলার রামডুবি এলাকার কৃষক বিধান কৃমার মহন্ত প্রথম বারের মতো দুই একর জমিতে ব্রি ধান ৮৭ উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের ধান আবাদ করেছেন। ধান কেটে ওজন করা হলে আমন মৌসুমে প্রচলিত ধানের চেয়ে হেক্টর প্রতি এক টন ফলন বেশি পেয়েছেন ্বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।

শুধু কৃষক বিধান কৃমার মহন্ত নয়,দিনাজপুরের বেশ কয়েকজন কৃষক এবার প্রথম বারের মতো চাষ করেছেন ব্রি ধান ৮৭।আমন মৌসুমে প্রচলিত ধানের চেয়ে ব্রি ধান ৮৭’এ হেক্টর প্রতি এক টন বেশি ফলন পেয়েছেন তারা।এ ধান চাষে ভালো ফলন পেয়ে উৎফুল্ল কৃষক।

ব্রি ধান ৮৭ নতুন জাতটির ফলন হেক্টরে সাড়ে ছয় টন। এ ধানের চাষাবাদ অন্যান্য রোপা আমন ধানের মতোই।গাছের কান্ড শক্ত ও ফলন বেশি হওয়ায় খুব দ্রুতই ধানটি কৃষক পর্যায়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এমনটাই জানালেন, দিনাজপুর সদর উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো.এনামুল হক।

তিনি জানান, আমন মৌসুমে উদ্ভাবিত নতুন ব্রি-৮৭ জাতের চিকন আমন ধান চাষে চাষিদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। কারণ চিকন জাতের আমন ধান বেশি দামে বিক্রি করা খুবই সহজ। আড়তদার, চাতাল মালিক ও মহাজনরা আগ্রহভরে খরিদ করছেন চাষিদের কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, চিকন জাতের এই জাতটি উঁচু জমিতে লাগালেও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া ব্রি-৮৭ জাতের ধান সময়ের ব্যবধান হিসেব করে চাষ করলে নির্ধারিত সময়ে ওই ধান কাটার পর সরিষা মুসুর, ছোলাসহ বিভিন্ন ডালজাতীয় ফসলের আবাদ করা যাবে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট-ব্রি ফলিত গবেষণা বিভাগের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো.হুমাউন করীর জানান, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউড থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকের মাধ্যমে চাষ করে ফলন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জীবনকাল নির্ধারণ করে আমন ধানের ব্রি-৮৭ জাতের ধানটি চাষিদের মাধ্যমে চাষ করা হচ্ছে। ব্রি ধান ৮৭ এর জীবনকাল ব্রি ধান ৪৯ এর চেয়ে ৭ দিন কম। ব্রি ধান ৪৯ এর চেয়ে ফলন হেক্টর প্রতি এক টন বেশি হয়। ব্রি-৮৭ জাতের চিকন ধান প্রতি ৩৩ শতাংশ জমিতে ২৭-৩০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। স্বর্ণা ধানের ১৪৫ দিন জীবনকাল এবং ব্রি-৮৭ চিকন আমন ধানের জীবনকাল ১২৭ দিন।

স্বর্ণা ধান কাটার ১৫ দিন আগেই ব্রি-৮৭ জাতের চিকন আমন ধান কাটা যায়। পূর্ণ বয়স্ক ধান গাছের গড় উচ্চতা ১২২ সেন্টিমিটার, ধান গাছের কান্ড শক্ত, গাছ লম্বা হলেও হেলে পড়ে না। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কোনো কোনো সময় ঝড়ো হাওয়ার কারণে হেলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাতা হালকা সবুজ, ডিগ পাতা খাড়া এবং ব্রি ৪৯ জাতের চেয়ে লম্বা ও প্রশস্ত। ধান পাকার সময় কান্ড ও পাতা সবুজ থাকে, চালের আকার ও ধানের আকৃতি চিকন লম্বা, এ ধানের অ্যামাইলোজ ২৭ শতাংশ। ব্রি ৮৭ এর জীবনকাল ব্রি -৪৯ এর চেয়ে ৭ দিন কম এবং ফলনও বেশি। চিকন লম্বা জাতের ধান উৎপাদনে চাষিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

ব্রি ধান-৮৭’র চাষাবাদ বাড়াতে কৃষক প্রশিক্ষণ বীজ সংরক্ষণেরও পরামর্শ দিচ্ছে,বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট-ব্রি ফলিত গবেষণা বিভাগ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

নির্ধারিত মৌসুমের সময় অনুসারে এবং সরিষা কেটে বোরো চাষ করা যাবে অতি সহজে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউড থেকে উদ্ভাবিত ব্রি-৮৭ চিকন জাতের এই ধান চাষে দিনাজপুরে চাষিদের আশার আলো জাগিয়েছে।

ব্রি ৮৭ এর জীবনকাল ব্রি -৪৯ এর চেয়ে ৭ দিন কম এবং ফলনও বেশি। চিকন লম্বা জাতের ধান উৎপাদনে চাষিদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। জেলায় এ বছর পরামর্শক্রমে ১৩ উপজেলায় ৫২ জন কৃষক দেড়’শ হেক্টর জমিতে এ জাতের ধান চাষ করে সফল হয়েছেন।

সরজমিনে দেখা গেছে, অকিাংশ কৃষক ব্রি ধান ৮৭ চাষাবাদ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। তাদের এই সাফল্য এখন অনেকের অনুপ্রেরণা।সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবং এধানের ভালো দাম পেলে, আগামীতে এই ব্রি ধান ৮৭’র চাষাবাদ পরিধি আরো বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা।

(এস/এসপি/নভেম্বর ২১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test