E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ফুল নিয়ে বিপাকে ঝিনাইদহের চাষিরা

২০২১ জানুয়ারি ১০ ১৬:২১:৩৪
ফুল নিয়ে বিপাকে ঝিনাইদহের চাষিরা

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ফুল ফুটেছে। কিন্তু হাসি ফোটেনি ফুল চাষিদের ঠোঁটে। দীর্ঘমেয়াদি করোনার রোষানলে পড়ে ভেস্তে গেছে ব্যবসা। ডিসেম্বর থেকে প্রতি বছর ফুলের বেচাবিক্রি যেখানে থাকে রমরমা, সেখানে বিজয় দিবস ও ইংরেজি বর্ষবরণে হয়নি আশানুরূপ বিক্রি। সামনের তিন মাসজুড়ে আছে বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা নর্ববর্ষ। দিবসগুলো কতটা পরিবর্তন করবে ভাগ্য, বলতে পারছেন না তারা। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ফুল নষ্ট হয়েছে বাগানেই। গবাদিপশুর খাদ্যে পরিণত হয়েছে করোনাকালীন সময়ে।

ফুলচাষিরা জানান, গত বছর ২০২০ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এই ফুলের ব্যবসা হয়েছে রমরমা। সে বছর ফুলের চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। এ বছরে নিষ্প্রাণ সব। তিন বিঘা জমিতে গাঁদা, রজনীগন্ধা ও গ্ল্যাডিয়াস ফুলের চাষ করেছিলেন কালীগঞ্জের গান্না বাজার ও ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘ফুল বেচাকেনা খুবই কম। ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ফুল। এদিকে ফুল তুলে বাগান থেকে অপসারণ না করলে গাছ মরে যাবে। সে কাজেও রয়েছে খরচ। এদিকে কবে ফুলের বাজার শুরু হবে তাও অনিশ্চিত। পকেটের টাকা খরচ করে এভাবে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে এখন ফুলগাছ তুলে ফেলে দিতে হচ্ছে।’

জানা যায়, ১৯৯১ সালের কথা। ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহে কালীগঞ্জের ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন। ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার লাভ করতে থাকে। সেখান থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে জেলার হাজার হাজার কৃষক ফুলচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছিলেন। এদের সবাই এখন বিমর্ষ।

এলাকার বেশ কয়েকজন ফুলচাষি জানান, কৃষকের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে করোনা ভাইরাস। গত বছরের ফুল বিক্রির মৌসুমে করোনা সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে তাদের। এবছরের ফুল বিক্রির মৌসুমের এক মাস অতিবাহিত হয়েছে, দুটো দিবস কেটে গেছে, কিন্তু বিক্রি তেমন নেই। চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন সবাই। বেশি বিপদে পড়েছে ফুলকর্মীরা, যারা ফুল তোলা ও গাঁথার কাজ করে সংসারের খরচ জোগান দিত।

সব থেকে বেশি ফুলচাষ হওয়া এলাকা বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা ফুল বাগানের গাছ বাঁচাতে পকেটের টাকা খরচ করে ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছেন। অনেকে ফুল গবাদি পশুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করছেন।

শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের স্কুল শিক্ষক খলিলুর রহমান জানান, এ বছর আট বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছিলাম। অনেক জমিতে ফুল তোলা শুরু হয়েছিল। এখন ফুল বেচাকেনা বন্ধ। অনেক জমির ফুল গাছ তুলে দিচ্ছি।

আগে বালিয়াডাঙ্গা, লাউতলা ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্টান্ড দুপুর গড়ালে ফুলে ফুলে ভরে যেত। এসব বাজারে প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন। ফুলচাষি, ব্যাপারী আর শ্রমিকদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকত। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তূপ করে সাজানো হতো ফুল। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ও ভ্যান ভরে ফুল যেত। সেখানে এখন খাঁ খাঁ মরুভূমির মতো।

গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন বলেন, ফুলের ভরা মৌসুমে করোনার হানায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশাহারা হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ ফুলের বেচাকেনা হবে তাও অনিশ্চিত, যেহেতু এখানকার ফুলের সুনাম আছে আমরা আশাকরছি খুব শিগগিরই এ ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়াবে।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ১০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test