E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দিনাজপুরে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন চাষ

২০২১ মার্চ ০৫ ১৭:০৪:১৪
দিনাজপুরে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন চাষ

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : উত্তরের শষ্যভান্ডার দিনাজপুওে এবার বিদেশী ফল ড্রাগনের পর এবার পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ হচ্ছে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন। গাছে পর্যাপ্ত ফলের সমাগমে লাভের আশা দেখছেন নবাবগঞ্জের কৃষক মতিউর মান্নান। ডুমুর আকৃতির এই ফল দৃষ্টি কেড়েছে এলাকার মানুষের। এছাড়াও এই ফলের বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অনেক মানুষের। ত্বীন চাষে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে, কৃষি বিভাগ। 

করোনার কারণে পুঁজি হারা এক যুবক দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার মতিউর মান্নান। তবে থেমে নেই তার জীবনের পথচলা। ছোট বোনের পরামর্শে গেলো বছরের অক্টোবর মাসে গাজিপুর থেকে ৯’শ চারা এনে চার বিঘা পতিত জমিতে ত্বীণ ফলের চাষ শুরু করেন তিনি। চারা রোপণের দেড় মাসে মাথায় স্বপ্নের সেই ত্বীণ গাছে আসতে শুরু করে ফল। আর স্বল্প সময়ে গাছে ফল আসায় পুঁজি হারা সেই দৃশ্য ভুলে গেছেন তিনি। এখন অপেক্ষায় আছেন পরিপক্ক হলে ঢাকার বাজারে এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করে বাড়তি আয়ের। গাছে আশাতীত ফল দেখে মহাখুশি
ত্বীন চাষী মতিউর মান্নান।

তিনি জানান, এ বছর ভালো লাভের আশা করছেন তিনি। আগামীতে এ ত্বীন চাষে জমির পরিমানও বাড়াবেন তিনি। এজন্য আরো ৮ বিঘা জমি প্রস্তুর কথাও জানিয়েছেন মতিউর মান্নান। ডুমুর আকৃতির এই ফল দৃষ্টি কেড়েছে এলাকার মানুষের। এছাড়াও এই ফলের বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অনেকের। বাগানের ফল দেখতে ও চাষ পদ্ধতি জানতে দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় করছে অনেকে।

হাকিমপুর(হিলি) উপজেলা থেকে ত্বীন বাগান দেখতে আশা শাহীনুর হোসেন জানালেন, তিনি ত্বীন বাগান দেখে অভিভুত হয়েছেন। নিজে প্রাথমিকভাবে আড়াই বিঘা জমিতে ত্বীন বাগান করবেন বলে মনে করছেন।

বাগান দেখতে আসা রোকন ও জুলহাজ বলেন, আমরা শুধু ফেইসবুক, টিভিতে দেখি ত্বীণ ফল। পবিত্র কোরআনেও এই ফলে নাম আছে। আজ বাগানে এসে বাস্তবে ফলটি দেখতে পেরে আমাদেরকে অনেক ভালো লাগলো। ফল গুলো দেখতে ডুমুর আকৃতির, গাছে অনেক ফল ধরেছে। এই ফলটি আমাদের এলাকায় প্রথম চাষ হচ্ছে । ফলের বাগান দেখে আমাদের এরকম বাগান করা ইচ্ছে হচ্ছে।আমরা বাগান দেখার পাশাপাশি মতিউর মান্নানের কাছ থেকে এই ফল চাষের পদ্ধতি সর্ম্পকে অনেক কিছু জানলাম। আমরা ভবিষৎ এ রকম বাগান করবো।

বাগানের শ্রমিক লাবলুসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আমরা ১০ জন ত্বীণ ফলের বাগানে কাজ করছি। করোনায় কোন কাজ কর্ম ছিলো না। মতিউর ভাই ত্বীণ ফলের বাগান করায় এখানে আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এখানে কাজ করে আগের থেকে আমাদের সংসার অনেক ভালো চলছে। মতিউর ভাইয়ের মত এলাকায় আরো যদি কেউ বাগান তৈরি করে তাহলে আরো বেশকিছু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

ত্বীণ ফল চাষী মতিউর মান্নান বলেন, করোনা মহামারীতে স্থবীর হয়ে পড়ে পুরো দেশ। আর এসময় ব্যবসার পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম আমি। এরপর ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসি। পরে ছোট বোনের পরামর্শে গাজীপুর থেকে ত্বীণ ফলে চারা এনে গেলো বছরের অক্টোবর মাসে ৪ বিঘা পতিত জমিতে চাষ শুরু করি। বাগান করতে গিয়ে ২৩ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ভয় পেলেও চারা রোপণের দেড় মাসের মাথায় গাছে ফল আসতে শুরু করায় আমি খুব খুশি। দুই-একটি করে ফল পাঁকতে শুরু করেছে। ঢাকার বাজার ফলটি চাহিদা অনেক, দামও ভালো,প্রতিকেজি ফল বিক্রি হয় এক হাজার টাকা দরে।

তিনি আরো জানান,বাগান সম্প্রসারণ করতে ইতিমধ্যে আমি গাছে কলম করতে শুরু করেছি, কলম গুলো করে বাগান সম্প্রসারণের পাশাপশি সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবো।

নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশে গাজীপুরের পর প্রথমবারের মত আমাদের এলাকায় এই ফলে চাষ শুরু করেছে কৃষক মতিউর মান্নান। ত্বীন ফলটি মরুভূমির এলাকার বেশি পাওয়া যায়। এটি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, তাছাড়াও এর ঔষুধি অনেক গুনাবলি রয়েছে।কেউ যদি এই ফলের বাগান নতুন করে তৈরি করতে চায় আমাদের কৃষি অফিস তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

তিনি আরো বলেন, এই ফল চাষাবাদে ও ভালো ফলন পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাগান পরিদর্শনসহ মতিউর নামের ওই কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তার উপজেলাতে প্রথমবারের মত ৪ বিঘা জমিতে লাগানো হয়েছে ৫ জাতের ৯শ টি ত্বীণ ফলের গাছ। সরকারী সহযোগিতা পেলে এই ফলটি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

(এস/এসপি/মার্চ ০৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test