E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর ফলন ভালো হলেও হিমাগারের অভাবে ব্যাপক দর পতনের আশঙ্কা

২০২১ মার্চ ২৩ ১৫:২৭:২০
ঠাকুরগাঁওয়ে আলুর ফলন ভালো হলেও হিমাগারের অভাবে ব্যাপক দর পতনের আশঙ্কা

আহমেদ ইসমাম, ঠাকুরগাঁও : কৃষিতে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে এবার আলুর আবাদ হয়েছে যেমন ব্যাপক, তেমনি ফলনও হয়েছে আশাতীত। আলু চাষ করে দুটো পয়সার মুখ দেখবে বলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছিল । কিন্তু ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেছে সে হাসি। অর্ধেক আলু এখনও মাঠে। কিন্তু এরই মধ্যে জেলার সব হিমাগার পূর্ণ। আলু সংরক্ষণের সুযোগ নেই। কৃষকরা আলু নিয়ে ধর্ণা দিচ্ছে হিমাগারের দরজায় দরজায় । হিমাগারের সামনে এখন আলু বোঝাই বিভিন্ন ধরনের গাড়ির ভিড়। বাধ্য হয়ে একটি হিমাগার কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে আলু না আনার জন্য গ্রামে গ্রামে প্রচার করছে।

গত বছর বাজারে আলুর দাম বেশি ছিল। তাই এবার আলুর আবাদ বেড়ে যায়। উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ বেশি হওয়ায় কমেছে আলুর দাম। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু সংরক্ষণে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষক তাদের উৎপাদিত আলু নিয়ে হিমাগারগুলোতে আসছেন। ব্যবসায়ীরাও স্থানীয়ভাবে আলু ক্রয় করে সংরক্ষণ করতে আসছেন হিমাগারে। তাই হিমাগারে আগের তুলনায় চাপ বেড়েছে প্রায় কয়েকগুন। এ সুযোগে হিমাগার মালিকরা প্রতি বস্তা আলু সংরক্ষণের জন্য বস্তা প্রতি ৫০-৭০ টাকা বেশি নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হিমাগার মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছে মতো অর্থ আদায় করছে এবং হিমাগারে রাখছেন ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত আলু।

রাহবার হিমাগার লিমিটেড এর সহকারী ম্যানেজার আনিসুল ইসলাম জানান, কোল্ড স্টোর সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বস্তা প্রতি ৩শ থেকে ৩২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। হাওলাদার হিমাগার লিঃ এর নির্বাহী পরিচালক গোলাম সারোয়ার রবিন জানান, এবার আলু সংরক্ষণে চাপ রয়েছে। ভিড় সামলাতে হিমসিম খাচ্ছি। তাই হিমাগারে আপাতত আলু না আনার জন্য কৃষকদের অনুরোধ করে মাইকিং করছি।

সদর উপজেলার সালান্দর ইউনিয়নের আলু চাষি একরামুল হক (রিপ্লাই) জানান, এ বছর আলু উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকা আর বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৯ টাকা। এ পর্যন্ত যত সামান্য লাভ পেলেও আলু সংরক্ষণ করতে না পারায় অবশিষ্ট আলু গলোতে লোকসান গুণতে হবে । যদি বাহিরে আলু পাঠাতে না পারি তবে লোকসানের পরিমান হবে ভয়াবহ।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে চলতি মৌসুমে আলুর আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৫শ ১৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবার ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ বেশি হয়েছে। এবার প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে সাড়ে ২৪ মে. টনেরও বেশি। এই হিসাবে জেলায় এবার প্রায় ৭ লাখ মে.টন আলু উৎপন্ন হয়েছে। অথচ জেলার ১৬ টি হিমাগারে ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ৮০ হাজার মে.টন। জরুরি ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ২ লাখ টন আলু রাখা সম্ভব। ইতমধ্যে সব হিমাগার পূর্ণ হয়ে গেলেও বাজারে চাহিদার চেয়ে উৎপাদিত ৫ লাখ টন আলু অবশিষ্ট রয়েছে । বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৯-১০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। এখনও অনেক আলু মাঠেই রয়েছে। আলুর দাম কেজি প্রতি ৫ টাকাতেও নামতে পারে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। আলু নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। তাই এখনই আলু রফতানির উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার আলুর আবাদ হয়েছে অনেক বেশি। আমাদের এ জেলা থেকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা সহ বেশ কয়েকটি দেশে আলু রপ্তানি করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ২টি এবং ঢাকার ৩ টি কোম্পানির মাধ্যমে এসব আলু রপ্তানি হয়। যেহেতু হিমাগারে জায়গা অপ্রতুল, আমরা চেষ্টা করছি রপ্তানির পরিমান বাড়িয়ে কৃষকরা যেনো ক্ষতির সম্মুখিন না হয়।

(আই/এসপি/মার্চ ২৩, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test