E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঝড় ও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বোরোর ব্যাপক ক্ষতি, নিঃস্ব হাজারো কৃষক

২০২১ এপ্রিল ১০ ১৮:২৩:২৭
ঝড় ও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বোরোর ব্যাপক ক্ষতি, নিঃস্ব হাজারো কৃষক

বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় হঠাৎ ঝড় ও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ৪৪২ হেক্টর বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দূর থেকে ধান গাছগুলোকে স্বাভাবিক মনে হলেও ছড়ায় থাকা ধানগুলো চিটে হয়ে গেছে। বাতাসের তোড়ে কিছু কিছু ক্ষেতের ধান মাটির সাথে মিশে গেছে।গত রবিবার রাতে হঠাৎ ঝড়ো বাতাসে কৃষকদের ক্ষেতের ধানের এই ক্ষতি হয়েছে। ফলন্ত ধানের এমন ক্ষতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। করোনা পরিস্থিতিতে ধার দেনা করা টাকায় উৎপাদিত ফসলের এমন ক্ষতিতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন হাজারো কৃষক। কৃষি ভিভাগ থেকে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে বাগেরহাট জেলার নয়টি উপজেলায় ৫৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে এবং হিট স্ট্রেজের ফলে বাগেরহাটের নয়টি উপজেলায় ৪৪২ দশমিক ৬ হেক্টর জমির ধান ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে, সব থেকে সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে চিতলমারী উপজেলার চাষিদের। এই উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে সদর উপজেলা। এই উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এছাড়া ফকিরহাটে ৮০, কচুয়ায় ৪০, মোরেলগঞ্জে ২০, মোল্লাহাটে ১০, রামপালে ২ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে শরণখোলা ও মোংলায় সামান্য কিছু জমির ধান আক্রান্ত হয়েছে। এর ফলে হাজারো কৃষক আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে বাস্তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি বলে দাবি করেছেন কৃষকেরা।

চিতলমারী উপজেলার শ্রীরামপুর বিলে ধান লাগানো কৃষক শাহীন গাজী বলেন, খুব আশা করে দেড় একর জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। এক মাসের মধ্যেই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু এখন ধানের যে ক্ষতি হয়ে গেল, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। ঝড়ের পরে ধানের কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যাই। ধারদেনা করে বোরো ধান চাষ করে এবার নিঃস্ব হয়ে গেলাম।

কৃষানী বিলকিস বেগম বলেন, নগদ-বান্দায় জমি রেখে ধান লাগিয়ে ছিলাম। কিন্তু ধানগুলো নষ্ট হয়ে গেল। ধানের কাছে আসলে চোখ থেকে শুধু পানি বের হয়। কিভাবে চলবো এখন। সংসারে ৮ জন লোক প্রতিদিন কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না। শুধু তো আমার নয়, এলাকার অনেকেরই এই অবস্থা।

কচুয়া উপজেলার মঘিয়া গ্রামের হোসেন শেথ বলেন, হঠাৎ ঝড়ে আমাদের শেষ করে দিয়ে গেছে। করোনায় সব কাজ বন্ধ, আয়ও বন্ধ একেবারে। ভরসা ছিল ধানের ওপর, তাও শেষ হল ঝড়ে।

ফকিরহাটের কৃষক অমল মন্ডল বলেন, অনেক আশা করে ধান লাগিয়ে ছিলাম। ধান কাটবো, বাড়িতে নিবো। পরিবার-পরিজনকে নিয়ে বছর ভরে খাবো। কিন্তু ঝড়ে আমাদের শেষ করে দিয়ে গেল। ধানের কাছে এসে দেখি সব চিটা। এখন কিভাবে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাঁচবো, কিভাবে চলবো এই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ঝড়ো বাতাস ও অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় ধান ক্ষেত হিটস্ট্রেস জনিত কারণে ধানের ফুলস্তরের শীষ সাদা হয়ে গেছে। এতকরে জেলার হাজারো কৃষকের ৪৪২ দশমিক ৬ হেক্টর জমির বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান বেশি আক্রান্ত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছুটা রিকভার করা সম্ভব হবে। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কৃষকদের পরিমিত সেচ প্রদান ও পরিমিত পটাশ স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

(এসএকে/এসপি/এপ্রিল ১০, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test