E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আলুর বাম্পার ফলন, হিমাগারে জায়গা নেই

লোকাসানে ফুলবাড়ীসহ ৭ উপজেলার আলু চাষিরা

২০২১ এপ্রিল ১৫ ১৬:০৭:৩৭
লোকাসানে ফুলবাড়ীসহ ৭ উপজেলার আলু চাষিরা

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ ৭ উপজেলার আলুর বাম্পার ফলন হলেও একমাত্রা ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণের জায়গা না থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছেন আলু চাষিরা। বাধ্য কমদামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

জানা যায়, ফুলবাড়ী, চিরিরবন্দর, বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর, পার্বতীপুর, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর উপজেলার ১০ হাজারেরও বেশি আলু চাষি তাদের উৎপাদিত আলু এবং আলুর বীজ এলাকার ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজে নির্দিষ্ট পরিমাণ আলু ও আলু বীজ সংরক্ষণ করার করতে পারলেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আলু নিয়ে বিপদে পড়েছেন চাষিরা। সংরক্ষণ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে চাষিরা উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীদের কাছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৭ উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমি। কিন্তু চাষিরা চাষ করেছেন ১৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছেন ৩ লাখ ৯ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন। উপজেলা ভিত্তিক চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ফুলবাড়ীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮২০ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ২ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে, চিরিরবন্দরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৭৯০ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে, বিরামপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৮৬৯ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে, নবাবগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৪৪৯ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে, হাকিমপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৯০ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ৯০৫ হেক্টর জমিতে, ঘোড়াঘাটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে, পার্বতীপুরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৯৭৬ হেক্টর। কিন্তু চাষ হয়েছে ৪ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছেন ৩ লাখ ৯ হাজার ৩০৭ মেট্রিক টন। উল্লেখিত ৭ উপজেলার মধ্যে ১টি মাত্র হিমাগার আলু সংরক্ষণের জন্য রয়েছে। যার আলু সংরক্ষণের সক্ষমতা ৬০ কেজি ওজনের ১ লাখ ৫৬ হাজার বস্তা।

জানা যায়, উল্লেখিত ৭ উপজেলার আলু সংরক্ষণের জন্য একমাত্র ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজই চাষিদের আলু সংরক্ষণের ভরসা।

ফুলবাড়ী উপজেলা গোপালপুর গ্রামের আলু চাষি সুবাস চন্দ্র ও লালপুর পাঠকপাড়া গ্রামের প্রদীপ কুমার বলেন, গত বছর আলুর দাম ভালো পাওয়ায় এবছর এলাকার কমবেশি সব কৃষকই বেশি বেশি করে আলু চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকাসহ প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না আসায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে বাজারে আলুর একটু আশানুরুপ দাম পাওয়া গেলে এখন দাম পড়ে গেছে। তবে আলু এবং আলু বীজ হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারলে আগামীতে ভালো দাম পাওয়া যেতো। কিন্তু হিমাগারে জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা তাদের আলু বিক্রি করে দিয়েছেন।

রাজারামপুর গ্রামের আলু চাষি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক চেষ্টা করে ৩০০ বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পেরেছেন। গত বছরগুলো আলু সংরক্ষণ করেছেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ বস্তা পর্যন্ত। কিছু আলু বাড়ীতে বিশেষ ব্যবস্থায় সংরক্ষণের চেষ্টা করেছেন।

ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের সুপারভাইজার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘হিমাগারে ১ লাখ ৫৬ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণের ধারণ ক্ষমতার পুরোটাই ভরে গেছে। হিমাগারে প্রধান গেট বন্ধ করে দেওয়া হলেও চাষিরা আনু নিয়ে এসে ভিড় করছেন। কিন্তুু হিমাগারে তো আর জায়গা নেই, নিরুপায় হয়ে তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। তবে এ বছর ব্যবসায়ীদের চেয়ে কৃষকদের আলু বেশি সংরক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তৌহিদুল ইকবাল বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলন পেয়েছেন। আলু বীজের দাম বেশি থাকায় আলুর উৎপাদন খরচও বেড়েছে। গত বছর আলুতে আশানুরূপ লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এ বছর বেশি জমিতে আলু চাষ করেছেন। ব্যবসায়ীরা আলু রপ্তানিতে ভূমিকা রাখলে কৃষকরা সন্তোষজনক দাম পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।’

(এসিজি/এসপি/এপ্রিল ১৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test