E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সীডলেস লেবু চাষে সফল তরুণ হাবিব

২০২১ এপ্রিল ১৬ ১৭:১২:০৫
সীডলেস লেবু চাষে সফল তরুণ হাবিব

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর ধামইরহাটে লেবু চাষ করে সফল হয়েছে এক তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হাবিবুর রহমান। কৃষি বিষয়ে পড়াশুনা শেষ করে চাকুরির পিছনে না ছুটে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে শুরু করেন কৃষি খামার। বর্তমানে মাত্র ৩৩ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করে বছরে প্রায় ৮ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। ইতোমধ্যে গ্রামের শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবকরা হাবিবুর রহমানকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।

জানা গেছে,উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত দক্ষিণ শিববাটি গ্রামের কৃষক মো.আব্দুর রহমানের পুত্র হাবিবুর রহমান কৃষি বিষয়ে বিএজিএড পাস করার পর চাকুরির পিছনে না ছুটে নিজের অর্জিত জ্ঞান ও প্রাতিষ্ঠানিক লদ্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০১৬ সালে নিজ গ্রামের দক্ষিণ পার্শ্বে ৩৩ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল মারোমাসী চায়না-৩ (সীডলেস) জাতের ২৩১টি লেবুর চারা রোপন করেন।

লেবুর চারা, বাগান বেড়া দিয়ে ঘেরা এবং শ্রমিকের মজুরী বাবদ তার মোট খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ২০১৭ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে ওই বাগান থেকে লেবু এবং লেবুর চারা বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম বছর ২০ হাজার, দ্বিতীয় বছর ৪০ হাজার, তৃতীয় বছর প্রায় ১ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি গত বছর করোনাকালে লেবু বেশি বিক্রি হয়েছে। ২০২০ সালে রমজান মাস এবং করোনার জন্য প্রতি পিচ লেবু বাগান থেকে পাইকারী হিসেবে ৫ টাকা দরে বিক্রি করে মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হয়েছে। লেবু চাষে তেমন শ্রম দিতে হয়না। তাছাড়া এর রোগ বালাই অনেক কম। সহজে যে কেউ লেবু চাষ করতে পারে। বর্তমানে তার বাগানের গাছে থোকায় থোকায় লেবু ধরেছে। একদিকে লেবু উঠানো হচ্ছে অন্যদিকে প্রচুর ফুল আসছে।

এ ব্যাপারে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা কৃষিবিদ মো.হাবিবুর রহমান বলেন, চলতি বছরে তার বাগান থেকে পর্যায়ক্রমে ৮০ হাজার পিচ লেবু বিক্রি করা হবে। প্রতি পিচ লেবু ৫টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে ৮০ হাজার লেবুর পাইকারী বাজার দর ৪ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে বাগান থেকে পাইকাররা লেবু ক্রয় করছে। এছাড়া তার বাগানে প্রায় ৯ হাজার লেবুর চারা করা হয়েছে। প্রতি পিচ চারা ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে ৯ হাজার চারা বিক্রি করে পাওয়া যাবে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বাগানে এবার তার খরচ হয়েছে ৮০-৯০ হাজার টাকা। এ বছর এ বাগান থেকে তার আয় হবে প্রায় সাড়ে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। তার বাগানের লেবুর চারার চাহিদা ব্যাপক বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে এ লেবুর কোন বিচি থাকে না। লেবুর চামড়া পাতলা এবং প্রচুর পরিমাণে রস থাকে। যার কারণে এর চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষের এ জাতের লেবুর চারা তার কাছ থেকে সংগ্রহ করছে।

তাছাড়া যে কেউ যোগাযোগ করলে তিনি স্বউদ্যোগে চারা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষি সংশ্লিষ্ট জনরা তার মুঠোফোন ০১৭১২৮৮৫৩৭১ নম্বরে কথা বলে চারা গ্রহণ করছেন। তার বাগানের ব্যাপক পরিচিতি পাওয়ায় এলাকার শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার যুবকরা তার সহযোগিতা নিয়ে অনেকে লেবু এবং লিচু বাগান তৈরি করেছেন। তারা বাগান থেকে মুনাফা পেতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ধামইরহাট উপজেলার সদ্য বিদায়ী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.সেলিম রেজা বলেন, তিনি ওই লেবুর বাগান কয়েক বার পরিদর্শন করেছেন। সীডলেস এ লেবুর প্রচুর রস এবং সুগন্ধী। কৃষি বিভাগ থেকে প্রযুক্তিগত দিকসহ তাকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া লেবুর মার্কেট তৈরি এবং চারা গাছ বিক্রি করতে কৃষি বিভাগ থেকে ব্যাপক প্রচারনা চালানো হয়েছে। মোট কথা এ অঞ্চলের জন্য এটি একটি আদর্শ লেবু বাগান।

বর্তমান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা.শাপলা খাতুন বলেন,সবে মাত্র এ উপজেলায় যোগদান করেছি। অন্য বাগান পরিদর্শন করেছি। তবে ওই বাগানে যাওয়া হয়নি। এ সময় মানুষকে প্রচুর ভিটামিন খেতে হবে। যার কারণে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ বাগান গড়ে তুলতে হবে। পূর্বের মতো উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে এ বাগানের জন্য সার্বিক সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

(বিএস/এসপি/এপ্রিল ১৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test