E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুড়িগ্রামে বৃহৎ পরিসরে সুপার ফুড খ্যাত স্পিরুলিনা চাষ 

২০২১ মে ০৯ ১৪:৫৮:২৫
কুড়িগ্রামে বৃহৎ পরিসরে সুপার ফুড খ্যাত স্পিরুলিনা চাষ 

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, রাজারহাট (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় বৃহৎ পরিসরে সবুজ হিরা খ্যাত স্পিরুলিনা চাষ করা হচ্ছে। কৃত্রিম জলাধারের মাধ্যমে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ কুড়িগ্রামে শুধু প্রথম নয়; এটি দেশের সর্ববৃহৎ বড় খামার বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। স্থানীয় ৭ জন যুবক বাণিজ্যিকভাবে স্পিরুলিনা চাষের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পাশাপাশি দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণের স্বপ্ন দেখছে।

সরেজমিন উপজেলার সদর ইউনিয়নের কিসামত প্রাণকৃঞ্চ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কৃত্রিম জলাধারের মাধ্যমে শৈবাল চাষের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। খামারটিতে বাণিজ্যিকভাবে চলছে স্পিরুলিনার চাষ। এজন্য চারদিকে নেট আর পলিথিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ২৪ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি জলাধার। ৩১ ফুট লম্বা এবং ৭ ফুট প্রস্থের জলাধারে ১২ হাজার লিটার করে ২৪ হাজার ধারণ সম্পন্ন দুটি হাউজ তৈরীতে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা। সূর্যের আলো ঢোকার জন্য স্বচ্ছ প্লাস্টিক দ্বারা ঘেরা হয়েছে জলাধার দুটি। বীজ হিসেবে ১১কেজি মা শৈবাল বা মাদার কালচার পানিতে দেয়া হয়। রোদ বেশি থাকলে উৎপাদন বেশি হয়। কৃত্রিম উপায়ে পানিতে এই শৈবাল বেড়ে উঠছে।

সমুদ্রের পানির উপাদানের জন্য জলাধারে সাত প্রকার ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। এই ওষুধেই ছয় মাস চলবে। এরপর পানির মাত্রা কমে গেলে তা বাড়াতে আবারও প্রয়োজন অনুপাতে একই উপাদান দিতে হবে। ছাঁকুনি দিয়ে শৈবাল সংগ্রহ করা হয়। কাঁচা শৈবাল শুকালে ওজন হয়ে যায় তিন ভাগের এক ভাগ। বর্তমানে এই জলাধার থেকে সপ্তাহে প্রায় ২০কেজি করে শৈবাল উৎপাদিত হচ্ছে। সঠিকভাবে বাজারজাত করা গেলে মাসে এই খামারে ২০/৩০হাজার টাকা খরচ করে ২/৩লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বর্তমানে স্পিরুলিনা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬/৭হাজার টাকা। এই শৈবালের মধ্যে নেই কোন ক্ষতিকর বস্তু। সুপার ফুড খ্যাত স্পিরুলিনায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, লৌহসহ একাধিক খণিজ পদার্থ। অপ্রয়োজনীয় শৈবাল মাছের খাদ্যও হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

উদ্যোক্তা গোলাম মন্ডল, জাকির হোসেন ও সেলিম রেজা জানান, স্পিরুলিনা চাষের উপর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে আমরা একদিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে চাষের কাজ শুরু করেছি। তবে স্পিরুলিনা চাষে বড় বিপত্তি হল এর কেমিক্যাল সংগ্রহ করা। বেশ কয়েকটি মূল্যবান কেমিক্যাল রয়েছে যেগুলো খুচরা পাওয়া যায় না। সেগুলো সহজলভ্য করা গেলে দেশের অনেক বেকার তরুণ স্পিরুলিনা চাষ করে স্বাবলম্বি হতে পারবে। এতে করে দেশের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তবে লকডাউন আর করোনার প্রভাবের কারণে এখনো বাজারজাত করা যায়নি। তবে ৫/৭টি ওষুধ কোম্পানির সাথে আমাদের আলোচনা চলছে, এছাড়াও আমরা ‘ফুলবাড়ী এ্যাগ্রো কোম্পানী’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছি।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ ও উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মীর্জা নাসির উদ্দিন জানান, সুপার ফুড খ্যাত স্পিরুলিনায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, লৌহসহ একাধিক খণিজ পদার্থ। যা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে মুল্যবান ভেষজ হিসেবে কাজ করে। দেশে-বিদেশে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বিভিন্ন সদস্য দেশে পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে স্পিরুলিনা ব্যবহারে নির্দেশনা রয়েছে। পুষ্টিমান স্পিরুলিনা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

এ বাপারে ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মাহাবুবুর রশীদ জানান, সুপার ফুড স্পিরুলিনার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো গেলে এটি বাজারজাতকরণ সহজ হবে। এছাড়াও সরকারিভাবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বাজারজাত করণে সহযোগিতা করলে দেশে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হবে। পাশাপাশি এটিকে আমরা সুপার ফুড হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের পুষ্টি চাহিদাও পূরণ করতে পারবো।

(পিএস/এসপি/মে ০৯, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test