E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

লকডাউন কেড়ে নিলো নওগাঁর আম চাষিদের মুখের হাসি!

২০২১ জুলাই ০১ ১৫:৪৭:৫৮
লকডাউন কেড়ে নিলো নওগাঁর আম চাষিদের মুখের হাসি!

নওগাঁ প্রতিনিধি : আমের দ্বিতীয় রাজধানী খ্যাত উত্তরের সীমান্তবর্তি নওগাঁ জেলায় উৎপাদিত সুমিষ্ট আম বর্তমানে দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতেও রপ্তানি হচ্ছে। তাই আমের মৌসুমে এই আমকে নিয়ে জেলার শত শত আমচাষী প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাস গত বছরের ন্যায় চলতি বছরেও আমচাষিদের  স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। বর্তমানে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের জারি করা লকডাউনে বাগানের আম বিক্রি না হওয়ায় মাথায় হাত উঠেছে আমচাষীদের। 

করোনা পরিস্থিতিতে চলমান লকডাউনে যানবাহনের অভাবে পাইকারি ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় আম বাজারজাতকরণ নিয়েও যথেষ্ট চিন্তিত আমচাষীরা। গত মে মাসের শেষে আম পাড়ার মৌসুম শুরু হবার আগে আমের বাজারজাতকরণে সরকারের গৃহীত নানান পদক্ষেপে তারা যখন আবার আশাবাদী হয়ে উঠছিলেন এবং শুরুতে বাজারে আমের দাম যখন আম চাষীদের মনে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছিল, ঠিক তখনি সারা দেশে চলমান সীমিত লকডাউন ও ১জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ায় নওগাঁর আমের বাজারে তার প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে বাজারে ব্যাপারীরা আম কেনা এক রকম বন্ধই করে দেয়ায় আমাচাষিরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। জেলার সবচেয়ে বড় আম বাজার সীমান্তবর্তি সাপাহার উপজেলায় অবস্থিত। কঠোর লকডাউনের কারণে আম কিনছেন না পাইকারী ব্যবসায়ীরা। তাই বাজারে নিয়ে আসা আম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আমচাষীরা।

আম বিক্রেতা ও আম চাষিদের বক্তব্য, কঠোর লকডাউন শুরু হওয়ার কারণে বাজারে ক্রেতা নেই। আর সে কারণে আম বিক্রি হচ্ছে না। পাইকাররাও বাইরের জেলা থেকে আসতে ভয় পাচ্ছেন। যে কয়জন পাইকার এসেছেন লকডাউনের মধ্যে তাদের কেনা আম বিক্রি করার কোন জায়গা থাকবে কিনা সে চিন্তা মাথায় রেখে তারা প্রায় আম কেনা ছেড়ে দিয়ে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। কঠোর এই লকডাউনের কারণে যদি আম উৎপাদনকারীরা আম বিক্রি ও নায্য মূল্য না পায় তাহলে চলতি মৌসুমে আম নিয়ে তাদের শেষ আশাটুকুও ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। প্রতিদিনই অসংখ্য আম বিক্রেতাদের সারি সারি আমের লাইন নিয়ে বিকেল পর্যন্ত বসে থাকতে দেখা গেছে এবং সামান্য যে কয়েকমন আম বিক্রি হতে দেখা গেছে তাও গতকয়েক দিনের বাজার দরের অর্ধেকের চেয়েও দাম কম। ক’দিন আগেই সাপাহারে যে আম বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ২হাজার ৬শ’ টাকা মন দরে, চলতি সপ্তাহে সে মানের আম বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১হাজার টাকা মন দরে বলে অসংখ্য আম বিক্রেতারা জানিয়েছেন।

অসহায় আমচাষিদের বক্তব্য করোনাকে কেন্দ্র করে বাজারে হয়তো এক শ্রেণীর আমব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরীর পাঁয়তারা করতে পারে। ভবিষ্যতে কোন ব্যবসায়ী কিংবা ব্যক্তি গোষ্ঠি যাতে আম নিয়ে কোন সিন্ডিকেট তৈরী করতে না পারে সেজন্য তারা সর্বক্ষন প্রশাসনের তদারকি এবং নজরদারী কামনা করেছেন।

আড়তের মালিকগণ বলছেন, লকডাউনে ব্যাপারীদের কেনা আম তারা বাইরে বিক্রি করতে পারবে কিনা সেটা চিন্তা করে আম কিনছেনা ব্যাপারীরা। যদি আম ক্রয় না করে তাহলে আমাদের করণীয় কি? সব মিলিয়ে জেলার আমচাষীরা তাদের কষ্টার্জিত উৎপাদিত আম নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জেলা প্রশাসক মো: হারুন-অর-রশীদ বলেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার আম যেন সুষ্ঠু ভাবে আমচাষিরা বিক্রি করতে পারেন শুরু থেকেই সেই বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। কিন্তু সরকারের আইনের প্রতি সকলের শ্রদ্ধা জানাতে হবে। কারণ এই মহামারি থেকে বাঁচতে একটু কষ্ট হলেও আমাদের সকলকেই বিধিগুলো মেনে চলতে হবে। এতে করে হয়তো বা এবার আমচাষিদের একটু লোকসানই গুনতে হবে। তবুও সঠিক ভাবে আম বাজারজাত করার ক্ষেত্রে আমরা তৎপর রয়েছি। কোন প্রকার অনিয়ম আমরা বরদাস্ত করবো না।

(বিএস/এসপি/জুলাই ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test