E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলে বানের জলে ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন! 

২০২১ সেপ্টেম্বর ০১ ১৭:৪৫:৩৩
টাঙ্গাইলে বানের জলে ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন! 

মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : উজানের ঢল ও কয়েক দিনের টানা অতি বৃষ্টি এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় টাঙ্গাইল জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। আকস্মিক বন্যার ফলে শত শত পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পরেছে আর সেই সঙ্গে ডুবে যাচ্ছে কৃষকের ফসলি জমি ও বীজ তলা। অসময়ে হঠাৎ বন্যায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বানের জলে ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলায় কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে রোপা-আমন ধান রোপন করা হয়েছে। আগস্ট মাসের শুরুতেই বৃষ্টিপাতের কারণে বিল ও নিম্নাঞ্চলের জমি গুলোতে পানি হওয়ায় কৃষক তার জমিতে রোপা-আমন ধানের বীজতলা তৈরী ও পরবর্তীতে ধান রোপন করে। অপর দিকে যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে ধলেশ্বরীসহ অন্যান্য নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকের স্বপ্ন সদ্য রোপণকৃত রোপা-আমন ধান তলিয়ে গেছে । সেই সাথে উত্তরাঞ্চলের নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকার ফলে নদীর পাশ্ববর্তী এলাকায় শুরু হয়েছে ভাঙ্গন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার নাগরপুর, দেলদুয়ার, কালিহাতী, ভূঞাপুর সহ বিভিন্ন উপজেলায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। কৃষকের তৈরী বীজতলা ডুবে গিয়েছে ও সদ্য রোপনকৃত জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার বৃষ্টির পানিতে তারা রোপা-আমন ধান রোপন করেছিলেন । হঠাৎ অতি বৃষ্টিপাত আর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রোপনকৃত ধান প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্যার পানিতে ডুবে আছে।শুধু পানি বেড়ে বীজতলা ও জমির ফসলই নষ্ট হয়নি, নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিতে হয়েছে রাস্তার পাশে। পরিবার- পরিজন ও গবাদী পশু-পাখি নিয়ে মানবতার জীবন যাপন করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত । প্রতিদিনই প্রকৃতির কাছে হেরে যাচ্ছে সাধারণ কৃষকের স্বপ্ন।

জেলার নাগরপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত চাষী আয়নাল হক জানান, চলতি মৌসুমে ৯২ শতাংশ জমিতে ধান রোপন করেছি । স্যালো মেশিন দিয়ে আশেপাশের আরও প্রায় তিন একর জমিতে পানি সেচ দিয়েছি । এখন পুরো প্রজেক্ট জুড়ে পানি আর পানি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আঃ মতিন বিশ্বাস জানান, অসময়ে চলতি বন্যায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে ৪৯, বিআর ১১, ৮৭ জাতসহ বিভিন্ন জাতে উচ্চ ফলনশীল জাতের চারা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। টানা বৃষ্টি আর বন্যার কারণে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে যদি বন্যার পানি দিন দিন বাড়তে থাকলে ক্ষতির পরিমাণ ক্রমশ বাড়বে। বন্যায় কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে উপজেলা কৃষি অফিস সর্বদাই কৃষক ভাইদের পাশে আছে ।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরউপপরিচালক মোঃ আহ্সানুল বাসার জানান, পানির নিচে বেশিদিন ধরে তলিয়ে যাওয়া ধান ভালো থাকবে না তবে দ্রুত পানি সরে গেলে কিছু ধান পুনরায় গজিয়ে উঠতে পারে। আশার কথা হলো, জেলায় বা জেলার বাইরে কিছু উঁচু এলাকার বীজতলার চারা এখনও পাওয়া যাচ্ছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পানি সরে গেলে কৃষক আবারও ধান রোপন করতে পারবেন। কৃষিতে সফলতা আনতে আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষে উপজেলা কৃষি অফিসার এবং উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সর্বদাই আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কৃষকের পাশে রয়েছেন । আমাদের এলাকার অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা তৈরী করে কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আশা করছি বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ভাইদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করতে পারবো।

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test