E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাণীশংকৈলে গমের কাঁচা গাছ কেটে বিক্রি, উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা!

২০২২ ফেব্রুয়ারি ২৮ ২০:২৪:৫৫
রাণীশংকৈলে গমের কাঁচা গাছ কেটে বিক্রি, উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গবাদিপশুর খাদ্যের দামও। খৈল, খড়, ভুসিসহ দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে সবুজ ঘাসও। এতে দিশেহারা হয়ে কৃষকেরা গমের চারা কেটে তা গোখাদ্য হিসেবে বাজারে বিক্রি করছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল শিবদীঘি নেকমরদ বাজারসহ আশপাশের বাজারে এমন দৃশ্য কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে। এতে গমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় গমের আবাদ এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। এখন খেত থেকে বাড়ন্ত গমের চারা কেটে বিক্রি করা হলে উৎপাদনের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও গমের শিষ সবেমাত্র বের হয়েছে, আবার কোথাও শিষ বের হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। উপজেলার কুমোরগঞ্জ, ভবানন্দপুর, ধর্মগড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে কৃষক সেই বাড়ন্ত গমের চারা কাস্তে দিয়ে গোড়া থেকে কেটে বাঁধছেন আঁটি। তা শিবদীঘি ও নেকমরদ বাজারে বিক্রি করছেন ১০ থেকে ২০ টাকা আঁটি করে।

গমচাষিরা বলেন, গম চাষে প্রতি বিঘা জমি তৈরি, চারা রোপণ, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ খরচ, শ্রমিকের মজুরি, গম কাটা ও মাড়াই পর্যন্ত ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। আর বিঘাপ্রতি গমের ফলন হয় ৯ থেকে ১০ মণ। সেই গম বিক্রি করে বিঘায় ১০ থেকে ১৩ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। কিন্তু তাতে তেমন কোনো লাভ থাকে না। কিন্তু বর্তমানে বাজারে গবাদিপশুর খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে, পাশাপাশি প্রয়োজনের তুলনায় সবুজ ঘাসের সরবরাহও কম। এ সুযোগে গমের চারা ঘাস হিসেবে বিক্রি করে নগদ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। সার্বিক বিচারে এখান থেকে তুলনামূলক লাভ বেশি থাকছে বলে জানান তাঁরা। এ ছাড়া এখন গম তুলে নিলে জমিতে বোরো লাগানো সম্ভব। ধানের ভালো দাম থাকায় এতে করে দুদিক থেকেই লাভবান হওয়া যাবে।

গবাদিপশুর গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় ও চারণভূমির সংকটের কারণে বাজারে কাঁচা গম গাছের চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে ছাগল ও গরুর জন্য কাঁচা ঘাস হিসেবে কিনে খাওয়াচ্ছেন খামারিরা। বিক্রেতারা বলছেন ১০০ আঁটি বাজারে তুলতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে নিমেষেই। চাষিদের পাশাপাশি পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতাও দেখা গেছে কাঁচা গমের গাছ বিক্রি করতে।

একটি নছিমনে ১০০ আঁটি কাঁচা গমের গাছ বিক্রি করতে নিয়ে আসেন ধর্মগড় গ্রামের নওশাদ আলী। তিনি বলেন, নেকমরদ এলাকার এক গম চাষির দুই বিঘা কাঁচা গমের খেত তিনি কিনেছেন ২৬ হাজার টাকা দিয়ে। ১ টাকা দরে প্রতি আঁটি মজুরি দিয়ে প্রতিদিন শ্রমিকদের কাছে প্রতিদিন ১ হাজার আঁটি কেটে বাজারে বিক্রি করেন তিনি। দুই বিঘা জমিতে ৪ হাজার ২০০ আঁটি হবে। যার বাজার মূল্য ৪২ হাজার টাকা। শ্রমিকদের মজুরি দিয়েও তাঁর লাভ হবে ৮ হাজার টাকা।

কাঁচা গমের আঁটি কিনতে এসেছিলেন রাতোর গ্রামের শামসুল আলম। তিনি বলেন, বাড়িতে তিনি ছয়টি ছাগল পালন করেন। আগে এলাকায় সেগুলো নিজেরা চড়ে খেত। এখন সব খেতেই ফসল থাকায় ছাগলগুলো চড়ে খেতে পারে না। তাই গমগাছ কিনতে এসেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে গমের আবাদ হয় ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, কিন্তু চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৩০০ হেক্টরে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে এমনিতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আবাদ করা হচ্ছে। এর ওপর যদি কাঁচা অবস্থাতেই কেটে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে গম উৎপাদনে প্রভাব পড়তে পারে।

কৃষকেরা কাঁচা গমের গাছ কেটে বিক্রি যেন না করে এই জন্য তাঁদের উৎসাহ দেওয়া হবে।’ মাঠ পর্যায়ে সকলের সঙ্গে এ বিষয় কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

(এই/এএস/ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test