E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা সালথার কৃষকেরা

২০২২ আগস্ট ১২ ১৭:১০:৪৬
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা সালথার কৃষকেরা

আবু নাসের, সালথা : জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কৃষকদের মাঝে। দুশ্চিন্তার ভাঁজ এখন তাদের কঁপালে। এবার সালথার জলাশয়গুলোতে বর্ষার পানি সংকটের কারণে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কৃষকদের চরম ভোগান্তির রেশ কাটতে না কাটতেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

কৃষকরা বলছেন, সব দিক দিয়ে সংকটে আছি আমরা। মাঠে নেই পানি। রয়েছে শ্রমিক সংকট। সব ওষুধের দাম বাড়তি। এখন আবার বেড়ে গেল ডিজেলের দাম। শুধু জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পদে পদে বাড়তি খরচ বাড়বে আমাদের। কী থেকে কী করবো তা ভেবে পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা চরম ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাব।

জ্বালানি তেলের মূল্য আরেক দফা বাড়ার পর একজন ক্রেতাকে প্রতি লিটার ডিজেল-কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও পেট্রল ১৩০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর শুক্রবার সালথা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমির মাঠে গিয়ে ফসল উৎপাদন নিয়ে আলাপ হয় একাধিক কৃষকের সঙ্গে। এ সময় কৃষক আবুল কালাম, জব্বার মুন্সী, হাফেজ মোল্যা ও নুরুদ্দিন মোল্যা, বর্তমানে ফসল ফলাতে নানা সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, কৃষি নির্ভরশীল সালথা উপজেলায় যেকোনো ধরনের ফসল উৎপাদনে পদে পদে জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হয়। যেমন ডিজেল দ্বারা চালিত পাওয়ার টিলার দিয়ে প্রথমে জমি চাষ করতে হয়। তারপর শ্যালো মেশিন দিয়ে একাধিকবার সেচ দিয়ে ফলাতে হয় ফসল। এরপর উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে ভাড়া করতে হয় জ্বালানি তেল দ্বারা চালিত পরিবহন। যেকারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় কৃষি সংশ্লিষ্ট সব খাতে বাড়তি অর্থ খরচ গুণতে হচ্ছে বা হবে। বাড়তি খরচ করে ফসল উৎপাদনের পর তা ন্যায্য দামে বিক্রি করা যাবে কিনা সেই দুশ্চিন্তায়ও রয়েছি আমরা। কারণ ফসল ওঠার পর অনেক সময় উৎপাদন খরচের চেয়ে কমে পণ্য বিক্রি করতে হয়।

উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কুমারপট্টি গ্রামে কৃষক আবুল বাসার মোল্যা ও গট্টি ইউনিয়নের রঘুয়ারকান্দী গ্রামের শহিদ মিয়া বলেন, পাওয়ার টিলার দিয়ে আগে একবিঘা জমি চাষ করতে ২০০০ টাকা লাগতো। কিন্তু ডিজেলের দাম বাড়ার পর এখন তা ২৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে চাষ করতে হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে একবার সেচ দিতে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা বেশি খরচ করা লাগছে। তাছাড়া আগামীতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পরিবহনেরও বাড়তি খরচ গুণতে হবে।

এদিকে কৃষকরা জানিয়েছেন, সালথায় প্রতিবছর এই সময় সোনালী আঁশ পাট কাটার নিচু জমিগুলোতে আমন ধানের বীজ বোপনের ধুম পড়ে যেতো। অনেকে পাট জমিতে থাকতেই তার মধ্যে ধানের বীজ বোপন করতেন। তবে এবার পানি সংকটের কারণে ধানের বীজ বপন করতে পারছেন না। এবার ধানের বীজ আগে বপন করে তা থেকে চারা তৈরি করছেন। তারপর প্রথমে পাওয়ারটিলার দিয়ে জমি চাষ করে তারপর সেচ দিয়ে সেই ধানের চারা রোপণ করতে হচ্ছে। এতে তাদের ডাবল কষ্ট করতে হচ্ছে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় কৃষকদের নানা দুর্দশার কথা তুলে ধরে সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় এ বছর আমন চাষে সম্পূরক সেচ বেশি প্রয়োজন হবে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে জমি চাষ ও সেচ খরচও বাড়বে। বাড়বে পরিবহন খরচও। বিশেষ করে ডিজেলের দা বেড়ে যাওয়ায় তার প্রভাব কৃষকদের ওপর বেশি পড়বে। তবে কৃষকদের আমরা উত্তম কৃষি চর্চা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করছি। যাতে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত খরচের প্রভাবটা কাটিয়ে উঠতে পারে। তিনি আরও বলেন, সালথায় এবার ১১ হাজার ২৪৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৫ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ধান বীজ বপন এবং চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।

(এন/এসপি/আগস্ট ১২, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test