E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাটের দাম কম, কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

২০২২ সেপ্টেম্বর ১১ ১৫:৩২:৩২
পাটের দাম কম, কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

আবু নাসের হুসাইন, সালথা : সোনালী আঁশে ভরপুর ভালবাসি ফরিদপুর। পাটের উৎপাদনের সেরা হওয়ায় স্লোগানটি ফরিদপুরে চাউর রয়েছে। সারাদেশের মধ্যে সোনালী আঁশ পাট উৎপাদনে বিখ্যাত ফরিদপুর। আর ফরিদপুরের মধ্যে পাট উৎপাদনে বিখ্যাত সালথা উপজেলা। উপজেলার প্রধান অর্থকড়ী সফলই হচ্ছে সোনালী আঁশ পাট। এই দুই উপজেলা থেকে উৎপাদিত পাট দেশ ছাড়াও বিদেশের চাহিদা মেটায়। তাই এখানকার কৃষকদের ভালো থাকা নির্ভর করে কৃষির উপরে। কৃষকের যত স্বপ্ন পাটকে ঘিরেই।

তবে এবার ভরা বর্ষা মৌসুমে পানির অভাবে সঠিক সময় পাট জাগ দেয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন কৃষকরা। পরে কোন দিক না পেয়ে মাটি খুড়ে পাট জাগ দিতে বাধ্য হন তারা। এতে পাটের গুণগতমান নষ্ট হওয়ায় বদলে যায় পাটের দামও। মণপ্রতি পাটের দাম কমে গেছে ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা পর্যন্ত। ফলে পাট আবাদ শুরু থেকে বাজারজাত পর্যন্ত পদে পদে ভোগান্তী মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাদের। মোট কথা, পাটের দাম আর মান ভাল না হওয়ায় কৃষকের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেছে এবার। এমন অবস্থায় সরকারিভাবে পাট ক্রয়ের দাবি জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার কয়েক বাজারের পাটহাটা গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রির জন্য পাট বাজারে নিয়ে আসছেন কৃষকরা। দাম দেখাতে ও একটু বেশি দামে বিক্রির আশায় এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরছেন তারা। আর ব্যবসায়ীরা দেশের সোনালী এই সম্পদ পাট কিনে গুদামে স্তূপ করে সাজিয়ে রেখেছেন। তবে পাট নিয়ে বাজারজাত করতে কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা গেছে।

সালথা ও বালিয়া বাজারে আসা আজিজুল মিয়া, আবু কাইয়ুম ও বাশার মোল্যা বলেন, গত বছর যে পাট প্রতিমণ সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি করেছি। রং খারাপ হওয়ায় সেই পাট এবার সর্বোচ্চ প্রতিমণ ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা বিক্রি করছি। তাও ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছে না। খারাপ মানের পাটের প্রভাব ভাল মানের পাটেও পড়েছে এবার। ভাল মানের পাট সর্বোচ্চ ২৬০০ থেকে ৩ হাজারের টাকার উপরে বিক্রি করতে পারছি না। এতে কাঙ্খিত খরচও উঠবে না। লোকসান গুণতে হবে অনেক। পাটের দাম কম হওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলেন, পানির অভাবে ঠিকমত জাগ দিতে না পারায় পাটের রং ভাল আসেনি। তবে নদ-নদীতে যারা পাট জাগ দিতে পেরেছে তাদের পাটের মান কিছুটা ভাল হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার যদি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনতো, তাহলে কৃষকরা একটু লাভবান হতো।

পাট ব্যবসায়ী আবু মোল্যা, সজিব শেখ ও আবু তালেব বলেন, গত বছর একমণ পাট ৩৫০০ থেকে ৩৮০০ টাকা পর্যন্ত পাটের বাজার ছিল। তেল ও সারের দামও কম ছিল। এতে কৃষকরা মোটামুটি ভাবে চলতে পারছে। তবে এবার পাটের অবস্থায় খুবই খারাপ। পানির অভাবে কৃষকরা সঠিক সময় ঠিকমত পাট জাগ দিতে পারেনি। মাটি খুড়ে ও নোংরা-পচা পানি পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং কালো হয়ে গেছে। আবার তেল-সার ও দ্রব্যমূল্যের দামও বেশি। তাছাড়া রং খারাপ এসব পাট মিল মালিকরা নিতে চায় না। তারা ভাল মানের পাট নিচ্ছে। যেকারণে পাটের দাম এতো কম। এই দামে পাট বিক্রি করে কৃষকরাও তাদের খরচ উঠাতে পারবে না। আমরা ব্যবসায়ীরাও কাঙ্খিত আয় করতে পারছি না। এ অবস্থায় পাটের দাম নির্ধারণ করে দেয়াসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পাট কেনা দাবি তাদের।

জানা গেছে- সালথায় ১২ হাজার ২৪৭ হেক্টও জমিতে পাট আবাদ করা হয়, যা লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি। মোট আবাদি জমির প্রায় ৯১ শতাংশ জমি সোনালী আঁশ পাটের দখলে।

উপজেলা উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কিছুটা আমাদের দেশের পাটের উপরে পড়েছে। এরপর আমাদের দেশের বড় বড় মিলগুলো বন্ধ থাকার কারণে পাটের দাম তেমন উঠছে না। পাশাপাশি এবার পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণে একই পানিতে বারবার পাট পচানোর কারণে পাটের আঁশের গুনগত মান খারাপ হয়েছে। যেকারণে পাটের দামও কমেছে। এতে কৃষকরাও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, গার্মেন্টস ফ্যাক্টারীগুলোতে যদি সুতা তৈরি করতো তাহলে পাটের দাম অনেক বেশি পেত চাষিরা।

(এএনএইচ/এএস/সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test