E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লোকসানের মুখে সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি খামারীরা

২০২২ সেপ্টেম্বর ১৯ ১৫:১৫:৪৯
লোকসানের মুখে সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি খামারীরা

মারুফ সরকার, সিরাজগঞ্জ : মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি, ঘন ঘন লোডশেডিং ও ডিম উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে সিরাজগঞ্জের পোল্ট্রি খামারীদের। এ কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক খামার।গত ৬ মাস আগে লেয়ার মুরগীর খাদ্য বস্তা প্রতি ১৭০০-১৮০০ টাকা ছিলো। এখন সেই খাদ্য ২৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুতের লোডশেডিং এর কারনে স্টোক করে মুরগী মারা যাচ্ছে।

বেশি দামে ডিম বিক্রি করে মধ্যসত্ত্বভোগী ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। প্রান্তিক খামারীরা লোকসান গুনছেন। এজন্য প্রান্তিক খামারীরা ধংসের মুখে। ব্যবসায়ীদের দাবী সরকারী ভাবে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা মূল্য নির্ধারন করা হলে খামারীরা লাভবান হবে। তাহলে পোল্ট্রি শিল্প টিকে থাকবে।

এ বিষয়ে প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা দৈনিক বাংলা৭১কে বলছেন, খামারীদের লাভবান করতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ডিম ও মুরগীর দাম ভোক্তাদের নাগালের বাইরে গেলে ভোক্তাদের কষ্ট হয়। আবার মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি হলে খামারীদের খামার টিকে রাখা কঠিন হয়। সমন্বয় করে ডিম ও মুরগীর দাম নির্ধারন করলে সবাই উপক্রিত হবে।

সিরাজগঞ্জ পোল্ট্রি খামার মালিক সমিতি সুত্রে জানায়ায়, জেলার ৮০র দশকের শুরুতে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। বিভিন্ন সময় চড়াই-উপড়ায়ের মধ্য দিয়ে এখানে গড়ে উঠে প্রায় ৫ হাজার পোল্ট্রি খামার। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ডফ্লু এবং বন্যার কারনে সিরাজগঞ্জ জেলায় ৫ হাজার খামারের মধ্যে অর্ধেক বন্ধ রয়েছে।

শিক্ষিত কর্মহীনরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু এবং বন্যায় সব কিছু হয়ে যায় লন্ড ভন্ড। এখন এলাকার পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের দোর গোড়ায়।

বন্ধ হয়ে যাওয়া খামার এখন মানুষের বসবাস। বর্তমানে মুরগীর খাদ্যের দাম বেশি, ঘন ঘন লোডশেডিং ও ডিম উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে পোল্ট্রি খামারীদের।

রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর ) সাকলে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল ইউনিয়নের ধুকুরিয়া গ্রামের খামারী সেলিম রেজা দৈনিক বাংলা৭১কে বলেন, আমার খামারের অবস্থা ভালোই ছিলো কিন্তু এখন ভালো না। খামারে বাচ্চা উঠিয়েছিলাম ৪ হাজার ২৫০ পিচ।

এখন খামারে আছে ২ হাজার পিচ। এর কারন হচ্ছে বিভিন্ন রোগব্যধী। রানীখেত, টাইফয়েট, কলেরায় মুরগী মারা যাচ্ছে। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুৎ না থাকার কারনে স্টোক করে মুরগী মারা যাচ্ছে। যে দিন গরম বেশি থাকে বিদ্যুৎ থাকে না সে দিন গড়ে ৩০-৪০ টি মুরগী মারা যায়।

এই মারা যাওয়ার কারনে খামারে ৪ হাজার ২৫০ পিচ মুরগীর মধ্যে এখন ২ হাজার মুরগী আছে। খামারীরা সার্বিক ভাবে লোকসানে আছে। এর মূল কারন খাদ্যের দাম বেশি। আগে আমরা ৬ টাকা করে ডিম বিক্রি করেছি তখন প্রতিডিমে ১ থেকে দেড় টাকা লাভ হয়েছে।

এখন ৯টাকা করে ডিম বিক্রি করলেও আমাদের লাভ থাকে না। এই লাভ না থাকার কারনটা হচ্ছে গত বছর যে খাদ্যের দাম ছিলো ১হাজার ৮শ টাকা এখন সেই খাদ্যের দাম ৩ হাজার টাকা। খাদ্য খেয়েই ডিম দেয়। খাদ্য ছাড়া তো ডিম দেয় না।

মুরগী উৎপাদনের মূল উপাদান হচ্ছে খাদ্য। সুতরাং খাদ্যের দাম বাড়লেতো ডিমের দাম বাড়বে। এজন্য খামারীরা ভালো নেই। সরকারের কাছে দাবী জানায় ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা মূল্য নির্ধার করা হোক। তাহলে খামারীরা লাভবান হবে। খামার টিকে থাকবে।

সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের হরিনাহাটা গ্রামের খামারী জাবালা মোস্তাক দৈনিক বাংলা৭১কে বলেন, বর্তমানে খামারীরা খুবই দুরবস্তার মধ্যে রয়েছে। করোনাকালী সময় থেকে খামারীরা দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে। আমার খামারে ৮ হাজার মুরগী ছিলো।

প্রতিকুলতার কারনে খাদ্যের দাম বেশি ডিমের দাম কম। যে কারনে আমার খামারের একটি সেট খালি পড়ে আছে। লোডশেডিং একারনে সময় মত বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারনে অনেক মুরগী স্টোক করে মারা যাচ্ছে। আবার যখন বিদ্যুৎ থাকে না তখন জেনারেটর ব্যবহার করে মুরগীকে গরমের হাত থেকে রক্ষা করবো তাও সম্ভব হচ্ছে না।

এর মূল কারন হচ্ছে ডিজেলের দাম বেশি। মুরগীর বাচ্চা থেকে ডিম উৎপাদন পর্যন্ত যে পরিমান খরচ হচ্ছে তাতে খামারীদের লোকসান হচ্ছে। খামার বন্ধ রাখছে তাই।

(এমএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test