E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অনাবৃষ্টির কবলে ঝিনাইদহ, দিশেহারা কৃষক

২০২৩ মার্চ ১৫ ১৭:৫৮:১৯
অনাবৃষ্টির কবলে ঝিনাইদহ, দিশেহারা কৃষক

অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : প্রায় ৮ মাস ধরে বৃষ্টি নেই ঝিনাইদহ জেলায়। টানা এই অনাবৃষ্টির রেকর্ড আবহওয়াবিদদের ভাবিয়ে তুলেছে। একশ বছরের ইতিহাসে এমন অস্বাভাবিক খরা-অনাবৃষ্টির কবলে পড়েনি দেশ। তাও এবার আগাম খরা। সেই সাথে চৈত্র-বৈশাখের মতোই প্রখর রোদের তেজ অনুভব করা যাচ্ছে। গত নভেস্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত একটানা এই সাড়ে চার মাসে সারা দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৯১ দশমিক ৫ শতাংশই কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। অর্থাৎ বৃষ্টি ‘নেই’ হয়ে গেছে। 

আবহাওয়াবিদদের ভাষ্যমতে, খরা-অনাবৃষ্টি, তাপদাহ পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতে দীর্ঘায়িত হয়ে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে। শতবছরের মধ্যে রেকর্ড খরার ঝুঁকিতে পড়ছে সমগ্র দেশ। কৃষি জমিতে সেচের পানি ও খাবার পানির ভয়াবহ সঙ্কট আসন্ন। ইতোমধ্যে জেলার অনেক এলাকার নলকূপে পানি উঠছে না। সেচের পানির টানাটানি এবং রোদে পুড়ে ফল-ফসল, শাক-সবজি ক্ষেত বিবর্ণ খাক হয়ে যাওয়ার খবর আসছে। অনাবৃষ্টির পরিস্থিতিতে জেলার কৃষি খাতে পানির সঙ্কট চরম আকার ধারণ করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। মাছ চাষে পানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। পুকুর মালিকরা ডিজেল ও বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে অনবরত পানি দিচ্ছেন। এতে মাছ চাষে ঝুকির সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে দীর্ঘমেয়াদি অনাবৃষ্টির কারণে ধুলোবালির রাজত্ব কায়েম হয়েছে। রাস্তায় ধুলোর কারণে যেমন হাটাচলা করা যাচ্ছে না, তেমনি রাস্তার ধুলো ঘরে উঠছে। এতে জনস্বাস্থ্যের উপর পড়েছে ক্ষতিকর প্রভাব। জ্বর-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে। ফল-ফসলেও বেড়েছে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ।

আবহাওয়া ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামুদ্রিক ও ভূপৃষ্ঠের আবহাওয়ায় ‘লা নিনা’ থেকে পালাবদলে ‘এল নিনো’র ধাক্কা অর্থাৎ ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাতের ধারা পাল্টে গিয়ে খরতাপের দিকে ধাবিত হওয়ার কারণেই অকালে খরা-অনাবৃষ্টি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর পেছনে দায়ী আবহাওয়া-জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব। এ অবস্থায় আবহাওয়ার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। রুক্ষ-রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে পরিবেশ ও প্রকৃতি। এ বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে তাপদাহ হতে পারে আরও অসহনীয়। বাড়বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ।

বসন্ত ঋতুতেই আগাম খরা-অনাবৃষ্টির কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্টক হ্রাস পাচ্ছে। দ্রুত নিচের দিকেই নামছে পানির স্তর। কোথাও ১০ থেকে ১৫ ফুট, কোথাও তা ৩০ থেকে ৫০ ফুটও নিচে নেমে গেছে। নলকূপে পানি উঠছে না। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি রিচার্জ হচ্ছে না। ভূ-উপরিভাগে নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওড়, জলাশয়, পুকুরসহ পানির উৎসগুলো শুকিয়ে তলানিতে ঠেকেছে। অনেক জায়গায় নদ-নদী মরা খালে পরিণত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন বসন্তকালেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রির সেলসিয়াসের আশপাশে উঠে গেছে।

খরা ও অনাবৃষ্টি নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আজগার আলী জানান, অনাবৃষ্টির কারণে ঝিনাইদহের কৃষকরা আউস ধানের বীজতলা তৈরী করতে পারছে না। এছাড়া তিল, মুগ ও পাট চাষে ঝুকি সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে ফল-ফসল, ক্ষেত-খামার, মাছ চাষসহ নানা ক্ষেত্রে সমস্য দেখা দিয়েছে। ভূ-উপরিভাগের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের চাপ বেড়ে গেছে। এরফলে মাটির নিচে পানির স্টক কমে আসছে।

(একে/এসপি/মার্চ ১৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test