E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জলাশয়ের অভাবে পাট পচাতে ব্যয় বাড়ছে

২০২৩ জুলাই ২৩ ১৯:৩২:০৪
জলাশয়ের অভাবে পাট পচাতে ব্যয় বাড়ছে

প্রসেনজিৎ বিশ্বাস, নগরকান্দা : ফরিদপুরের নগরকান্দা-সালথায় এবার পাটের ভালো ফলন হলেও পানি সঙ্কটে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। একদিকে পাটগাছ বড় হওয়ার পর পানির অভাবে অনেক স্থানে পাটগাছের পাতা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় ঘোড়ার পিঠে করে কাঁচা পাট সরবরাহ করছেন।

অন্যদিকে বৃষ্টির অভাবে পাট ক্ষেতের পাশের ডোবা গুলো পানি শূন্য। ফলে পাটগাছ কেটে পচাতে তাদেরকে দূরের জলাশয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে কৃষকের খরচও বেড়ে যাচ্ছে। পাটের উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি পেলেও বাজারে এসব পাট বিক্রি করে লাভের মুখ দেখতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ও রয়েছে শঙ্কিত এই এলাকার পাট চাষিরা।

ফরিদপুরের ব্রান্ডিং পণ্য এই সোনালী আঁশ পাট। ‘সোনালী আঁশে ভরপুর, ভালোবাসি ফরিদপুর’এটি এ জেলার প্রশাসনিক শ্লোগান।

দেশে পাট উৎপাদনে সেরা জেলার নগরকান্দা-সালথা উপজেলা সহ অন্যান্য উপজেলা গুলোতেও কম বেশি প্রচুর পরিমাণ পাট উৎপাদিত হয়।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবছর উপজেলায় প্রায় ১১ হাজার ৭ শো হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিকটন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সালথা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ তাওহীদ মৃধা জানান, এবছরও উপজেলায় ১২ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৩৬ হাজার মেট্রিকটন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

সরেজমিনে নগরকান্দা উপজেলা পরিদর্শনকরে দেখা গেছে, প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামে মাঠের পর মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে সোনালী আঁশ পাট।

স্থায়ীয় কৃষকেরা জানান, এ বছর জমিতে পাটের বীজ বপনের পরপরই কয়েক দফায় প্রয়োজনীয় বৃষ্টি হয়েছিলো। এতে পাটচাষের শুরুর দিকে কৃষককে সেচের জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়নি।গত বছরের তুলনায় এ বছরে ছটকা ও বিছার উপদ্রব কম ছিল পাটের পাতাকে তেমন ক্ষতি করতে পারে নি। তবে শেষের দিকে এসে বৃষ্টি কমে গেছে এতে পাটচাষে ক্ষতি হচ্ছে।

উপজেলার পুরাপাড়া ইউনিয়নের দফা ও বেতাল গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ক্ষেতের পাটগাছের উপরের দিকে পাতা মরে গেছে। জমির মাটি শুকিয়ে গেছে।

উপজেলার নগরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মুন্নু মিয়া জানান, এবছর বৃষ্টি কম হওয়ায় খালে-বিলে পানি নেই। প্রচন্ড রোদে পাটগাছ পরিপক্ক হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। পাট কেটে কোথায় জাগ দিবো। অনেক চাষি পাট কেটে মাথায় করে নিয়ে যেয়ে দূরবর্তী জলাশয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

একই এলাকার কবির হোসেন নামে আরেকজন কৃষক বলেন, এ কার পক্ষেতো এতো পাট কেটে দূরের খালে নেয়া সম্ভব না। এজন্য অতিরিক্ত লোক লাগবে। অতিরিক্ত শ্রমিক দিয়ে পাট কেটে জলাশয়ে নিতে অতিরিক্ত খরচ হবে। এক বিঘা জমির পাট কেটে খালে নিতে হলে অতিরিক্ত ২হাজার থেকে ২৫শ’ টাকা খরচ হবে। কিন্তু পাটের দাম কি বাড়বে তাতে?

তাদের অভিযোগ, অনেক স্থানে সুইস গেট আটকে রাখার জন্য খালে পানি আসেনা। এতে তারা পাট জাগ দেয়ার পানি পান না সময় মতো।সুইস গেটগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অবমুক্তকরণ করে দেওয়ার জন্য দাবি জানান।

পাটগাছ ভালোভাবে জাগ দিতে না পারলে আঁশের মান ভালো হয় না। গত বছর মৌসুমের শুরুর দিকে পাটের মন ৩ হাজার ৬শ' টাকা পর্যন্ত পৌঁছালেও পরে দরপতন হয়। দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় এক মণ পাট বিক্রি হয়। এবার পাট জাগে খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষককে পাট আবাদে অন্যান্য খাতেও বেশি খরচ করতে হয়েছে বলে কৃষকেরা জানালেন।

কৃষকের দাবি, চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় এক মণ পাট বিক্রি করতে পারলে তাদের ভালো লাভ হবে।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তিলক কুমার ঘোষ বলেন, এবার আবহওয়া অনুকূলে থাকায় নগরকান্দা উপজেলায় পাটের আবাদ খুবই ভালো হয়েছে। এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিকটন পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।

অবশ্য মৌসুমের শেষের দিকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় পাট জাগ দিতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এক্ষেত্রে পাটচাষীদের ‘রিবনিং’ ও ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করার পরামর্শ দেই। তবে তারা এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত নন।

(পিবি/এসপি/জুলাই ২৩, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test