E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁ অঞ্চলে বৃষ্টি নেই, আমন জমি ফেটে চৌচির

২০২৩ জুলাই ২৫ ১৮:২৫:৪৯
নওগাঁ অঞ্চলে বৃষ্টি নেই, আমন জমি ফেটে চৌচির

নওগাঁ প্রতিনিধি : বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণেই ভারী মৌসুমী বৃষ্টিপাত হয়। বর্ষা যাই যাই করলেও ধান উৎপাদনে সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত উত্তরের নওগাঁ জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টির দেখা নেই। ঝড়ছেনা প্রয়োজনীয় বৃষ্টি। আমন আবাদের জন্য জমি তৈরী ও জমিতে লাগানো চারা বাঁচাতে এখন কৃষকের ভরসা ভূগর্ভস্থ পানি। সেচনির্ভর আমন চাষে খরচ বাড়ছে কৃষকের।  এতে আমন চাষ ব্যাহত হবার আশংকা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ১১ উপজেলার কমবেশি সব এলাকাতেই এবার খরার কবলে পড়েছে আমন। এর মধ্যে নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা ও মহাদেবপুর উপজেলার অবস্থা বেশি খারাপ। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকেরা গভীর-অগভীর নলকুপ চালু করে আমনের চারা লাগাচ্ছেন। এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ কাজও ব্যাহত হচ্ছে। সঠিক সময়ে জমিতে সেচ দিতে না পারায় আমনের ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে ধানের চারা লাগানো হয়েছে। সেচের জন্য মাঠে মাঠে ৪ হাজার ৮৬৮টি গভীর নলকূপ, ৪৮ হাজার ৭৯টি অভীর নলকূপ ও ২ হাজার ২২৭টি এলএলপি (লো লিফট পাম্প) সেচযন্ত্র রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় ৫৫ হাজার ১৭৪টি সেচযন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪৯৫টি বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্র। বাকি ৩৭ হাজার ৬৭৯টি সেচযন্ত্র ডিজেলচালিত। খরা মোকাবিলায় বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের প্রায় সবগুলোই চালু রয়েছে।

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন এক বিঘা জমিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ দিতে বর্তমানে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ছে। আমনের চারা লাগানোর জন্য জমি প্রস্তুত ও খরার কবলে পড়া আমনের চারা বাঁচাতে ইতোমধ্যে কমপক্ষে দুইবার সেচ দিতে হয়েছে। এই মৌসুমে এভাবে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত চললে কমপেক্ষ আরও ছয়বার সেচ দিতে হবে। সেই হিসাবে জেলার ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর আমনের ফসল রক্ষায় এবার সেচের খরচ বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

কৃষকরা বলছেন, জুনের শেষ সপ্তাহ ও জুলাইয়ের প্রথম চার-পাঁচ দিন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছিল। মাঠের অনেক জমিতে পানিও জমে গিয়েছিল। কিন্তু তখন জমি প্রস্তুত না হওয়ায় ও বীজতলার চারার বয়স কম থাকায় কৃষকরা ধানের চারা লাগাতে পারেনি। সাধারণত জুলাইয়ের এক-দুই সপ্তাহ পর থেকে আগস্টের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমনের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। এখন বৃষ্টির দরকার, কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। গত ১৫-২০ দিন ধরে নওগাঁয় ভারী বৃষ্টি হয়নি। এই সময়ে কখনো টিপটিপ, কখনো একপশলা বৃষ্টি হলেও বর্ষানির্ভর আমন চাষের জন্য তা যথেষ্ট নয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হলেও আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে এখনই অতটা চিন্তিত হওয়ার কারণ দেখছি না। আমনের মৌসুম কেবলই শুরু হয়েছে। পুরো আগস্ট মাস জুড়েই আমনের চারা লাগানো যাবে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে চারা লাগানো হয়েছে। আশা করছি, সঠিক সময়েই আমনের চারা লাগানো সম্পন্ন হবে। তবে যেসব কৃষক সেচ দিয়ে চাষাবাদ করছে তাঁদের খরচ বাড়বে। গত বছরেও মৌসুমের শুরুতে তেমন বৃষ্টি ছিল না। তবে শেষের দিকে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল। আশা করছি, এবারেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে।

(বিএস/এসপি/জুলাই ২৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test