E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জলাবদ্ধ অনাবাদী জমিতে ভাসমান কৃষির আবাদ বাড়ছে

২০২৩ আগস্ট ১২ ১৪:২৪:৫১
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জলাবদ্ধ অনাবাদী জমিতে ভাসমান কৃষির আবাদ বাড়ছে

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত একটি উপজেলা। এ উপজেলার অধিকাংশ জমি বছরের ৮ মাস জলমগ্ন থাকে। ওই জলে জন্ম নেয় জলজ জঞ্জাল কচুরিপানা। এ মৌসুমে কৃষকের কোন কাজ থাকে না। তাই কৃষক জলজ জঞ্জাল কচুরিপানা দিয়ে পানির ওপর ভাসমান বেড তৈরী করেন। কচুরিপানা পচে গেলে এসব বেড সবজি চাষের উপযোগি হয়। তখন কৃষক এখানে শাক, সবজি, ফল ও মসলার আবাদ করেন। জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাসমান বেডে চলে চাষাবাদ। প্রতি বছরই  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ভাসমান বেডে সবজি, ফল ও সমলা চাষ  সম্প্রসারিত হচ্ছে। এরমধ্য দিয়ে জলাবদ্ধ অনাবদী জমি চাষাবাদের আওতায় আসছে। দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতিশীল হচ্ছে কৃষি অর্থনীতির চাকা।

ভাসমান বেডে চাষাবাদে রাসায়নিক সার বা কীট নাশক ব্যবহার করা হয় না। তাই ভাসমান বেডের সবজি, ফল ও মসলা মানব দেহের জন্য নিরাপদ। ভাসমান বেডে নিরাপদ ফসল উৎপাদন করে কৃষক নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পুরণ করছেন। বাড়তি ফসল বাজারে বিক্রি করে অর্থ পাচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় জলাবদ্ধ অনাবদী কৃষি জমি বেশি। এ জমি চাষাবাদের আওয়াতায় আনতে সরকার ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ এবং জনপ্রিয় করণ প্রকল্প গ্রহন করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় আমরা গত বছর ২৬ একরে ভাসমান বেড করে দিয়েছিলাম। এই বছর প্রায় ৩০ একরে এই বেডে চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা হবে। এখান থেকে ৫৪০ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে । যার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ১ হাজার কৃষক এ চাষাবাদর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। আমরা প্রকল্প থেকে কৃষকদের বীজ, সার, ট্রে, নেট সহ ভাসমান বেড তৈরীর উপকরণ সহায়তা দিয়েছে।

এছাড়া তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভাসমান কৃষি এলাকায় গিয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ভাসমান বেডে শাক, সবজি, ফল ও মসলা আবাদ করে কৃষক নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পুরণ করছেন। বাড়তি ফসল বাজারে বিক্রি করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এভাবে জলাবদ্ধ অনাবদী জমি চাষাবাদের আওতায় আসছে। দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতিশীল হচ্ছে কৃষি অর্থনীতির চাকা।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, ভাসমান বেডে ফসল উৎপাদনে কোন রাসায়নিক সার বা কীট নাশক ব্যবহার হয় না। তাই ভাসমান বেডের ফসল মানব দেহের জন্য নিরাপদ। ভাসমান বেডের শাক, সবজি, ফল খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে ভাসমান বেডের সবজি ও ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভাসমান বেডের ফসল বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়।

তাই কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান হন। এজন্য গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষক ভাসমান বেডে ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি গ্রহন করেছে। প্রতি বছরই এ পদ্ধতির চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ছিলনা গ্রামের কৃষাণী যশোদা ওঝা (৪৮) বলেন, কৃষি অফিসের সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ নিয়ে ১০ টি ভাসমান বেড করেছি। এ বেড থেকে ৮ হাজার টাকার লাল শাক বিক্রি করেছি। আগামী ৪/৫ দিরে মধ্যে আরো ৫ হাজার টাকার লাল শাক বিক্রি করব। এছাড়া ওই বেডে ঘি-কাঞ্চন শাক, পাট শাক, ঢ্যাড়শ, কচুর চাষাবাদ করেছি। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এখান থেকে অন্তত ১ লাখ টাকার শাক, সবজি, ফল ও হলুদ বিক্রি করব। ১০টি বেড থেকে খরচ বাদে আয় হবে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া এখানে উৎপাদিত শাক সবজি আমরা খাচ্ছি ও আত্মীয় স্বজনদের দিচ্ছি।

একই গ্রামের কৃষক প্রদীপ বিশ্বাস (৪৫) বলেন, ১০ বছর ধরে ভাষমান বেডে ফসল উৎপাদন করছি। গত বছর ৪৫টি বেড করেছিলাম। এ বছর কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি ৯০টি বেড করেছি। এখানে লাল শাক, ঢ্যাড়শ, সাম্মাম সহ বিভিন্ন শাক, সবজি ও ফলের আবাদ করছি। এখানে উৎপাদিত ফসলে আমরা কোন কেমিক্যাল সার বা কীট নাশক ব্যবহার করি না। তাই বাজারে নিরাপদ এ ফসল বেশি দামে বিক্রি করতে পারি। এ সময়ে আমাদের কোন কাজ থাকে না । তাই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আমরা জলাবদ্ধ আনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় আনি। এতে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আমাদের হাতে ফসল বিক্রির নগদ অর্থ আসে। আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সঠিকভাবে চাষাবাদ করতে পারলে এ পদ্ধতি খুবই লাভ জনক। এ সবজি বিদেশে রফতানী করতে পারলে আমরা অধিক দাম পেয়ে আরো বেশি লাভবান হতে পারব।

ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ এবং জনপ্রিয় করণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ভসমান বেডে চাষ পদ্ধতির মাধ্যমে জলাবদ্ধ অনাবদী জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এতে দেশে ফসলের উৎপাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমরা ভাসমান কৃষির অধুনিক চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে কৃষকের কাছে প্রযুক্তি হস্তান্তর করছি। কৃষক এ নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করে শাক, সবজির পাশাপাশি ভাসমান বেডে উচ্চ মূল্যের ফসল উৎপাদন করছেন। এতে তারা আয় বৃদ্ধি করতে পারছেন। এ পদ্ধতির চাষাবাদ আমাদের কৃষিকে আরো সমৃদ্ধ করছে।

(এমএস/এএস/আগস্ট ১২, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test