E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলে সোনালি আঁশে কৃষকের মুখে হাসি

২০২৩ আগস্ট ৩১ ১৮:১৬:২৬
টাঙ্গাইলে সোনালি আঁশে কৃষকের মুখে হাসি

মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে ফের পাটচাষ বাড়ছে। এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাটের ফলন বেশি হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলায় এ বছর পাটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল ১৮ হাজার ৫০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ১৯ হাজার ২০ হেক্টর। এবার ৯৭০ হেক্টর জমিতে পাট বেশি উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া গতবছরের তুলনায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি পাট চাষ হয়েছে।

টাঙ্গাইলে চলতি মৌসুমে পাটের ফলন বেশি হওয়াসহ দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। সোনালি আঁশ আর রুপালি কাঠি বিক্রি করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এ বছর পাটচাষে বেশি ঝুঁকেছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও মাটি চাষের উপযুক্ত হওয়ায় পাটচাষে সফল হচ্ছেন কৃষক। জেলার টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার, নাগরপুর, বাসাইল, সখীপুর উপজেলায় শুরু হয়েছে জমি থেকে পাট কাটা কার্যক্রম। চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ ব্যস্ত জমি থেকে পাট কাটায়, কেউবা ব্যস্ত পানিতে জাগ দেওয়ায়, কেউবা ব্যস্ত পাট থেকে আঁশ ছাড়াতে। সব মিলিয়ে এখন গ্রামাঞ্চলে চলছে পাটের মহাযজ্ঞ।

ফলন ভালো হওয়ায় খুশি চাষিরা। বাজারে পাটের দাম বেশি থাকায় চাষিরা এবার অধিক লাভের আশা করছেন। পাটের আঁশ বিক্রি করে যেমন কৃষক টাকা পায় তেমনি পাটের কাঠি জ্বালানি হিসেবে, ঘরের বেড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়। ধীরে ধীরে আবার সোনালী আঁশের রাজত্ব ফিরে আসছে এ জেলায়।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পয়লা গ্রামের কৃষক শাজাহান মিয়া বলেন, এবার ৩২ শতাংশ জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এতে প্রায় ১০ মণ পাট পাবো। পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কিছুদিন আগে পাটের মণ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা ছিল। এখন বাজার কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার টাকা। এছাড়া পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা বোঝা (একশ আটি)।

তিনি আরও বলেন, এবার আমার খরচ বেশি হওয়ায় লাভ কম হবে। ৩২ শতাংশ জমিতে ২০ জন শ্রমিক লেগেছে। প্রত্যেক শ্রমিকের মজুরি ছিল সাড়ে ৪০০ টাকা।

দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটি ইউনিয়নের পাট চাষি রতন বলেন, এ বছর আমি তিন বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এ আবাদ করতে ও পাট জাগ দিয়ে শুকিয়ে বিক্রি করা পর্যন্ত আমার প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় আমার পাট হয়েছে ৯ মণ। এ বছর প্রতি মণ পাটের দাম ২৬০০-২৭০০ টাকা দরে আমি তিন বিঘায় ৭২ হাজার ৯০০ টাকার পাট বিক্রি করেছি। খরচ বাদ দিয়ে আমার ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা লাভ হয়েছে। তবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে ভীষণ কষ্ট পোহাতে হয়েছে আমাদের। পানি স্বল্পতায় পাট নিয়ে ভোগান্তির কমতি ছিলো না। খরচও হয়েছে। শ্রমিক দিয়ে নদীর ডোবায় পাট জাগ দেওয়া আর আঁশ ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে খরচ অনেক বেশি।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সব সময় আমাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আগামীতে আমি আরও জমিতে পাটের আবাদ বাড়াবো।

ওই এলাকার কৃষক আলী হোসেন বলেন, এ বছর আমি পাঁচ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। শুরুর দিকে পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া খুব কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এখন পানি আসায় পাট জাগ দেওয়া সহজ হয়েছে। আমি এখন পর্যন্ত কিছু পাট বিক্রি করেছি ৩ হাজার টাকা মণ দরে। এখন দাম কিছুটা ভালো। আর ১০-১৫ দিন পর আমার পাটগুলো বিক্রির উপযোগী হবে। এ রকম দাম থাকলে আমি লাভবান হবো।

দেলদুয়ার উপজেলার ছিলিমপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী মাহিম মিয়া বলেন, আমরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন কারখানায় বিক্রি করি। এবছর ২৫০০-২৭০০ টাকা মণ দরে পাট কিনছি। মণে ৫০-৬০ টাকা দরে লাভ করে বিভিন্ন কারখানায় বিক্রি করছি। আমাদের এ বাজারে প্রতি শুক্রবার হাট বসে। প্রতি হাটে প্রায় ১ হাজার মণ পাট কেনাবেচা হয়।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে পাটের ভালো ফলন হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। পাট আবাদের সময় আমরা দেখি ভারতীয় বীজের প্রতি কৃষকের চাহিদা বেশি থাকে। বিজেআরআই-৮ যেটা রবি-১ নামে পরিচিত। আমরা এবছর রবি-১ জাতের বীজ বেশি সরবরাহ করেছি। দেশীয় পাটের মধ্যে এ জাতটি সবচেয়ে ভালো। এ জাতটি এবার প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা কৃষকদের পাট চাষে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগতভাবে সহযোগিতা দিয়ে জেলায় আবাদ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। পাটের বাজার মূল্য বেশি থাকায় পাটচাষে দিনদিন আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের।

(এসএম/এসপি/আগস্ট ৩১, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test