E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলে অতিথি ফসল হিসেবে প্রশংসা কুড়াচ্ছে কফি

২০২৩ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৮:৩১:৩২
টাঙ্গাইলে অতিথি ফসল হিসেবে প্রশংসা কুড়াচ্ছে কফি

মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : পানীয় হিসেবে কফি এখন আর ততটা অপরিচিত নয়। পানীয় ও চকলেট তৈরির উপকরণ হিসেবে সারা বিশ্বেই কফির জনপ্রিয়তা রয়েছে। বাংলাদেশেও জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আগে যেখানে আপ্যায়নে চা ব্যবহৃত হতো এখন অনেকেই কফি দিয়ে অতিথি আপ্যায়নের পাশাপাশি নিজেরাও পান করছেন। এজন্য দিনদিন শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বাড়ছে পানীয় হিসেবে কফির চাহিদা।

ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, ইথিওপিয়া, মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু এলাকাসহ বিভিন্ন দেশই কফি উৎপাদন হয়। বাংলাদেশেও এই পণ্যটি আমদানি করা হয়। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের লাল মাটিতে কফি চাষ শুরু হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে। কফি চাষের জন্য মধুপুরের মাটি, জলবায়ু বিশেষ উপযোগী হওয়ায় এ ফসলটি চাষ করে সফল হয়েছেন উপজেলার মহিষমারা গ্রামের ছানোয়ার হোসেন।

ছানোয়ার হোসেন ২০১৭ সালে শখের বশে কফি চাষ শুরু করেন। প্রথমে রাঙামাটি জেলার রায়খালী থেকে ২০০টি চারা সংগ্রহ করে এই ফসলটি আবাদ করেন। সফলতা আসায় এখন তিনি গড়ে তুলেছেন কফির বাগান। প্রায় দুই বিঘা জমিতে রয়েছে প্রায় ৬০০ পরিপক্ব কফির গাছ। প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় কফির ফল ঝুলতে দেখা যায়। এ যেন কফির রাজ্য।

মধুপুরে ‘অ্যারাবিক’ ও ‘রোবাস্তা’ দুই প্রজাতির কফি পরীক্ষামূলক চাষে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। ফলে আনারসের পাশাপাশি কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি গবেষকরা।

গবেষকরা জানান, লালচে হয়ে যাওয়া কফির ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করে প্রথমে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হয়। তারপর লম্বা সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। একটু নরম হওয়ার পর কফির ওপরের চামড়া ছাড়িয়ে নিতে হয়। রোদে শুকিয়ে নেওয়ার পর কফি খোসাসহ প্রতি কেজি বিক্রি হয় এক হাজার টাকায়। একটি গাছ থেকে বছরে ৫ কেজি কফি ফল পাওয়া যায়। ফলন দেওয়া শুরু করলে একটানা ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত কফি পাওয়া যায় গাছগুলো থেকে।

স্থানীয়রা জানান, ভূ-প্রকৃতি ও কৃষিশস্যের এক বৈচিত্র্যময় অঞ্চল মধুপুর গড়। টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলার অংশ নিয়ে গঠিত এ লাল মাটির গড়। এখানে নতুন অতিথি ফসল হিসেবে সুনাম কুড়াচ্ছে কফি। মধুপুর গড় অঞ্চলের মাটি, ভূ-প্রকৃতি, আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতাশক্তি ভালো থাকার কারণে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাজুবাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫০ জন কৃষকদের মাধ্যমে মধুপুরে ২৫ হেক্টর জমিতে কফি চাষ হয়েছে। এখন ব্যাপকহারে ছড়িয়েছে কফি চাষ। পৃথিবীতে ৬০ প্রজাতির কফি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে দুই রকমের কফির চাষ রয়েছে। এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য এরাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রোবাস্টা জাতের কফি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বেশি উপযোগী। যে কারণে মধুপুর গড়ের আবহাওয়ায় এর সম্প্রসারণ সম্ভব।

সরেজমিনে কফি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কফির চারাগুলো দেখতে কিছুটা দেবদারু চারার মতো। প্রতিটি গাছে লতিয়ে রয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ কফির ফল। যা এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করেছে। কফির পাকা ফল টকটকে লাল, আবার কোনোটা কাঁচা হলুদের মতো।

কফি চাষী ছানোয়ার হোসেন জানান, মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি পরিপক্ব গাছে ফুল ধরা শুরু হয়। মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুটি গুটি ফলে পরিণত হয়। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফল পরিপক্বতা লাভ করে। পরে এগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাজারজাত ও কফি পান করার জন্য উপযোগী করতে মেশিনের মাধ্যমে কফিবীজ গুঁড়া করে নিতে হয়। আবার কফির বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় বলেও জানান কৃষকরা।

ফলন ভালো হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গাছ প্রতি বছরে পাঁচ কেজি কফি পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে কফির দাম নির্ধারিত না থাকলেও কৃষক ছানোয়ার হোসেন গ্রিন কফি দেড় হাজার টাকা ও প্রসেসিং করা কফি আড়াই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন বলে জানান।

ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘পাঁচ বছরে আমার প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমি পাঁচ লাখ টাকার কফি বিক্রি করেছি। এই কফি প্রসাধনী কোম্পানি ও অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকি। একটা কফির মধ্যে ১৮ প্রকারের স্বাদ ও গন্ধ আছে। কফি প্রক্রিয়াজাত করাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমি কফি প্রক্রিয়াজাত করার মেশিন কিনেছি। কফিকে বড় একটি শিল্পে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন আছে আমার।’

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল জানান, মধুপুরের মাটির উর্বরতা শক্তি কফি চাষের জন্য উপযোগী। বৃষ্টিপাত মাটির গঠন বিন্যাস মিলে গড় এলাকার লাল মাটিতে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ এলাকায় সহজে বন্যার পানি ওঠে না। তেমনি খড়াও হয় না। এলাকায় কাজু বাদাম ও কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫০ জন কৃষকের ২৫ হেক্টর জমিতে কফি চাষ শুরু হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পর্যায়ক্রমে এ এলাকায় কফি চাষ সম্প্রসারণ ও সফলতার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন। কৃষকরা যাতে চাষে সফলতা পান, সেজন্য প্রশিক্ষণসহ প্রকল্প অনুযায়ী সহযোগিতা করা হচ্ছে।

(এসএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test