E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

দিনাজপুরে রঙিন ফুলকপি চাষে বাজিমাত

২০২৪ ফেব্রুয়ারি ০৮ ১৮:৪৭:১৬
দিনাজপুরে রঙিন ফুলকপি চাষে বাজিমাত

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : সবুজ পাতার ভেতর পিংক বেগুনী কোথাও হলুদ রং। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সুন্দর কোন ফুল ফুটে আছে। তবে এটা ফুল নয়। শীতকালীন সবজি ফুলকপির ক্ষেত। মনোরম এই দৃশ্য চোখে পড়বে দিনাজপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। কৃষি বিভাগের পাশাপাশি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ'র সহায়তায় মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকের উদ্যোগে দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় বিস্তৃর্ণ ক্ষেত জুড়ে এই রঙিন বাঁধাকপি চাষ।  চাষে পোকা দমনে জৈব বালাইনাশক ফরোমন ফাঁদ ও হলুদ ট্যাপ ব্যবহার। ফলনও বেশ ভালো। বাজারে ব্যাপক চাহিদা, দামও ভালো। পাইকারেরা এসে ক্ষেত থেকেই নিয়ে যাচ্ছে ফুলকপি।স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি রঙিন  ফুলকপি  বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। 

কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ'র সহায়তায় মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকের উদ্যোগে দিনাজপুরের সদর উপজেলার দিঘন, জংগলপাড়া ও মহব্বতপুরের বিস্তৃর্ণ ক্ষেত জুড়ে ব্যতিক্রমী শীতকালীন সবজি রঙিন ফুলকপি চাষ করেছে কৃষকরা। কোনোটি হলুদ, কোনোটি পিংক-বেগুনি। আর এসব ফুলকপি কোনও প্রকার কীটনাশক ছাড়াই জৈব বালাইনাশক ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারেই এই ফুলকপি করা হচ্ছে।

শেখপুরা ইউনিয়নের দিঘইন জংগলপাড়া গ্রামের কৃষক মো. আলমগীর জানালেন, 'গতবছর তিনি পরীক্ষামূলকভাবে তার ২০ শতক জমিতে ক্যারোটিন জাতের রঙিন ফুলকপি চাষ করে ব্যাপক লাভবান হন। তাই এবছর আড়াই বিঘা জমিতে চাষ করেছেন এই রঙিন ফুলকপি। এবার ক্যারোটিনের পাশাপাশি ইয়োলো স্টার (হলুদ) ও ভেনেটিনা (পিংক) জাতের রঙিন ফুলকপি চাষ করেছি। বাম্পার ফলন হয়েছে। কোনও রোগ বালাই নেই, খরচ কম। লাভ বেশি।'

সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউপির মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক রাশেদুল ইসলাম জানালেন, 'কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ'র সহায়তায় মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকের কাছে বিনামুল্যে বীজ পেয়ে তিনি দেড় বিঘা জমিতে এই রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি। শুধুমাত্র জৈব বালাইনাশক ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারেই চাষ করেছি,এই ফুলকপি। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাইকার ক্ষেত থেকেই ফুলকপি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দামও ভালো।'

বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউপির দামাইক্ষেত্র গ্রামের কৃষক নির্মল চন্দ্র রায় জানান, 'রঙিন কপি এবার পরীক্ষামূলকভাবে ২০ শতক জমিতে চাষ করেছি। ব্যাপক ফলন হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছি। প্রতিপিস কপি বাজারে ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। ৩২ হাজার টাকার কপি বিক্রয় করেছি। অন্য কপির তুলনায় রঙিন কপির চাহিদা থাকায় এখন যা আছে খরচ বাদ দিয়ে বেশ লাভ হবে। '

কৃষক ইমতিয়াজ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। চাষে পোকা দমনে ফরোমন ফাঁদ ও হলুদ ট্যাপ ব্যবহার করে ২২ শতক জমিতে প্রায় দেড় হাজার কপি হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকা। বাজারে প্রতিটি কপি ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করছি। এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকার কপি বিক্রি করেছি। আরো আছে।লোকজন রঙিন জাতের কপি কিনতে বেশ আগ্রহী। অল্প টাকা খরচ করে আমি বেশ লাভ পেয়েছি। আগামীতে আরও বেশি জমিতে এ জাতের কপির চাষ করবো।'

মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু রায়হান জানান, 'জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ'র সহায়তায় মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকের সার্বিক বাস্তবায়নে প্রথমবারের মতো রঙিন ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাষ হয়েছে। প্রথমবার চাষ করেই সফলতা পেয়েছেন কৃষক অনেক কৃষক। তাদের সফলতা দেখে অন্যকৃষকরাও এ জাতের কপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ক্ষেতে কোনো প্রকার কীটনাশক ও সার প্রয়োগ না করে কেবল জৈব পদ্ধতিতে বালাইনাশক ফরোমন ফাঁদ ও হলুদ ট্যাপ ব্যবহার। ফলনও বেশ ভালো। বাজারে ব্যাপক চাহিদা, দামও ভালো। পাইকারেরা এসে ক্ষেত থেকেই নিয়ে যাচ্ছে ফুলকপি। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি রঙিন ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। রঙিন ফুলকপি ভেষজগুণ সম্পন্ন একটি সবজি। স্বাদেও ভালো। সাধারণ ফুলকপির তুলনায় রঙিন ফুলকপিতে ২৫ শতাংশের বেশি ক্যারোটিন রয়েছে। যা ত্বক ও চোখকে ভালো রাখে। এটি কোলাজেন ধ্বংস করে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।'

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান জানান, টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছর থেকে জেলায় রঙিন ফুলকপি, চাষ হচ্ছে। চাষ করে সফলতা পেয়েছেন অনেক কৃষক। বাজারে ভাল চাহিদা থাকায় আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে রঙিন জাতের এই ফুলকপির চাষ বাড়বে। অন্য কৃষকরাও এ জাতের রঙিন ফুলকপি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর মধ্যে ভিটামিন এ, সি এবং কেসহ বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন রয়েছে। এতে রয়েছে মিনারেলস, পটাসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। সেই সাথে এ ফুলকপিতে প্রচুর পরিমাণে বেটা ক্যারোটিন যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

দিনাজপুর অঞ্চলের টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আবুরেজা মো. আসাদুজ্জামান জানান, 'টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের সহায়তায় বিভিন্ন উচ্চ মূল্যের সবজি যেমন স্কোয়াশ, ক্যাপসিকাম, রঙিন ফুলকপি, রঙিন বাঁধাকপি, ব্রকলি আবাদ প্রদর্শনী কৃষকদের প্রদান করা হয়েছে। এ বছর দিনাজপুর জেলায় ২২ হেক্টর জমিতে রঙ্গিন ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ হয়েছে। ভোক্তাদের মাঝে নিরাপদ উচ্চ মানের সবজি উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কৃষি অধিদপ্ত ও কিছু উন্নয়ন সংস্থা কৃষকদের পাশে থেকে সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদানে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এ কপি দেখতেও যেমন আকর্ষণীয় তেমনি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এটিতে জ্যান্তফিল, ক্যারোটিনেট, ভিটামিন এ থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।'

বাজারে ভালো চাহিদা ও দাম পাওয়ায় রঙিন ফুলকপি চাষে খুশি দিনাজপুরের কৃষকরা। ফলনও বেশি হওয়ায় আগামিতে এই রঙিন ফুলকপি চাষ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করে কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা।

রঙিন ফুলকপি দেখতেও যেমন আকর্ষণীয় তেমনি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এটিতে জ্যান্তফিল, ক্যারোটিনেট, ভিটামিন এ থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় বলে জানিয়েছেন কৃষি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

(এসএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০২ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test