E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘বাউ মুরগি’ পালনে ভাগ্য ফিরেছে নাজমার

২০২৪ মার্চ ৩০ ১৭:২৩:২৭
‘বাউ মুরগি’ পালনে ভাগ্য ফিরেছে নাজমার

শাহ্‌ আলম শাহী, দিনাজপুর : ‘দেখতে পাকিস্তানি মুরগির মতো হলেও বাউ মুরগির মাংসের স্বাদ দেশি মুরগির মতোই। বাউ মুরগি পালনে কোনো সমস্যা নেই। রোগ-বালাই এক্কেবারে কম। অন্য মুরগির তুলনায় বাউ মুরগির ওজন বেশি, অল্পদিনে বাজারজাত করা যায়। আমি তিন'শ থেকে এখন সাড়ে সাত'শ মুরগি করেছি। এই মুরগি পালনে অনেক লাভবান আমি।’

বাউ মুরগি পালনে সফলতার এমনি গল্প তুলে ধরেন দিনাজপুরের সদর উপজেলার শেখপুরা ইউপির মাধবপুর গ্রামের খামারি নাজমা বেগম। পঞ্চাশোর্ধ বয়সের এই গৃহিণী সংসারিক কাজে ফাঁকে পলাতক মুহুর্তকে ছাড় না দিয়ে মুরগি পালন করেন। প্রায় ১০ বছর ধরে মুরগির খামার করে সংসারে বাড়তি আয় করে জমিও কিনেছেন। তার খামারে এই প্রথম পালন করছেন বাউ মুরগি। এর আগে অনেক জাতের মুরগি পালন করলেও এমন লাভ দেখেনি নাজমা বেগম। ৮ মাস আগে তিন'শ বাউ মুরগির বাচ্চা নিয়ে শুরু করেন। এখন তার খামারে সাড়ে সাত'শ মুরগি রয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যায়ক্রমে আরো পাঁচ'শ মুরগি বিক্রি করেছেন খামারের পরিধি আরো বৃদ্ধি করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। আরো এজাতের মুরগি পালন করবেন।কারণ, এ মুরগি পালন করে সফল হয়েছেন তিনি।

খামারি নাজমা বেগম জানালেন, ‘মাত্র ৪০ থেকে ৪২ দিনে এ মুরগির ওজন এক কেজি ছাড়িয়ে যায়। বাউ মুরগি পালনে কোনো সমস্যা নেই। রোগ-বালাই এক্কেবারে কম। অন্য মুরগির তুলনায় বাউ মুরগির ওজন বেশি, অল্পদিনে বাজারজাত করা যায়। এর মাংসের স্বাদ- দেশি মুরগির মতোই। চাহিদা বেশি থাকায় মুনাফাও হচ্ছে ভালো। এই মুরগি পালনে আমি অনেক লাভবান হয়েছি।’

নাজমা বেগমকে মুরগি পালনে সহায়তা করেন,তার স্বামী স্কুল শিক্ষক মো. মোকলেসুর রহমান। পেশাগত কাজের ফাঁকে তিনি স্ত্রীর মুরগির খামার দেখাশোনা করেন।

মোকলেসুর রহমান বলেন, ‘খামারে পালন করা হলেও এর স্বাদ দেশি মুরগির মতোই। রোগ-বালাই কম। দ্রুত বর্ধনশীল। তাই,রএই নতুন জাতের মুরগি ‘বাউ চিকেন’ দিনাজপুরে ব্যাপক
সাড়া ফেলেছে। দিন দিন এই মুরগির চাহিদা বাড়ছে। খামার থেকেই পাইকাররা এসে মুরগি নিয়ে যাচ্ছে।’

নাজমা বেগমের বাউ মুরগি খামারের সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন আরও অনেকেই। চিরিবন্দর উপজেলার বিন্যাকুড়ি এলাকা থেকে খামার দেখতে আসা জামাল উদ্দিন জানালেন, ‘লোকমুখে শুনে এই খামার দেখতে এসেছি। বাস্তবে দেখে খুবই ভালো লাগলো। দেখলাম-খামার থেকেই লোক মুরগি কিনে নিয়ে যাচ্ছে।বেশ চাহিদা রয়েছে, এই মুরগির। আমিও ভাবছি, ৫০০ বাচ্চা নিয়ে এই মুরগির খামার করবো।’

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) সহায়তায় এই বাউ মুরগি লালন-পালনের জন্য খামারিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করছে,মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র (এমবিএসকে)। দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় এমনি ৩০ মুরগি বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠছে। নতুন জাতের এই মুরগি পালন করে পুরুষদের পাশাপাশি ভাগ্য বদলেছেন অনেক নারী।

এ বিষয়ে মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র (এমবিএসকে) এর প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল আলম জানান, ‘এজাতের মুরগি উদ্ভাবন করেছেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। সারাদেশের মতো দিনাজপুরেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ মুরগি। ইতোমধ্যে আমাদের খামারি সদস্যদের কাছে এ মুরগি নতুন আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। দিনাজপুরে ৩০টির অধিক খামারে পালন করা হচ্ছে বাউ মুরগি। খেতে সুস্বাদু, মৃত্যুহার কম ও উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণেই খামারি ও ভোক্তা পর্যায়ে এই মুরগির চাহিদাও অনেক।’

দিনাজপুর জেলা ভেটেরিনারি অফিসার ডা.আশিকা আকবর তৃষা বলেন, 'বাউ মুরগি পালন করে অনেকই লাভের মুখ দেখেছে। ব্রয়লার মুরগি অনেকের কাছেই অপছন্দের। সেখানে বাউ মুরগি তাদের কাছে খুবই পছন্দের। তাই এ মুরগি অনেকের খামারে জায়গা করে নিয়েছে। এ মুরগিতে রোগ-বালাই খুবই কম হয়ে থাকে। খেতেও দেশি মুরগির মতো স্বাদ। দেশি মুরগির দাম খুবই চড়া। অনেকেটা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তাই এই মুরগির চাহিদা বাড়ছে।’

(এসএস/এসপি/মার্চ ৩০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test