E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হাওরে বোরোর বাম্পার ফলন

ধানে ভরপুর ভৈরবের মোকাম, দাম নিয়ে হতাশ কৃষক-ব্যবসায়ীরা

২০২৪ মে ০২ ১৫:৫০:৫২
ধানে ভরপুর ভৈরবের মোকাম, দাম নিয়ে হতাশ কৃষক-ব্যবসায়ীরা

সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : বৈশাখের নতুন ধানে ভরপুর ভৈরবের মোকাম। এদিকে দাম নিয়েও হতাশ কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বাজারে ক্রেতা কম থাকায় দুশ্চিন্তায় ধান বিক্রেতারা। 

২৬ এপ্রিল (শুক্রবার) সকালে ভৈরবের মোকামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধান বোঝাই নৌকা সারি সারি ভাবে ঘাটে নোঙ্গর করা। সবকটি নৌকাই হাওর থেকে এসেছে। শ্রমিকরা নৌকা থেকে ধান খালাস করে ঘাটে স্তুপ আকারে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখছেন। এসব ধান ঘাটে ও নৌকাই রেখেই কেনাবেচা হয়ে থাকে। এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কবলে পড়লে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকার শুরু থেকে বাজার মনিটরিং করলে ব্যবসায়ীরা সুফল পাবে।

হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ শাহ হোসেন মাঝি ধান বোঝায় করা একটি নৌকা নিয়ে ভৈরব ঘাটে এসেছেন। এসময় তিনি বলেন, সকাল ১০টার দিকে দুই হাজার ৪০০ মণ বৈশাখী ধান নিয়ে আমরা ভৈরব মোকামে এসেছি। এই বছর হাওরে ধানের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে।

দুই হাজার মণ নতুন ধান নৌকা বোঝায় করে ভৈরব ঘাটে ভিড়েছেন হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জের নৌকার মাঝি মো. আশু মিয়া। তিনি বলেন, এই বছর হাওরে প্রচুর পরিমাণে ধান হয়েছে। তাই কৃষকরা তাদের ধান পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। এসব ধান পাইকাররা ভৈরব মোকামে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। এবছর ধানের দাম খুব কম তাই ফসল বেশি পেলেও ধানের দাম না পাওয়ায় মন ভালো নেই কৃষকদের।

ভৈরব মোকামের হাজী আব্দুস ছাত্তার মিয়া অ্যান্ড সন্স একটি প্রতিষ্ঠিত ধানের আড়ত। এই আড়তের প্রতিনিধিরা ঘাটে নৌকা বোঝায় ধান বিক্রির জন্য ঘাটে স্তুপ করে সাজিয়ে রাখছেন। এসময় তিনি জানান, হাওর এলাকায় এখন পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এসব এলাকা থেকে নৌকা যোগে বিক্রির জন্য পর্যাপ্ত ধান মোকামে আসছে। তবে মোকামে খরিদদার কম থাকায় ধান বিক্রি করতে পারছেন না তারা। সরকার যদি কৃষক পর্যায় থেকে ধান কেনা শুরু করে তাহলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ধানের ন্যায্য দাম পাবে বলে তাদের দাবি। বর্তমানে ধানের বাজারে মোটা ধান প্রতি মণ ৭৫০-৭৮০ টাকা দরে ও চিকন ধান প্রতি মণ ৮৫০-৯২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

গঙ্গা যমুনা ট্রের্ডাসের মালিক সত্য সাহা বলেন, এবার কৃষকদের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন তো নতুন ধান আমদানির পুরো সিজন ভৈরব বাজারে প্রচুর ধানের আমদানি হচ্ছে। তবে বাজারে ধানের ক্রেতা খুব কম রয়েছে। এই বছর হাওরে ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকরা যদি ন্যায্য দাম পায় তাহলেই তারা খুব খুশি হবেন।

অপরদিকে অনেক নৌকা ভৈরবের ঘাটে না ভিরে আশুগঞ্জ ঘাটে চলে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের থেকে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের বাচাঁতে সরকার শুরু থেকে বাজার মনিটরিং করলে ব্যবসায়ীরা সুফল পাবে বলে তিনি জানান।

আজমিরিগঞ্জের কাকাইলছেও ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের ধানের বেপারি রফিক উদ্দিন বলেন, এবছর আবহাওয়া ঠিক থাকায় হাওরের ধান চাষে কোন সমস্যা হয়নি। হাওর এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে ভৈরব বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছি। তবে বাজারে বাহির এলাকার খরিদদার খুব কম তাই নতুন ধান বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতারা সরকারের দাম নির্ধারণের আশায় বসে আছেন। যখন দাম নির্ধারণ করবে তখনই ক্রেতাদের আগমন বাড়বে বলে তিনি জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার হাওরে এবার বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। গত বছর চিটায় ব্যাপক ক্ষতি সম্মুখিন হয়েছিলেন কৃষকরা। বিশেষ করে গেল বছর চিটার কারণে বিআর-২৮ ধান অনেক কৃষক গোলায় তুলতে পারেননি। এবার কোথাও চিটার খবর পাওয়া যায়নি। এবার বৈশাখ মাসের কয়েকদিন আগ থেকে হাওরে মোটা জাতের ধান কাটা শুরু হয়। মোটা জাতের ধানের বিঘা প্রতি গড় ফলন ২০/২২ মণ পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত এই ধান বিঘায় ১৫/১৮ মণের বেশি উৎপাদন হয় না। উৎপাদন বাড়ার মূল কারণ ধানের পরিপূর্ণ পুষ্টতা। ধানের বেপারীরা হাওর এলাকার কৃষকের কাছ থেকে মণ প্রতি ৮০০ টাকা দরে কিনছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাধীনতা পূর্ব সময় থেকে হাওরাঞ্চলের বিশেষ করে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইন, নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি, হবিগঞ্জের দিরাই, লাখাই, আজমিরিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের কিছু অংশের বাণিজ্য ভৈরব নির্ভর। যুগ যুগ ধরে নদী পথে ভৈরবের সঙ্গে ওই সব অঞ্চলের অর্থনৈতিক যোগসূত্র তৈরি হয়ে আছে। সড়ক যোগাযোগ ভালো হবার পর ওই সব অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য কমে এলেও শেষ হয়ে যায়নি। বিশেষ করে হাওরকে ঘিরে ভৈরবে সমৃদ্ধ ধানের মোকাম প্রতিষ্ঠা হয়। সময়ের ব্যবধানে ভৈরব মোকামের জৌলুশ কিছুটা কমে যায়। তারপরও কিছু অংশের উৎপাদিত ধান ভৈরব মোকামের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। মোকাম থেকে ধানের ক্রেতা অঞ্চলগুলো হলো ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, লালমনিরহাট, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার ব্যবসায়ী ও মিলার। এবার ভৈরব মোকামে নতুন ধানের আমদানি শুরু হয় ২৯ চৈত্র থেকে।

এ বিষয়ে ভৈরব চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সভাপতি আলহাজ্ব হুমায়ুন কবীর জানান, বন্দর নগরী ভৈরব ব্রিটিশ আমল থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী স্থান। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে ভৈরব মোকামে হাওর এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণে ধান আমদানি হয়ে থাকে। এই ধান বিভিন্ন চাতাল মিলের মালিকরা খরিদ করে থাকেন। এবছর আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় কৃষকরা তাদের জমিতে ভালো ফসল ফলাতে পেরেছেন। তাই বাজারেও পর্যাপ্ত ধানের সরবরাহ রয়েছে। তবে নতুন ধান প্রতি মণ ৭৮০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এই দামে বিক্রি করলে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। কৃষকরা ধান উৎপাদনে যে ব্যয় করেছেন তা পুষিয়ে উঠতে পারবে না। যদিও কৃষকরা বর্তমান বাজারে ভেজা ও আধাকাচা ধান বিক্রি করছেন। যদি শুকনা ধান বাজারে আসে তাহলে ধানের দাম বাড়বে বলে তিনি আশা করছেন।

(এসএস/এসপি/মে ০২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test