E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care

For Advertisement

Mobile Version

ন্যায্য দাম না পাওয়ার শঙ্কা

শরণখোলায় আলু চাষে দ্বিগুণ খরচে দিশেহারা চাষিরা

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ০৩ ১৯:২৫:০০
শরণখোলায় আলু চাষে দ্বিগুণ খরচে দিশেহারা চাষিরা

সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : গত মৌসুমের চেয়ে আলুর বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। ক্ষেত শ্রমিকের মজুরিসহ চাষের খরচও বেশি। সব মিলিয়ে এবছর আলু চাষে দ্বিগুণ খরচ হয়েছে বাগেরহাটের শরণখোলার আলু চাষীদের। অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার আগাম ওঠা নতুন আলুতে বাজার সয়লাব। দাম কিছুটা হাতের নাগালে থাকায় নতুনের স্বাদ নিচ্ছেন ক্রেতা। অথচ উপকূলের উপজেলা শরণখোলাতে সবেমাত্র বীজ রোপণ শেষ হয়েছে। আরো প্রায় দেড় মাস পরে এই আলু যখন তোলা হবে তখন আর নতুনের স্বাদ নেওয়ার এমন আগ্রহ থাকবে না। সারা বছরই আলুর চাহিদা থাকলেও দ্বিগুণ খরচ করে সামনে আলুর সঠিক দাম পাবেন কি না সেই চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। বিশেষ করে আলু সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই শরণখোলায়। এই সুযোগে মাঠ থেকে কম দামে আলু কিনে নিয়ে যায় বিভিন্ন এলাকার ফড়িয়ারা। এর ফলেও ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা। 

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগর উপকূলে অবস্থিত হওয়ার কারণে শরণখোলার মাটি ও বাতাসে লবণাক্ততার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। যে কারণে আমন ফসলের চাষাবাদ হয় একটু দরিতে। যার ফলে আলুসহ শীতকালীন শাকসবজি চাষের সময় অন্যান্য এলাকার চেয়ে পিছিয়ে যায়। তাই চাহিদার শীর্ষে থাকা আলু সঠিক সময় বাজারজাত করা সম্ভব হয় না।

কৃষি বিভাগ জানায়, শরণখোলায় এবছর ১০৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ৮৫ হেক্টরে। ফলন হয়েছিল এক হজার ৭৬০ মেট্রিকটন। এবছর বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দুই হাজার ৩০০ মেট্রিকটন ফলনের আশা করা হচ্ছে।
উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের মঠেরপাড় গ্রামের আলু চাষি মো. বাদল হাওলাদার জানান, গত বছর এক কেজি বীজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এবছর সেই বীজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছে। গতবার দুই বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়ায় বেশ লাভবানও হয়েছিলেন। কিন্তু এবার সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় দুই বিঘায় খরচ হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। তাই খচর ওঠা এবং লাভ হওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তিনি। বাচ্চু হাওলাদারসহ অন্য চাষীরাও জানিয়েছেন হতাশার কথা।

রাজৈর গ্রামের চাষি মো. দুলু তালুকদার জানান, এবছর ৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। বীজের দাম দ্বিগুণ। গতবার দৈনিক ৫০০ টাকার শ্রমিকের মজুরি এবার ৭০০ টাকা। ১৭ টাকার ইউরিয়া সার কেজিতে বেড়েছে ৬-৭ টাকা। সব মিলিয়ে এবার খরচ হয়েছে দ্বিগুণ। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আলু তুলে মাঠে স্তুপ করে রাখতে হয়। হাজার হাজার মণ আলু খোলা মাঠে রেখে দুশ্চিন্তায় থাকতে চাষিদের। যে কারণে মাঠ থেকেই কম দামে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করতে হয়। শরণখোলায় যদি একটি কোল্ড স্টোরেজ থাকতো তাহলে আলু নিয়ে আর চিন্তা করতে হতো না। শরণখোলায় একটি কোল্ড স্টোরেজ করার দাবি জানিয়েছন আলু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় চাষিরা।

উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের আলুর আড়ৎদার মো. নাসির মোল্লা জানান, এবছর খাবার আলু এবং বীজ আলুর দাম এতো বৃদ্ধি, যা সাধারণ ক্রেতা ও চাষিদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। এবার ৭০-৭৫টাকা কেজি দরে সাড়ে ৭০০ মণ বীজ আলু বিক্রি করেছেন তিনি। তবে আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে দাম নিয়ে দুশ্চিন্তয় পড়তে হতো না চাষিদের।

শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, শরণখোলা উপজেলাটি অবস্থানগতভাবে উপকূলীয়। তাই এখানকার মাটিতে লবণের মাত্রা বেশি। এ কারণে চাষাবাদও সময় হিসেব করে করতে হয়। একসম এ অঞ্চলে আমন ধান ওঠার পরে জমিতে আর কোনো ফসল হতো না। ধীরে ধীরে কৃষি উন্নয়নে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ এবং আধুনিক চাষাবাদ প্রযুক্তি ব্যবহারে লবণাক্ততাকে জয় কর এখন সব ধরণের ফসল ফলছে। ভৌগোলিক কারণে এই এলাকায় অন্যসব এলাকার চেয়ে চাষাবাদ একটু দেরিতে হয়। যেকারণে আলুসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসল শেষে দিকে ফলে। ফলে দামও কম পান চাষিরা। বিশেষ করে আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে ভালো দাম পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি চাষিদের বাড়তো এবং আরো অধিক পরিমান জামিতে আলু চাষ হতো। একটি কোল্ড স্টোরেজ করা গেলে কৃষকরা উপকৃত হবে।

(এস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৫)

পাঠকের মতামত:

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test