E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হালতিবিলে ৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো চাষ অনিশ্চিত

২০১৫ জানুয়ারি ১২ ১৭:৩২:০৩
হালতিবিলে ৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো চাষ অনিশ্চিত

নাটোর থেকে মামুনুর রশীদ : নাটোরের হালতি বিলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। হালতিবিলের খোলাবাড়িয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়া জিয়া খালের প্রবেশ পথে মাটি ফেলে ভরাট করায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপক এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ফলে হালতি বিলের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নিচু জমি থেকে পানি নিস্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। এদিকে ব্যাপক এলাকা জুরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় বোরো চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছে কয়েক হাজার কৃষক। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুব শীঘ্রই ভরাটকৃত এই খাল থেকে মাটি অপসারণ করে জলাবদ্ধতা দূর করা না গেলে কমপক্ষে আরো এক মাস বোরো চাষা বিলম্বিত হবে। এতে কৃষকদের ভোগান্তিসহ বোরো ধান উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে হালতিবিলে জলাবদ্ধতা নিরসনে ভুক্তভোগী কৃষকরা সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। সোমবার এলাকার কয়েক’শ বিক্ষুব্ধ কৃষক নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ঘেরাও করে খাল থেকে দখল মুক্তসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে। নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার জাহান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পরে সরজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে করে খাল থেকে ভরাট মাটি অপসারণের জন্য নির্দেশ দেন। এসময় মাধনগর ও খাজুরা ইউনিয়ন ও পিপরুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

খোলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় সাংবাদিক মামুনুর রশীদ জানান, হালতিবিল মুলত নাটোরের শস্য ভান্ডার হিসাবে পরিচিতি। এই বিলে একটি মাত্র ফসল ভাল হয় তা হলো বোরো ধান। তবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ইদানিংকালে রবি শস্যও চাষাবাদ হচ্ছে। গত দুই দশক আগে এই বিলেএকমাত্র ফসল হিসেবে আমন ধান চাষ হতো। কালের বির্বতনে ফসলের পরিবর্তন হলেও কৃষকের ভাগ্য বদলায়নি। দূর হয়নি কৃষকের দুর্ভোগ। প্রায় সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও প্রতিকুল পরিবেশের সাথে লড়াই করে চলতে হয় এখানকার কৃষক সমাজকে। বন্যার কারনে বিলের আকার পরিবর্তন হয়েছে অনেকাংশ। পলি জমে কোথাও কোথাও বিল উঁচু হয়েছে। অথবা বিলের মাঝে ছোট-বড় খালগুলো দখল হয়ে গেছে। অনেকে খাল ভরাট করে চাষাবাদ করছে। ফলে এসব খালে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বিলের নিচু জমি থেকে বন্যার পানি অপসারণে বিপত্তি বাধে।

এনিয়ে প্রতি বছরই কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিলের নিম্নাঞ্চলের কোথাও কোথাও বোরো চাষ বিঘ্নিত অথবা বিলম্বিত হয়। হালতিবিলের বন্যার পানি যথাসময়ে অপসারণ এবং চাষ মৌসুমে পানি প্রবাহ বজায় রাখতে আশির দশকে পানা উল্লাহ খাল এবং জিয়া খাল খনন করা হয়। নব্বইয়ের দশকে জিয়া খাল পুন:খনন করা হয়। কিন্তু এসব খালের উৎস মুখে স্থানীয় দখলদাররা ভরাট করে বসতি কিংবা বাঁধ দিয়ে পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করছে। ফলে এসব খালে আর পানি প্রবাহ নেই। তবে হালতি বিলের মাঝে জিয়া খাল কিছুটা সচল থাকলেও শুস্ক মৌসুমের আগেই শুকিয়ে যায়। কার্যত এই খাল কৃষকের তেমন কোন উপকারেই আসে না।

মাধনগর ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান জানান, এসব খালের উৎসমুখ এবং খালের অভ্যন্তরে দখল মুক্ত করে পুনরায় খনন কাজ করা হলে কৃষকদের দুর্ভোগ অনেকাংশে লাঘব হবে।

সোনাপতিল গ্রামের কৃষক মহসিন আলী জানান, জলাবদ্ধতার কারণে তার ৯ বিঘা জমি এখনও পানির নিচে। এতে তিনি সময় মত বোরো চাষ করতে পারছেন না। অথচ বোরো চাষের সময় পার হয়ে যাচ্ছে। বিলম্বে চাষ হলেও তাদের ফলনে বিপর্যয় ঘটে। গত কয়েক বছর ধরে এই সমস্যায় ভুগছেন তারা। একই কথা শোনালেন বাঁশিলা গ্রামের সিদ্দিক মোল্লা, সোনাপাতিল গ্রামের আব্দুর রহমান, তেঘড়িয়া গ্রামের সামসুল ইসলাম সহ অনেকে। তাদের দাবি, খুব শীঘ্রই খালের দখলমুক্ত করে বিলের পানি অপসারন না করা হলে সময়মত বোরো চাষ করতে পারবেন না। তাদের মত কয়েক হাজার কৃষক এই উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় আছেন। হালতি বিলের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে আছে।

নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় কর্মরত কৃষি অফিসার ড. সাইফুল আলম জানান, তিনি ক’দিন আগে এই কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। হালতিবিলে জলাবদ্ধতার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান। তবে কি পরিমান জমি জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে তার সঠিক হিসাব জানাতে পারেননি। ওই কর্মকতার্র মতে বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে বোরো চাষ কিছুটা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে কৃষকের কোন ক্ষতি হবে না। কারণ এখনও বোরো চাষের অনেক সময় আছে। কৃষকদের শঙ্কার কারণ নেই।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার জাহান জানান, কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে খোজ খবর নিয়েছেন। খোলাবাড়িয়া গ্রামের কিছু মানুষ জিয়া খালের একটি অংশ দখল করে মাটি ভরাট করে নিজেদের দখলে নিয়েছে। কৃষককদের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ইতিমধ্যে দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দখলদাররা নিজেরা মাটি অপসারণ করে দখলমুক্ত না করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(এমআর/এএস/জানুয়ারি ১২, ২০১৫)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test