E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাটোরে ধান কাটা শুরু, বিপাকে কৃষক

২০১৬ এপ্রিল ১৮ ১৭:১৪:২৩
নাটোরে ধান কাটা শুরু, বিপাকে কৃষক

মামুনুর রশীদ, নাটোর : নাটোরের হালতি ও চলনবিলের বিস্তির্ন এলাকায় চলতি বোরো মৌসুমে আগাম ধান কাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। এমনিতেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিল এলাকার অনেক জমির ধান পড়ে যাওয়ায় ধান কাটতে শ্রমিক বেশী লাগছে। শ্রমিক সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। অধিক মূল্য দিয়েও কাজে শ্রমিক মিলছে না। এছাড়া ধানের দাম না থাকায় লোকসানের মুখে পড়ার আশংকা করছে কৃষকরা।

অপরদিকে বোরো ধানে মাজড়া পোকার আক্রম, নেকব্লাষ্ট রোগের প্রার্দুভাব, সম্প্রতি ঝড়ে ধান পড়ে যাওয়া এবং উঠতি বোরো ধানের দাম কম হওয়ায় মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মত বিষ কাঁটা বিদ্ধ করছে কৃষকদের মনে। কৃষকরা জানিয়েছেন, বর্তমান বাজার মূল্যে ধান বিক্রি করে তাদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।স্থানীয় কৃষকরা জানায়, বিগত বছরের এই সময়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা এবং উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, ডোমার, জয়পুরহাট, রংপুর, কড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা আসতো ধান কাটতে। কিন্তু এবার এসব অঞ্চলের শ্রমিকরা আসেনি, বরং তারা ঢাকামুখী হওয়ায় এই সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে স্থানীয় শ্রমিকদের বেশি দাম দিয়েও চাহিদা মাফিক পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ মূহুর্তে কৃষকরা তাদের দীর্ঘ প্রতিক্ষিত ও কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলতে পারবে কিনা তা নিয়েও বড় দুশ্চিন্তায় আছেন।

কৃষি শ্রমিকরা জানায়, অন্যান্য জায়গার তুলনায় নাটোরে শ্রমিকের মুল্য কম। দিন প্রতি ৫’শ টাকা করলেও তাদের পোষাবে না। মাটিতে শুয়ে পড়া ধান কাটাও খুব কষ্ট সাধ্য। তাই মূল্য একটু বেশি না নিলে তাদেরও লোকসান হবে।

হালতিবিলের দিঘীরপাড় গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, শ্রমিকের অভাবে সময়মত ধান কাটামাড়াই করতে না পারলে কৃষকদেরকে র্নিঘাত পথে বসতে হবে। হালতিবিলের কৃষকের একটি মাত্র ফসল হলো বোরো ধান। এই ফসলের ওপর নির্ভর করে পারিবারিক দৈনন্দিন খরচ মেটাতে হয়। তাই এই ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত কৃষকের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।

খোলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জিয়াউল হক জিয়া জানান, এবছর তিনি ৫০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। প্রায় সব জমির ধান পাক ধরেছে। অল্প ক’দিন পর থেকে পরোদমে ধান কাট হবে। আর কিছু কিছু জমির সম্পূর্ণ ভাবে পেকে গেছে। কিন্তু ধান কাটতে তিনি শ্রমিক পাচ্ছে না।

কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এক মণ ধানের দাম ৬’শ টাকা আর একজন শ্রমিকের মূল্য ৫’শ টাকা। এরপরও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। গত মৌসুমে এক মণ ধান কাটতে শ্রমিককে দিতে হয়েছে ৪ থেকে ৫ কেজি ধান। এবার একই জমিতে মণ প্রতি ধান কাটতে শ্রমিককে দিতে হচ্ছে ১০ থেকে ২০ কেজি করে। এরপরও শ্রমিক মিলছে না।

সিংড়ার চলনবিলের ডাহিয়া গ্রামের কৃষক নিয়ামত আলী ও শহিদুল ইসলাম জানান, বাজারে উঠতি বোরো ধান কেনা-বেচা শুরু হলেও ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ পাচ্ছেন না তারা। এক মন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা দরে। অথচ এক মণ ধানের উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৭০০ টাকার ওপরে। তারা ঋন নিয়ে আবাদ করেছেন।

কৃষক সাইফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলামনহ আরো অনেকে জানান, শুধু শ্রমিক সংকট বা বাজার দরই নয়, ফসলের ফলন নিয়েও কৃষকরা হতাশায় আছেন। যেখানে বিঘা প্রতি ২৫ থেকে ২৬ মন হারে ধান উৎপাদন হওয়ার কথা। সেখানে এবার বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২২ মন হারে ফলন হচ্ছে। গত কিছুদিন পুর্বে ঝড় আর বৃষ্টির কারণে বিলের অধিকাংশ জমির ওঠতি ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এসব ধান কাটতেও শ্রমিকদের অনীহা। ধান কাটলেও ওই জমিতে বিঘা প্রতি ৫/৬ মন ধান উৎপাদন কম হচ্ছে। এছাড়া জমিতে মাজরা পোকার আক্রমনও আর একটি কারণ বলে তারা উল্লেখ করেন।

এদিকে কৃষি বিভাগের দাবী, এই সমস্যা সাময়িক। কৃষকদের ধৈর্য্য ধরলে এই সংকট কেটে যাবে। তাদের মতে, এবারে জেলার সর্বত্রই বোরোর আবাদ ভাল হয়েছে। তবে দু’একটি জায়গায় মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে তাতে সার্বিক উৎপাদনে মোটেও প্রভাব পড়বেনা। এবারে সার, তেল ও কীটনাশকের যোগান ছিল চাহিদা মাফিক। ফলে এবার ধানের উৎপাদন ভাল হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলার ৭টি উপজেলায় ৫৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়। সেখানে আবাদ হয়েছে ৫৬ হাজার ৪১৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর লক্ষমাত্রা ছিল ৫৭ হাজার ৩৩৭ হেক্টর। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় ৫৭ হাজার ৪৯২ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এবছর প্রায় ১ হাজার ৭৭ হেক্টর কম জমিতে বোরোর চাষ হয়েছে।

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার আমিরুল ইসলাম জানান, ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। তবে কৃষকদের মুখে হাসি নেই। ধানের উৎপাদন খরচের তুলানায় বাজারে ধানের দাম কম। ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য কৃষকরা সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডঃ আলহাজ্ব উদ্দিন বিল এলাকায় আগাম ধান কাটা শুরু হলেও শ্রমিক সংকটের কথা স্বীকার জানান, ‘জেলায় বোরোর বাম্পার ফলন হবে। সবে মাত্র ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকদের হতাশার কিছু নেই। যদি এ ধান এখন বিক্রি না করে কিছুদিন ঘরে রেখে দেয়, তবে কৃষকরা অধিক মূল্যে তা বিক্রি করতে পারবেন।’ শ্রমিক সংকট মোকাবেলা করার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে ধান কাটা ও মাড়াই মেসিন সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

(এমআর/এএস/এপ্রিল ১৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test