E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আখ চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মোফাজ্জল

২০১৬ মে ২০ ১৫:২৮:৪৮
আখ চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মোফাজ্জল

এম নজরুল ইসলাম : বগুড়ার নন্দীগ্রামে আখ চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন দিনমজুর মোফাজ্জল। উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের বীরপলী গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন অন্যের জমিতে আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। দিনমজুর থেকে মোফাজ্জল হোসেন এখন সফল চাষিতে পরিনত। গরিব ঘরে অভাব-অনটন আর দারিদ্র্যতা পিছু ছাড়তে চায় না। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি বলতে মাথা গোঁজার ঠাঁই, ভিটেটুকু। জীবন পরিচালনার ক্ষেত্র গরিবের হাতিয়ার শুধু দুটি হাত আর সততা। সেই সততা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সফল হতে চলেছেন বীরপলী গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন(৩৬)।

আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় বীরপলী গ্রামের বাদশা মিয়ার গভীর নলকূপ প্রত্যেক রাতে বছর চুক্তিকে পাহারা দেয়ার শর্তে বিনা টাকায় একবিঘা জমি চাষ করার সুযোগ পান তিনি। বীরপলী পাশ্ববর্তী কদমকুড়ি মোড় এলাকার সেই জমিতে আখ চাষ করে শুরু হয় মোফাজ্জলের পরিবর্তনের পালা। হাতে মূলধন নেই। নিজের ইচ্ছা শক্তি অনুপ্রেরণাকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনা করেন আখ চাষের। সেই পরিকল্পনা আজ তাকে সফলতার কাছাকাছি নিয়ে গেছে। মোফাজ্জল হোসেন প্রথমে জমিতে প্রয়োজনীয় সার-ঔষধ দিয়ে হাল চাষ করেন। হাট থেকে লাল জাতের আখ (স্থানীয় নাম কুশার) কিনে এনে কেটে ছোট ছোট করে চাষ উপযোগী তৈরি করা জমিতে মাটির উপড়ে রাখে। এসপ্তাহের মাথায় ফেলে রাখা আখে চাঁরা গোঁজাতে শুরু করে। নিয়মিত পরিচর্যা, প্রয়োজনীয় সার-ঔষধ ও পানি সেচ দিতে হয়। চারা গজানোর ১০মাসের মাথায় আখ তুলে বিক্রয় করছেন মোফাজ্জল হোসেন।

চাষাবাদি জমি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সঠিকভাবে চারা পরিচর্যা করলে রোগ বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব থাকেনা। তবে আখ পাতার স্পর্শ্বে একটু বিরক্তিকর মনে হয়। মোফাজ্জল হোসেনের একবিঘা জমিতে আখ চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫হাজার টাকা। তিনি গেলো একমাস ধরে চাষকৃত জমি থেকে আখ তুলে স্থানীয় বাজারে পাইকারী, খুচরা বিক্রয় করাসহ নিজেই মেশিনে রস তৈরী করে বিক্রি করছেন। এবার ফলন হয়েছে বেশী। ১শ’ পিছ আখ বাজারে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ টাকা দরে। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতিপিচ ২০টাকা থেকে ২৫টাকা। একবিঘা জমির আখ ২লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে চাষি মোফাজ্জল আশাবাদী।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আখ চাষ লাভজনক। এতে তেমন একটা খরচ নেই। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা হলে ভালো ফলন হয়। রোগ-বালাই কম। বছরে ৩টি মৌসুমে আখ চাষ করা হয়। এরমধ্যে আগষ্ট থেকে অক্টোবর মাসে আগাম রোপন, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মধ্য রোপন ও ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাসে নাবি মৌসুম। তবে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস আখ চাষে উত্তম সময়। এই মৌসুমে ফলন হয় দ্বিগুণ।

চাষি মোফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, আখ চাষের আগে তিনি বীরপলী এলাকায় অন্যেক পুকুর পত্বনি নিয়ে মাছ চাষ করে সংসার চালাতেন। মাছ চাষের টাকায় সংসারের খরচ চালাতে হিমশিত খেতে হতো। প্রায় ৮বছর যাবত ধরে তিনি মাছ চাষ করে চলেছেন।

এরমধ্যে ২০১৩সালে হঠাত করে মোফাজ্জল আখ চাষের পরিকল্পনা করেন। নিজের জমানো পূঁজি না থাকলেও ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রথমে ১০শতক জমিতে শুরু করেন আখ চাষ। সেই থেকে শুরু হয় পরিবর্তনের স্বপ্ন। মাত্র ক'দিনের ব্যবধানে বেড়ে ওঠে আখ। সৃষ্টি হয় এক মনোরম পরিবেশের। মোফাজ্জলের ছোট্ট স্বপ্ন রূপ নেয় বিশালতায়। দিনদিন আখের চাষ বৃদ্ধি করেন তিনি।

মোফাজ্জল হোসেন এবার একবিঘা জমিতে আখ চাষ করলেও তিন বিঘা জমিতে আখ চাষের পরিকল্পনা করেছেন। চাষি মোফাজ্জল বলেন, আমি ক্ষুদ্র দিনমজুর ছিলাম। জমি পত্বনি নিয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি অন্যের জমিতে কৃষানের কাজও করেছি। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছাড়া পৈতৃক কোনো সম্পত্তি নেই। নিজের জমি নেই বলে কোনো এনজিও আমাকে ঋন দিতে রাজি হয়নি। একটু পূঁজির আশায় বিভিন্ন ব্যাংক এনজিওতে ঘুরপাক খেয়েছি।

তিনি বলেন, হঠাত করেই আমি আখ চাষের পরিকল্পনা করি। নিজের পূঁজি নেই, তাই অন্যের জমি-নলকূপ বছর চুক্তিতে পাহারা দেয়ার শর্তে একবিঘা জমিতে আখ চাষের সুযোগ পেয়েছি। এচাষ করে আমি এখন স্বাবলম্বী।

সন্তানদের পড়াশনার খচর চালিয়েও সংসারে বাড়তি আয় হচ্ছে। দুই ছেলে তিন মেয়েকে ঘিরেই চাষি মোফাজ্জলের স্বপ্ন। তিনি বলেন, নিজে অর্থের অভাবে আমি পড়াশুনা করতে পারিনি। পিতার অভাবের সংসারের খরচ যোগাতে ছোট বেলা থেকেই দিনমজুরের কাজ করেছি। বড় ছেলেকে সাথে নিয়ে আখ চাষ করছি। এটা লাভজনক চাষ। আখ চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে মোফাজ্জলের বড় ভাই তোফাজ্জল হোসেনও দুই বিঘা জমিতে আখ চাষ করছেন। ধীরে ধীরে এউপজেলায় আখ চাষের পরিধি বাড়ছে।

এপ্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি অফিসার মুহা: মশিদুল হক বলেন, সঠিকভাবে পরিচর্যা করায় আখের রোগবালাই নেই বললেই চলে। অনেকটা প্রাকৃতিকভাবেই পুষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠেছে আখগুলো। উপজেলায় তেমনভাবে আখের চাষ হয়না। তবে এ মৌসুমে উপজেলায় বুড়ইল, বীরপলী, কদমকুড়ি, কাথম, ভাটগ্রাম, রুপিহারসহ বেশকিছু এলাকায় আখ চাষ হয়েছে। এচাষে সারের প্রয়োজন বেশী হলেও অত্যন্ত লাভজনক ফসল। কোনো কৃষক আখ চাষ করতে আগ্রহী হলে কৃষি বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

(এমএনআই/এএস/মে ২০, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test