E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বান্দরবানে পাহাড়ী তুলার নতুন বীজ উদ্ভাবন ,লাভবান হবেন প্রান্তিক চাষীরা

২০১৬ নভেম্বর ০৮ ১৯:৪৪:০২
বান্দরবানে পাহাড়ী তুলার নতুন বীজ উদ্ভাবন ,লাভবান হবেন প্রান্তিক চাষীরা

আল ফয়সাল বিকাশ, বান্দরবান থেকে :পাহাড়ী তুলার উদ্ভাবিত নতুন বীজ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলক চাষাবাদের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে বান্দরবানে তুলার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে বান্দরবানের পাহাড়ী প্রান্তিক চাষীদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে।

তুলা গবেষণা কেন্দ্রে পাহাড়ী তুলার বীজ সংরক্ষণ করে দীর্ঘ ৮ বছর গবেষণা চালিয়ে নতুন এই বীজ উদ্ভাবন করেছেন তুলা গবেষক ও বিজ্ঞানী কিরণ ময় দেওয়ান।

আগামী মৌসুম থেকে পাহাড়ী জুম চাষীদের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত এই বীজ ব্যাপক ভাবে সরবরাহ করা হবে। ফলে এখানকার উৎপাদিত তুলা দেশের চাহিদার অনেকাংশ পুরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আদিকাল থেকেই পাহাড়ীরা নিজ প্রয়োজনে পাহাড়ের পতিত ঢালু জমিতে তুলা চাষ করে আসছেন। জুমের সমর্থক ফসল হিসেবেও পাহাড়ী জুমিয়ারা জুমে তুলা চাষ করে থাকেন। পাহাড়ীদের এই তুলা সুতো তৈরীতে বেশী কার্যকর ও ঠেকসই। সমতল ভুমির উৎপাদিত তুলার চেয়ে পাহাড়ী তুলার গুণগতমান অনেক ভাল এবং উৎপাদনও অনেক বেশী।

পাহাড়ী তুলার উৎপাদন আরো বাড়াতে তুলা গবেষণা কেন্দ্রে পাহাড়ী তুলার বীজ সংরক্ষণ করে ২০০৭ সালে গবেষণা শুরু করা হয়।

পাহাড়ী তুলা-১ এবং পাহাড়ী তুলা-২ ইতিমধ্যে চাষীরা তাদের জমিতে চাষাবাদ করে সফলতা পেয়েছে। সর্বশেষ পাহাড়ী তুলা-৩ বীজের অনুমোদন লাভ করে ২০১৫ সালে। পাহাড়ী তুলা-৩ বীজ পরীক্ষামূলক ভাবে চলতি বছর কয়েকজন প্রান্তিক চাষীর মাঝে বিতরণ করা হয় এবং ব্যাপক সাফল্য আসে। পাহাড়ী কৃষকরা এই তুলা বীজ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে এবং তাদের নিজস্ব বস্ত্রের চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে।

এ বিষয়ে নতুন বীজের উদ্ভাবক বিজ্ঞানী কিরণ ময় দেওয়ান জানান, তিনি পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে বীজ সংগ্রহ করে সুইং-এর মাধ্যমে পাহাড়ী তুলা-৩’র বীজ উদ্ভাবন করেন। এই তুলার বলের আকার অনেক বড় ওজনও বেশী এবং পোকা মাকড়ের আক্রমন কম। ফলে ফলন হয় অন্য তুলার চেয়ে ৩ গুন বেশী। ফলে নতুন উদ্ভাবিত বীজ ব্যাপক সাড়া জাগাতে পারে পাহাড়ী প্রান্তিক জুমিয়া চাষীদের।

এ বিষয়ে তুলা গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মং সা নু মারমা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের জুমে পাহাড়ী তুলা চাষাবাদ হয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ। পাহাড়ী তুলা-১ এবং ২ এর চেয়ে পাহাড়ী তুলা-৩ এই বীজ ব্যবহারে প্রোডাকশন অনেক ভাল বড় এবং পাতা চিকন। ফলে পোকা-মাকড়ের আক্রমন কম । চাষী পর্যায়ে পরীক্ষামুলক কয়েকটি প্লট দেয়া হয়েছে। এই তুলা উৎপাদনের মাধ্যমে চাষীদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হবে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ড. ফরিদ উদ্দিন জানান, পাহাড়ী অঞ্চলে ২ ধরনের তুলা চাষের সুযোগ রয়েছে। পাহাড়ের ঢাল এবং সমতল ভূমি। জুমে ধানের পাশাপাশি লাইন করে তুলা চাষ করা যায়। সমতল জায়গায় যেখানে তামাক হচ্ছে সেখানে তামাকের পরিবর্তে তুলা চাষ করা হচ্ছে। পাহাড়ী তুলার সাইজ অনেক বড় ওজনেও ভারী এবং বলের সংখ্যাও অনেক বেশী। কুমিল্লার তুলা দিয়ে সুতো করা যায় না আর পাহাড়ী তুলা থেকে সুতো এবং কাপড় বানানো যায়। এই তুলার চাহিদা এবং দাম বেশী। নতুন আবিস্কৃত তুলার এই বীজ পাহাড়ের বসবাসরত কৃষকরা লাভবান হবে এবং দেশের চাহিদার একটা অংশ এই পাহাড় থেকে পুরণ করা সম্ভব বলে তিনি তার মতপ্রকাশ করেন।


(এএফবি/এস/নভেম্বর ০৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test