E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বড়লেখায় তলিয়ে গেছে ৩ হাজার হেক্টর বোরো ধান

২০১৭ এপ্রিল ০৬ ১৬:১৪:৩৬
বড়লেখায় তলিয়ে গেছে ৩ হাজার হেক্টর বোরো ধান

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : গত বছরের শিলা-বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলের ক্ষতির রেশ এখনও পুষিয়ে উঠতে পারেননি কৃষকরা। এরই মধ্যে গত ৩০ মার্চ থেকে থেমে থেমে ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে হাকালুকির বড়লেখা অংশের প্রায় ৩ হাজার হেক্টর বোরো ধান প্লাবিত হয়েছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ১-২ দিনের মধ্যে এ উপজেলার বাকি দেড় হাজার হেক্টর বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

পাকা-আধা পাকা বোরো ধানের ক্ষেত ভারি বৃষ্টি আর ঢলের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হাওরপারের কৃষকদের মধ্যে আহাজারি চলছে। হাওর এলকার কৃষকদের বাঁচার অবলম্বন একমাত্র বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাঁরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের এই দুর্দশার মধ্যেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

এদিকে মঙ্গলবার হাওরপারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ শাহজাহান ও বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কুতুব উদ্দিন, তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস প্রমুখ।

উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, এবার বড়লেখায় ৪ হাজার ৩’শত ৪০ হেক্টর বোরো ধান আবাদ করা হয়। অনূকুল পরিবেশ থাকায় ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু গত ৭-৮ দিনের টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে। তবে বেসরকারী হিসেবে এর পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার হেক্টরের উপরে হবে। এর আগে গত বছরে বন্যায় একইভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছিলেন কৃষকরা। সেই ক্ষতির রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ক্ষতির মুখোমুখি হলেন কৃষকরা।
সরেজমিনে উপজেলার সুজানগর, বর্ণি, দাসেরবাজার, তালিমপুর, সদর, উত্তর শাহবাজপুরসহ প্রত্যেকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বোরো ধানের ক্ষেত ঢলের পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা যায়।

বাড্ডা এলাকার কৃষক স্বপন বিশ্বাস বলেন, ‘বউত আশা নিয়া ইবার বরোয়া ধান (বোরো) ক্ষেত (চাষ) করছিলাম। কিন্তু গত কয়েকদিনের মেঘ (বৃষ্টি) আর উজানের (পাহাড়ি) ঢলে আমার ১০ কিয়ার ধান পানির নিচে ডুবি গেছে।’

একই কথা বললেন একই এলাকার কৃষক সুবল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘ঋণ করি ইবার প্রায় ১২ কিয়ার জমিতে বরোয়া (বোরো) ধান ক্ষেত (চাষ) করছিলাম। ধানও ভালা অইছিল। কিন্তু ৭-৮ দিনের বৃষ্টি আর উজানের (পাহাড়ি) পানি আমার ১০ কিয়ার ধান ডুবি গেছে। এখন বড় কষ্টের মাঝে আছি। এর আগের বছরও বন্যায় আর হিলে (শিলা বৃষ্টিতে) আমার সারা ধান ডুবি গেছিল। এখন কিলা মানুষের ঋণ মারতাম (পরিশোধ) অউ চিন্তায় রাইত ঘুম আর না।’

তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস বলেন, ‘আমার ইউনিয়ন এলাকার প্রায় ৯০ ভাগ বোরো ধান তলিয়ে গেছে। অনেক কৃষক ঋণ করে বোরো আবাদ করেছিলেন। এখন তারা অসহায় হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচীর মাধ্যমে বীজ, সার ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য কৃষি বিভাগের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কুতুব উদ্দিন বলেন, ‘এবার আড়াই হাজার হেক্টর ধান তলিয়ে গেছে। ঢলে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গুলো আমরা পরিদর্শন করেছি। আপাতত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা কৃষকদের আউশ আবাদের পরামর্শ দিচ্ছি। আর সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা কর্মসূচীর মাধ্যমে বীজ, সার ও আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।’

(এলএস/এএস/এপ্রিল ০৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test