E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘আমরা একটি দেশ চাই, নাগরিকত্ব চাই’

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২৫ ১৮:০৪:৩৩
‘আমরা একটি দেশ চাই, নাগরিকত্ব চাই’

নিউজ ডেস্ক : মিয়ানমারের সব পাহাড়গুলো জীর্ণ-শীর্ণ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোকে আড়াল করেছে। কাঠের পোস্ট ও কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে আসলে দেখা মেলে রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রের।

দুই দেশের সীমান্তের শূন্য রেখায় এখনো অনেকেই আটকা আছেন। শূন্য রেখায় আটকা পড়েও তারা নিরাপদবোধ করছেন। কারণ পেছনে ফেলে আসা সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা ও ত্রাসের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের।

নদীতে স্রোতের ধারায় খেলছে কয়েক ডজন শিশু; যা আরেক বিভাজন তৈরি করেছে। এই বিভাজন নিরপেক্ষ ভূমি এবং বাংলাদেশের মধ্যে।

১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা এখনো সীমান্তে আটকা আছে। সীমান্তের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দিতে চাই না। অনির্দিষ্ট সময় ধরে তারা এখানে আটকা আছে।

বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা চট্টগ্রামে রোহিঙ্গাদের প্রবেশের অনুমতি নেই। তবে যারা নিরাপত্তাবাহিনীর চোখ গলে চট্টগ্রামে ঢুকে পড়েছে; তাদেরকে আটকের পর পুনরায় কক্সবাজারে পাঠানো হয়েছে।

গত আগস্টের শেষের দিকে রাখাইনে অস্থিরতা শুরুর পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের দিকে রোহিঙ্গাদের স্রোত চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

রোহিঙ্গা পুরুষ আনোয়ার উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে তার জন্মভূমি। এই দুই কিলোমিটার দূরত্ব এখন তার কাছে কল্পনাতীত হয়ে দেখা দিয়েছে। তাদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। লোকজনকে জিম্মি অবস্থায় রেখেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

আনোয়ার বলেন, তার ছোট ভাইকে চোখের সামনেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা তার কাছে এখন অনিরাপদ এবং একটি দুঃস্বপ্নের মতো।

তিনি বলেন, ‘অন্যরা যেখানে যাবে আমরাও সেখানে যাব। আমরা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। তবে সেখানে যখন শান্তি ফিরে আসবে শুধুমাত্র তখনই।’

সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের ‘জরুরি পুনর্বাসনের’ লক্ষে মিয়ানমার সরকার একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করেছে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে ১৯৯৩ সালে সাক্ষরিত একটি চুক্তির আওতায় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের এই পদক্ষেপ নিয়েছে মিয়ানমার।

বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও ঠিক কী পরিমাণ রোহিঙ্গা এই পদক্ষেপের আওতায় ফিরে যাবেন তা এই মুহূর্তে পরিষ্কার নয়। কিন্তু একই চুক্তির আওতায় গত দুই দশকে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার সংখ্যাও খুবই কম।

নিজের মাতৃভূমি আবারও দেখতে চাওয়াদের একজন আব্দুস সালাম। ১৯৯৩ সাল থেকে দেশে ফেরার অপেক্ষা করছেন তিনি। বাংলাদেশে তার দীর্ঘমেয়াদী দুর্দশা লাঘবে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সরকারের ‘জরুরি পুনর্বাসন’ শব্দটি এখন তার কাছে আশাব্যাঞ্জক নয়।

১৯৯২ সাল থেকে কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পরিবারসহ বসবাস করছেন ৬০ বছর বয়সী সালাম। নিবন্ধন কার্ড রয়েছে তার। তবে কার্ড ঘিরেই তার হতাশা। সালাম বলেন, ‘যদি মিয়ানমার সরকার আমাদেরকে নাগরিক অধিকার দেয় তাহলে আমি আজই ফিরে যাব।’

‘আমরা একটি দেশ চাই, আমরা নাগরিকত্ব চাই।’ রোহিঙ্গা সঙ্কটে অতীতে অনেক রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে। তবে ভয়াবহ আকার ধারণ করা এই সঙ্কটের সমাধান যে খুব শিগগিরই হবে সেই আশাও এখন ক্ষীণ হয়ে আসছে সালামের।

‘আমাদের দাবি পূরণের মাধ্যমে আমাদের কিছু মানুষকে অতীতে ফেরত নেয়া হয়েছে; কিন্তু সেই দাবি অধরা রয়ে গেছে। এর বদলে মানুষকে গলা কেটে হত্যা করা হচ্ছে। অগ্নিসংযোগ ও হত্যা এখনো বন্ধ হয়নি।’

রাখাইনে আমূল পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের অনেকেই ফিরতে চান না। জাফর উল্লাহ বলেন, তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়াই এখন তার কাছে প্রধান বিষয়।

‘আমি দেখেছি, আমাদেরকে গ্রামকে একেবারেই বিরানভূমিতে পরিণত করেছে...সেখানে কোনো ঘর-বাড়ি অবশিষ্ট নেই।’

‘আমার ভাই-বোনদের ওপর নিপীড়ন চালাতে দেখেছি। তাদের হাত শক্ত করে পেছনে বাধা হয়। তাদেরকে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে অাগুন লাগিয়ে হত্যা করা হয়।’

রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পোড়া মাটি নীতির গল্প। রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে সেনারা; এখনো রাখাইনের আকাশে উড়ছে ধোঁয়া। রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফের প্রবেশে ঠেকাতে সীমান্ত মাইত পুঁতেছে সেনাবাহিনী।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test