E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভেজাল ইফতারিতে ছেয়ে গেছে দেশ, আতঙ্কে রোজাদারেরা

২০১৪ জুলাই ০১ ১৮:৩৪:২৭
ভেজাল ইফতারিতে ছেয়ে গেছে দেশ, আতঙ্কে রোজাদারেরা

স্টাফ রিপোর্টার : রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস এই পবিত্র রমজান মাস। সারা দিন রোজা পালন শেষে ইফতারিতে কী খাবেন তা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে লাখ লাখ রোজাদারের মনে। ভেজালে ছেয়ে গেছে সারা দেশ।

ইঞ্জিন সচল রাখার মোবিল ব্যবহৃত হচ্ছে ইফতারির অনিবার্য অনুষঙ্গ পেঁয়াজু-বেগুনিতে। জিলাপি ভাজা হচ্ছে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হাইড্রোজ দিয়ে। এসব প্রতিরোধে একের পর এক আইন করা হচ্ছে। পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

ইঞ্জিন সচল রাখার জন্য যে মোবিল ব্যবহৃত হয়, সেটি ব্যবহার করা হচ্ছে ইফতারির অনিবার্য অনুষঙ্গ পেঁয়াজু-বেগুনিতে। জিলাপি ভাজা হচ্ছে হাইড্রোজ দিয়ে। মুড়িতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইউরিয়া সার। রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে জুস-শরবতে। এসব প্রতিরোধে একের পর এক আইন করা হচ্ছে। পরিচালনা করা হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

মবিলে ভাজা পেঁয়াজু-বেগুনি : পেঁয়াজু, বেগুনি, সবজিবড়া, বিভিন্ন কাবাব, আলুর চপ - এসব ভাজিপোড়া খাবার আকর্ষণীয় করতে ব্যবহার করা হচ্ছে তিকারক সিনথেটিক রঙ। সাধারণত খাবারে নির্দিষ্ট মাত্রায় রঙ মেশানোর নিয়ম থাকলেও দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ কাজে ব্যবহার করছেন কম দামি কাপড়ে ব্যবহৃত রঙ। অনেক সময় যে তেলে এগোলো ভাজা হচ্ছে তাতে মেশানো হচ্ছে মবিলও। ফলে খাবার মচমচে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কম দামি এসব টেক্সটাইল রঙ কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তা ছাড়া মবিলে ভাজা খাবার খেলে দীর্ঘস্থায়ীভাবে দেহের ক্ষতি হয়। এতে ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে এবং পরিপাক-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হয়। ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত এমন ক্ষতিকর তেল, মবিল, টেক্সটাইল রঙ উদ্ধার করেছেন অনেক অভিযানে। সাজা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের। কিন্তু মোবাইল কোর্টের স্বল্পতার সুযোগে অপরাধীরা অপরাধ করেই চলেছে।

হাইড্রোজযুক্ত জিলাপি-ছোলা : ইফতারের এক গুরুত্বপূর্ণ আইটেম জিলাপি। কিন্তু যে জিলাপি আমরা খাচ্ছি তা তো আমাদের জন্য ডেকে আনছে অনিবার্য মৃত্যুর সংবাদ। অনুসন্ধানে জানা যায়, জিলাপির খামির জমতে কিছুটা সময় লাগে। একশ্রেণীর বিক্রেতা চটজলদি জিলাপি বানাতে এতে হাইড্রোজ ব্যবহার করেন। ফলে জিলাপি মচমচে হয়। জিলাপি আকর্ষণীয় করতে অনেক সময় এতে মেশানো হয় লাল ও হলুদ কাপড়ের সিনথেটিক রঙ। অন্য দিকে কালো ছোলা সাদা করতেও দোকানিরা হাইড্রোজ দিয়ে তা সেদ্ধ করেন।

ফরমালিনযুক্ত দুধ-ফল : ইফতারে ফল ও দুধ দু’টি অত্যাবশ্যকীয় খাবার কিন্তু আতঙ্কের বিষয়, এ খাবার দু’টিতেও এখন মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর ফরমালিন। বিশেষ করে আম, মালটা, খেজুর, আপেল, আঙুর ও কমলায় এর ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া তরল দুধে এ ক্ষতিকর রাসায়নিকটি মেশানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন। পুষ্টিবিদদের অভিযোগ, কার্বাইড ও ফরমালিন মেশানোর কারণে এখন কোনো ফলেই আগের মতো স্বাদ পাওয়া যায় না।

ফরমালিনযুক্ত ফল খাওয়ার কারণে ধীরে ধীরে আমাদের কিডনি ও যকৃৎ নষ্ট হতে শুরু করে। ফলে মুখের স্বাদও নষ্ট হয়ে যায়। রাসায়নিক-মিশ্রিত এসব ফল খেয়ে মানুষের ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার সমস্যা, আর্সেনিক, স্নায়ু সমস্যা, পাকস্থলী সংক্রমণ, গর্ভজাত সন্তানের প্রতিবন্ধিতা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।

ইউরিয়াযুক্ত মুড়ি : মুড়ি ভাজতে যে সার ব্যবহার করা হচ্ছে তা কি স্বাস্থ্যের জন্য সহনীয়। অনেক দিন ধরে এটি ভাজা হচ্ছে হাইড্রোজ বা ইউরিয়া সার দিয়ে। মূলত আকারে বড় ও সাদা করতেই বিক্রেতারা এমনটি করেন। এ বিষয়ে এক মুড়ি বিক্রেতা জানান, ইউরিয়া সার ছাড়া মুড়ি ভাজলে তা লাল হয় আর লাল মুড়ি ক্রেতারা পছন্দ করেন না। এ জন্যই মুড়িতে সার ব্যবহার করা হয়।

জুসে রাসায়নিক : বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ফলের জুসে ফলের রস বা রসের ন্যূনতম উপাদান না থাকলেও নির্দিষ্ট ফলের রঙ, গন্ধ, চিনি ও পানি মিশিয়ে জুস হিসেবে তা প্যাকেট বা বোতলজাত করা হচ্ছে। চিনির বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে স্লাইকোমেট নামের রাসায়নিক তরল পদার্থ। এ ছাড়া ইফতারে শরবত হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্লাস্টিকের প্যাকেটে তৈরি গুঁড়া শরবত দেহের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোয় শুধু চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি ও রঙ মেশানো হয়।

আতঙ্কে রোজাদারেরা : ইফতারপণ্যে ক্ষতিকারক রঙ, ফরমালিন, মবিল, পোড়া তেল, সার, কার্বাইড প্রভৃতি ব্যবহারের ফলে রোজাদারদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে কাজের প্রয়োজনে যাদের বাসার বাইরে ইফতার করতে হয় এবং দোকানিদের তৈরি খাবারে ইফতার করতে হয় তাদের সামনে কোনো বিকল্পও নেই।

(ওএস/এটিআর/জুলাই ০১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test