E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

লক্কড় ঝক্কড় জাহাজ দিয়ে ঈদ স্পেশাল সার্ভিস চালুর প্রস্তুতি

২০১৪ জুলাই ১৯ ১৩:৫৮:৫৮
লক্কড় ঝক্কড় জাহাজ দিয়ে ঈদ স্পেশাল সার্ভিস চালুর প্রস্তুতি

স্টাফ রিপোর্টার : ঈদ উপলক্ষে পুরাতন ও লক্কড়-ঝক্কড় জাহাজ দিয়ে আগামী ২৪ জুলাই থেকে ঈদ স্পেশাল সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডবিস্নউটিসি)। তবে এ বছর এমভি বাঙালি নামে নতুন একটি জাহাজ নামনো হলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নিয়মিত সার্ভিস দিতে পারছে না জাহাজটি।

তাই আগের সেই পুরাতন স্টিমারের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে সংস্থাটির। ঈদের ৭ দিন আগে ও পরে স্টিমারের স্পেশাল সার্ভিস পরিচালিত হবে।

কিন্তু এই স্টিমারগুলো প্রতিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ পুরাতন ও লক্কড়-ঝক্কড়। কোনটির আবার বয়স ৫০ থেকে ৮০ বছরের পুরাতন। তাই এই পুরনো জাহাজ দিয়ে ঈদে উপলক্ষে স্টিমারের স্পেশাল সার্ভিস ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন সংস্থাটি। এছাড়া প্রতি বছর এই পুরাতন জাহাজ মেরামতে ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী পারাপার ছাড়াও বেশকিছু উপকূলীয় এলাকায় সি ট্রাক ও স্টিমার সার্ভিস পরিচালনা করে বিআইডবিস্নটিসি। কিন্তু এই জাহাজের অধিকাংশের বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। আবার ৮০ বছরের পুরনো নৌযানও রয়েছে এই সার্ভিসে। যদিও এসব নৌযানের ইকোনমিক লাইফ ২৫ বছর। তারপরও মেয়াদোত্তীর্ণ এসব নৌযান দিয়েই যাত্রী পরিবহন করছে সংস্থাটি। প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে স্পেশাল স্টিমার সার্ভিস ঘোষণা করা হলেও জাহাজের অভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সংস্থাটি। তাই এবার ঈদেও স্টিমারের স্পেশাল সার্ভিস নিয়ে বিপাকে বিআইডবিস্নটিসি। এছাড়া এ বছর প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এমভি বাঙালি নামের নতুন একটি জাহাজ নামানো হয়। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জাহাজটি নিয়মিত সার্ভিস দিতে পারছে না। তাই সেই পুরনো জাহাজের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে বিআইডবিস্নউটিসি'কে।

বিআইডবিস্নটিসি সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে স্পেশাল স্টিমার সার্ভিস হিসেবে ৬টি জাহাজ ও ৭টি সি ট্রাক চলাচল করার কথা রয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় জেলাগুলোয় চলাচল করে বিআইডবিস্নউটিসির যাত্রীবাহী জাহাজ আবদুল মতিন, মনিরুল হক ও এমভি বারো আউলিয়া। এর মধ্যে বারো আউলিয়া ছাড়া বাকি দুইটিই মেয়াদোত্তীর্ণ। বারো আউলিয়া ২০০২ সালে নির্মিত হলেও আবদুল মতিন, মনিরুল হক নির্মাণকাল ১৯৬৪। মেয়াদোত্তীর্ণ নৌযান দিয়ে যাত্রী পরিবহনের সময় মাঝে মধ্যে এগুলো বিকল হয়ে পড়ছে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি তো হচ্ছেই, মেরামত বাবদ বিআইডবিস্নউটিসিকেও প্রতি বছর গুণতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। উপকূলীয় অঞ্চলে চলাচলকারী যাত্রীবাহী ৩টি জাহাজ আবদুল মতিন, মনিরুল হক ও এমভি বারো আউলিয়া। এর মধ্যে দু'টিই মেয়াদোত্তীর্ণ। এগুলো চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ-হাতিয়া-বরিশাল রুটে চলাচল করে।

এছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটে সাতটি জাহাজের মধ্যেও এখন নিয়মিত চলে ৪টি। ঢাকা-খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে আগে নিয়মিত চলাচল করত পিএস লেপচা, পিএস মাসুদ, পিএস অস্ট্রিচ, পিএস টার্ন, এমভি সেলা, এমভি মধুমতী ও এমভি সোনারগাঁও। কিন্তু বর্তমানে সচল রয়েছে পিএস লেপচা, পিএস মাসুদ, পিএস অস্ট্রিচ, পিএস টার্ন, এমভি সেলা। এছাড়া এমভি মধুমতী ও এমভি সোনারগাঁও দীর্ঘদিন অকেজো পড়ে থাকার বাতিল করা হয়। এর মধ্যে এমভি সোনারগাঁওকে একটি বেসরকারি কোম্পানিকে রেস্টুরেন্ট হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে এবং এমভি মধুমতিকে নিলামে বিক্রয় করে দেয়া হয়েছে। ১৯৭২ সালে বিআইডবিস্নউটিসি গঠন করা হলেও স্বাধীনতার পর দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহনে তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি সংস্থাটি।

এ ব্যাপারে বিআইডবিস্নটিসি'র চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, এবার ঈদে ৬টি স্টিমার নিয়ে স্পেশাল সার্ভিস পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল-মোড়েলগঞ্জ রুটে চলাচল করবে ৪টি রকেট। এছাড়া ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করবে নতুন নামানো এমভি বাঙালি। চাঁদপুর-বরিশাল রুটে চলাচল করবে এমভি সেলা। পাশাপাশি নিয়মিত চলাচলকারী সি ট্রাক ও উপকূলীয় জাহাজগুলো সচল থাকবে। আগামী ২৪ জুলাই থেকে ঈদ উপলক্ষে পুরোপরি সার্ভিস শুরু হবে।

তিনি বলেন, পুরাতন জাহাজের মধ্যে চারটি জাহাজ এবার ঈদ স্পেশালের মধ্যে রয়েছে। তবে এই জাহাজগুলোকে মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। তাই ঈদ উপলক্ষে যাত্রী পরিবহনে তেমন কোন সমস্যা হবে না।

জানা গেছে, রকেট স্টিমার হিসেবে পরিচিত অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহনের প্যাডেল জলযানগুলোর ইঞ্জিন প্রথম দিকে কয়লাচালিত ছিল। পরে এগুলো ডিজেলে রূপান্তর করা হয়। রূপান্তরিত ইঞ্জিনও এরই মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ জাহাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো পিএস মাসুদ ও পিএস অস্ট্রিচ। এ দুটি জাহাজ তৈরি হয়েছে ১৯২৯ সালে। এ হিসাবে জাহাজ দুটির বয়স ৮৪ বছর। তবে পিএস মাসুদের ১৯৮৩ ও পিএস অস্ট্রিচের ইঞ্জিন ১৯৮৫ সালে ডিজেলে রূপান্তর করা হয়। পিএস লেপচার নির্মাণকাল ১৯৩৮ আর ডিজেলে রূপান্তর হয় ১৯৮৩ সালে। পিএস টার্নের নির্মাণকাল ১৯৫০ ও ডিজেলে রূপান্তর হয় ২০০২ সালে। এছাড়া এমভি সেলা নির্মিত হয় ১৯৫১ তে এর ইঞ্জিন ডিজেলে রূপান্তর হয় ১৯৮৮ সালে। এমভি সোনারগাঁওয়ের নির্মাণকাল ১৯৮২ ও পুনঃনির্মাণকাল ২০০৯।

এদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় প্রতি বছরই এসব নৌযান মেরামতে বিআইডবিস্নউটিসিকে ব্যয় করতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে যাত্রীবাহী স্টিমার পিএস লেপচা মেরামতেই বিআইডবিস্নউটিসির ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার ৯০৭ টাকা। একইভাবে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে পিএস অস্ট্রিচ মেরামতে ১ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৮ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে এমভি সোনারগাঁও মেরামতে ব্যয় হয় ২ লাখ ৯৪ হাজার ৯৪০ টাকা। সূত্র: সংবাদ।

(ওএস/এটিআর/জুলাই ১৯, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test