E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কর্নেল তাহেরের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

২০১৪ জুলাই ২১ ১৪:২৮:১৭
কর্নেল তাহেরের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিউজ ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টর কমান্ডার, ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক ও বামপন্থী নেতা কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তমের ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার। জিয়াউর রহমান সরকারের আমলে এক মামলার বিচারে ১৯৭৬ সালের এই দিনে মহান এই দেশপ্রেমিককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। দিনটিকে বিভিন্ন দল ও সংগঠন 'তাহের দিবস' হিসেবে পালন করছে।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর তার নেতৃত্বে জাসদ, বিপ্লবী গণবাহিনী এবং বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার উদ্যোগে ঐতিহাসিক 'সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান' সংঘটিত হয়। এ অভ্যুত্থানে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা নেন তৎকালীন উপ-সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। কিন্তু পরের বছরই জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার এক মামলার বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলে দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়।

সেনা অভ্যূত্থানের দায়ে ১৯৭৫ সালের ২৪ নভেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৭ জুন সামরিক আদালতে নজিরবিহীন প্রহসনের বিচার শুরু হয়। ১৭ জুলাই তথাকথিত সামরিক ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান পাকিস্তান প্রত্যাগত কর্নেল ইউসুফ হায়দার তাকে মুত্যুদণ্ড দেন। ২১ জুলাই ভোর ৪টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

বিতর্কিত এ রায়ে কর্নেল তাহেরসহ ১৭ জনকে মুত্যদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। ৩৪ বছর পর ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের, ভাই ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের (বীর বিক্রম) স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ ও অপর ভাই ড. আনোয়ার হোসেন ওই বিচার চ্যালেঞ্জ করে প্রথম রিটটি করলে ২০১১ সালের ২২ মার্চ হাইকোট গোপন বিচার, সাজা কার্যকর ও সামরিক আদালতকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

কর্নেল তাহেরের জীবন

কর্নেল আবু তাহের ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর ভারতের আসামের বদরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। নেত্রকোণার পূবধলা উপজেলার কাজলা গ্রামে তার পৈত্রিক নিবাস। বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ ও মাতা আশরাফুন্নেছা। আট ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তৃতীয়। ভাই আবু ইউসুফ বীর বিক্রম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও বাহার বীর প্রতীকসহ সবাই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ৭ আগস্ট ইডেন কলেজ ছাত্রী লুৎফা বেগমকে বিয়ে করেন।

কর্নেল তাহেরের শিক্ষা জীবন চট্টগ্রাম ফতেহাবাদ স্কুলে শুরু হয়। সিলেট এমসি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন তিনি। ১৯৫৯ সালে চট্টগ্রাম মিরসরাই দুর্গাপুর হাইস্কুলে শিক্ষকতা করার সময় বামপন্থী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতকোত্তর প্রথম পর্ব শেষ করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

১৯৬৫ সালে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপের সদস্য ও পাক-ভারত যুদ্ধে কাশ্মীর এবং শিয়ালকোট রণাঙ্গনে লড়াই করে আহত হন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম সেনানিবাসে থাকাকালীন স্বাধীনতাকামী একদল বাঙালি যুবককে সামরিক প্রশিক্ষণ দেন। ১৯৬৯ সালে ফোর্ট ব্রাগ ও ফোর্ট বেনিং-এ গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ এবং সমর বিদ্যায় গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পযন্ত পাকিস্তানের স্কুল অব ইনফেন্ট্রি এন্ড টেকটিক্স প্রশিক্ষণে ছিলেন। ২৬ মার্চ তাকে বন্দী করা হয়। ২৫ জুলাই পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতের দেবীগড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। দায়িত্ব নেন ১১ নং সেক্টর কমান্ডারের। জামালপুরে পাকিস্তানি সেনাঘাঁটিতে আক্রমণের সময় মটারসেলের আঘাতে বাম পা হারান। স্বাধীনতার পর তাকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের এপ্রিলে প্রথম অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল নিযুক্ত হন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ‘উৎপাদনমুখী সেনাবাহিনী প্রবর্তন’ বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়। একই বছর ২২ সেপ্টেম্বর বিগ্রেডিয়ার অধিনায়ক হিসেবে পদত্যাগ করেন।

৩১ অক্টোবর সক্রিয়ভাবে জাসদ রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার গণ-অভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি

দিবসটি উপলক্ষে আজ বিস্তারিত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচিতে রয়েছে নেত্রকোনা জেলার কাজলা গ্রামে কর্নেল তাহেরের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্মরণসভা, আলোচনা সভা প্রভৃতি।

প্রয়াত এই নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও কর্নেল তাহের স্মৃতি সংসদ পৃথক আলোচনা ও স্মরণসভার আয়োজন করবে।

(ওএস/এটিআর/জুলাই ২১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test