E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়

২০১৪ আগস্ট ০৫ ১৭:৫৭:০৬
বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়

নিউজ ডেস্ক : কালো বোরকা পরা মেয়েটি লুঙ্গি পরা যুবকটির হাত-পা ধরে অনুনয় করছেন। চোখে-মুখে তার আতঙ্কের ছাপ। মেয়েটির বয়স ২০ থেকে ২৪-এর মধ্যে। তার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে আরও ক’জন যুবক।

তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে। কিন্তু মেয়েটির অনুনয়ে ওই যুবকদের মন গলেনি। তারা মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। আর নির্বাক দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য অবলোকন করছে সঙ্গে থাকা তরুণটি।৩টি ভিডিও ক্লিপের এসব দৃশ্য এখন এলাকার তরুণ ও যুবকদের মোবাইলে মোবাইলে। প্রায় ৫ মিনিটের ওই তিনটি ভিডিও ক্লিপ নিয়ে তোলপাড় চলছে সিলেটের জৈন্তাপুরে।

ঘটনার স্পট সেখানকার শ্রীপুর চা-বাগান এলাকা। ভিডিও ক্লিপে ভেসে ওঠে আসামপাড়ার নাম। শ্রীপুর পর্যটন স্পটটি পর্যটকদের কাছে বেশ পরিচিত। সিলেট থেকে জাফলং যাওয়ার সময় পথেই পড়ে এ স্পট। পাহাড়-বাগান ঘেরা ওই স্পট নিরিবিলি হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে জাফলং আসা পর্যটকরা একটু জিরিয়ে নেন এখানে। ঘুরে দেখেন ছবির মতো আঁকা চা-বাগান এলাকা। এ চা বাগানের ভেতরেই বেড়াতে আসা তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ৫ দুর্বৃত্ত। আর ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে ছড়িয়ে দেয় বন্ধুদের মোবাইলে। এভাবে এক এক করে জৈন্তাপুরের শ’ শ’ যুবকের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে ধর্ষণের তিনটি ফুটেজ।

ভিডিও ফুটেজটি পৌঁছে যায় জৈন্তাপুর থানার সহকারী দারোগা মশিউর রহমানের হাতেও। তিনি সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। এরপর তদন্তের মাধ্যমে ঈদের তিন দিন পর গ্রেপ্তার করেন এক ধর্ষককে। আর তাকে গ্রেপ্তারের পর এ ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে জৈন্তাপুরে। আর ভিডিও ক্লিপটি নিয়ে কৌতূহল বাড়ছে। মোবাইলে রেকর্ড করা ভিডিও ফুটেজটি রমজানের আগে তোলা। তবে, ভিডিও ক্লিপে রেকর্ড পাওয়া তরুণীটি পরিচয় জানা যায়নি। তার বাড়ি স্থানীয় সারিঘাট এলাকায় বলে প্রাথমিকভাবে স্থানীয়রা ধারণা করছেন।

শ্রীপুর চা বাগান অনেকটা নির্জন এলাকা। এ কারণে প্রেমিক-প্রেমিকারা ওই এলাকায় আসেন ডেটিং-এ। ঘুরে বেড়ান বাগানের ভেতর। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে তারা ফিরে যান। তেমনিভাবে রমজানের আগে ওই পর্যটকজুটি বেড়াতে যান শ্রীপুর পর্যটন স্পটে। ওই সময় জৈন্তাপুর ইউনিয়নের আসামপাড়া নয়াবস্তা গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে শাহজাহান সহ ৫ যুবক বসে আড্ডা দিচ্ছিল বলে জানান স্থানীয়রা। এ সময় তাদের চোখে ধরা পড়ে বাগানের ভেতরে থাকা তরুণ-তরুণীর অবস্থান। এক পর্যায়ে তারা তরুণীটির ওপর হামলা চালায়। পরে বোরকা পরা তরুণীটির দিকে নজর দেয়।

প্রথম ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, তরুণীটি এক যুবকের পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করছে। তবে, ওই যুবক তার অনুনয় বিনয়ে কোন কর্ণপাত করে না। এ সময় পাশে থাকা আরও যুবকরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছিল। এক পর্যায়ে যুবকটি মেয়েটিকে জাপটে ধরে। পরে ভিডিও ক্লিপে তাদের ধর্ষণের দৃশ্যাবলি চিত্রায়িত করা হয়। এ সময় তরুণীর সঙ্গে থাকা গেঞ্জি পরা তরুণটিকে পাশে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিল।

পরের ভিডিওটিতে একই দৃশ্য। জৈন্তাপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষনের ভিডিও ক্লিপটি চায়ের বাগানের ভেতরে রেকর্ড করা। ধর্ষকদের একজন মোবাইল ফোনে এ ভিডিওটি রেকর্ড করে। পরে ক্লিপটি তারা তাদের বন্ধুদের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে দেয়। এভাবে ক্লিপটি ছড়িয়ে পড়ে জৈন্তাপুরের যুব সমাজের হাতে হাতে। এক পর্যায়ে পুলিশের হাতে ভিডিও ক্লিপটি এসে পৌঁছলে পুলিশ পর্যটন এলাকাকে নিরাপদ করতে তদন্ত নামে। তবে গণধর্ষিত হওয়া তরুণীটি কিংবা তার সঙ্গে থাকা তরুণটি পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ দেয়নি।

ভিডিও ক্লিপটি পুলিশের হাতে আসামাত্র গত ১লা আগস্ট রাত ৯টায় জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশের সহকারী দারোগা মশিউর রহমান আসামপাড়া এলাকা থেকে প্রধান ধর্ষণকারী শাহজাহান মিয়াকে আটক করে। তার আটকের পর পরই গা-ঢাকা দিয়েছে আরও চার ধর্ষক। গ্রেপ্তারের পর শাহজাহান প্রথমে অভিযোগ অস্বীকারের চেষ্টা করে। কিন্তু ভিডিও ক্লিপে শাহজাহানের উপস্থিতি ও ধর্ষণের চিত্র স্পষ্টই ভেসে ওঠে। পরে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের শাহজাহান ধর্ষণের কথা স্বীকার করে। আর পুলিশের কাছে তার সহযোগীদের পরিচয় দিয়েছে। পুলিশ ঘটনাটি উল্লেখ করে শাহজাহানকে আদালতে পাঠিয়েছে। পুরো ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ তাকে রিমান্ডে নেবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

জৈন্তাপুর থানার সহকারী দারোগা মশিউর রহমান জানান, ভিডিও ক্লিপের বিষয়টি ওসি অবগত হওয়ার পর তিনি উদ্যোগ নেন। পরে তদন্তের পর গ্রেপ্তার করা হয় শাহজাহানকে। আর শাহজাহান পুলিশের কাছে পুরো বিষয়টি স্বীকার করেছে। তিনি বলেন, পুলিশ বসে নেই। আরও চার ধর্ষককে গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। জৈন্তাপুর থানার ওসি হারুনুর রশীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ধর্ষক শাহজাহানকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে এবং ঘটনা সম্পর্কে আদালতকে অবগত করা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযোগ না দিলেও পুলিশ পর্যটন এলাকাকে নিরাপদ করতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ধর্ষিতার পক্ষে কেউ মামলা দিলে তা রেকর্ড হবে।

এদিকে, আসামপাড়া এলাকার লোকজন জানান, শ্রীপুর চা বাগান এলাকা মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। আর ধর্ষকরা ঘটনার সময় ওই বাগানে বসে মাদক সেবন করছিল। জৈন্তাপুর ইউনিয়নের এলাকার প্রবীণ মুরুব্বি আফতাব আলী, সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক ইউপি সদস্য মিরন মিয়া, আসামপাড়া আশ্রায়ণ প্রকল্পের সভাপতি আবদুল জলিল জানিয়েছেন, এ ঘটনাটি জৈন্তাপুর উপজেলার কালো অধ্যায় রচনা করেছে। উপজেলার একমাত্র পর্যটন এরিয়া শ্রীপুর চা-বাগান, শ্রীপুর পাথর কোয়ারি, শ্রীপুর পিকনিক সেন্টার।

এভাবে যদি পর্যটকদের অভিভাবকদের জিম্মি করে মাদকসেবী ও জুয়াড়িরা ধর্ষণ করে এবং ভিডিওচিত্র ধারণ করে মোবাইল ফোনে ছেড়ে দেয় তাহলে মা-বোন নিয়ে শ্রীপুর পর্যটন এলাকায় চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। জৈন্তাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঘটনাটি ঘৃণিত। ধর্ষকদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। সূত্র:মানবজমিন

(ওএস/এটিআর/আগস্ট ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test