E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে ৩ বছর ধর্ষণ, মামলায় পলাতক পূর্বাশা’র এমডি

২০২০ অক্টোবর ২৫ ১৮:০২:০২
ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে ৩ বছর ধর্ষণ, মামলায় পলাতক পূর্বাশা’র এমডি

স্টাফ রিপোর্টার : ধর্ষণের পর ভিডিও ও ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দফায় দফায় এক নারীকে ধর্ষণ করেছেন পূর্বাশা কম্পোজিট টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী হোসেন। এখন ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওই এমডি।

তবে সূত্র জানিয়েছে, আত্মগোপনে থাকলেও অফিসিয়াল কাজকর্মের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। নিয়মিত ডিজিএম ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তিনি। এমনকি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও সুযোগ বুঝে যোগাযোগ করছেন ধর্ষক আলী হোসেন।

অন্য একটি নির্ভরশীল সূত্র জানিয়েছে, আলী হোসেন একাধিক মেয়ের সর্বনাশ করেছেন। তিনি অফিসে কৌশলে মেয়েদের ডেকে আনতেন। কাউকে দিতেন টাকার আশ্বাস, কাউকে চাকরির আশ্বাস। এ সবেও কাজ না হলে তিনি ওই নারীদের ব্ল্যাকমেইলিং করতেন। অন্তত দুইশ নারীর সর্বনাশ করেছেন আলী হোসেন।

সূত্র আরও জানায়, পেশাদার যৌনকর্মীদের সঙ্গেও মেলামেশা ছিল আলী হোসেনের। তাদেরকেও টাকার বিনিময়ে হাতে রাখতেন।

ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে তিন বছর ধরে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে আলী হোসেনের (৬০) বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করা হয়। মামলা নম্বর: ২৫। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২০ এর ৯(১) সহ ৩১৩/৫০৬ পেনাল কোড ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলার এজাহারে ওই নারী উল্লেখ করেছেন, তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। গার্মেন্টস পণ্য প্রতিষ্ঠান পূর্বাশা গ্রুপের এমডি আলী হোসেন ওই কোম্পানির করপোরেট গ্রাহকদের মধ্যে একজন। সেই সূত্রে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর ২০১৮ সালের ১৯ জুন প্রথম ৭ নম্বর সেক্টরের লেক ড্রাইভ রোডের ৬৮ নম্বর বাসার ষষ্ঠ তলায় বিকেল ৫টায় সাক্ষাৎ হয়। ওইদিন তার সঙ্গে ব্যবসা সংক্রান্ত কথা হয়। কথা বলার এক পর্যায়ে আলী হোসেন তাকে জাপটে ধরেন। নিজেকে বাঁচাতে ওই নারী চেষ্টা করেন। ওই সময় চেয়ারে ব্যথা পেয়ে ওই নারী পড়ে যান। পায়ে আঘাত পেলেও আলী হোসেন তাকে প্রথম দফায় ধর্ষণ করেন।

এরপর ২০১৮ সালের ৫ জুলাই ওই নারীকে ফোন করে জানায়, ১৯ জুনের ঘটনার ছবি ও ভিডিও করা হয়েছে। কথামতো না চললে তার কাছে থাকা ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এরপর ২০১৮ সালের ২১ জুলাই তার অফিসে গিয়ে শারীরিক অবস্থা খারাপ জানালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে টেস্ট করালে প্রেগনেন্সি পজিটিভ ধরা পড়ে। এরপর চাপ দিয়ে গর্ভপাত করায় আলী হোসেন।

একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় পুনরায় ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ফের ধর্ষণ করেন আলী হোসেন। এরপর ২০১৯ সালের ১ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে ছবি ও ভিডিও ওই নারীর স্বামীর কাছে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে আবারও ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার পর ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট প্রেগনেন্সি পজেটিভ ধরা পড়লে আবারও গর্ভপাত করায় আলী হোসেন।

এরপর চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায়, ৬ মার্চ ও ১৩ মার্চ সাড়ে ৪টায় ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। তার কথামতো না চলায় প্রায় সময়ই বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন আলী হোসেন। তার কাছে থাকা ছবি ও ভিডিও তার স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে ধর্ষণের শিকার ওই নারীউত্তরাধিকার ৭১ নিউজকেবলেন, ‘লম্পট আলী হোসেন আমাকে জিম্মি করে দফায় দফায় ধর্ষণ করেছে। তার কারণে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমি তার শাস্তি চাই।’

ওই নারী আরও বলেন, ‘সে আমার সংসার নষ্ট করেছে। আমার সন্তানের ভবিষ্যত নষ্ট করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।’

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আলী হোসেনের তিনটি মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার অফিসের এক স্টাফ বলেন, ‘স্যারের নামে মামলা হয়েছে। পুলিশ এসে তদন্ত করে গেছে।’

লেক ড্রাইভ রোডের ওই অফিসে বিভিন্ন নারীরা আসত। এ সময় দরজা বন্ধ করে সময় কাটাতেন আলী হোসেন জানান তার অফিসের ওই স্টাফ।

আলী হোসেনের বিরুদ্ধে এই মামলার তদন্ত করছেন উত্তরা পশ্চিম থানার সাব-ইন্সপেক্টর মাসুদা। তিনি বলেন, ‘ওই আসামি পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে সম্ভাব্য জায়গায় অভিযান চলছে। তার বাসাতেও আমরা গিয়েছি। পরিবারের সদস্যরা আলী হোসেনের কোনো খোঁজ জানে না বলে জানিয়েছে। তবে তার অফিসে গিয়েও আমার আনুষঙ্গিক তথ্য নিয়েছি।’

উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘মামলা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। পাশাপাশি আসামিকে গ্রেফতার করতে সম্ভাব্য জায়গায় অভিযান চলছে।’

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test