E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১০ বছরে শত কোটি টাকার মালিক

সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাহফুজের হাতে ‘আলাদীনের চেরাগ’

২০২০ অক্টোবর ২৫ ১৮:০৪:৪৮
সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাহফুজের হাতে ‘আলাদীনের চেরাগ’

স্টাফ রিপোর্টার : যেন রূপকথার সেই আশ্চর্য আলাদীনের চেরাগ পেয়েছেন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) এস এম মাহফুজুর রহমান। চাকরিতে ঢোকার দশ বছরের মাথায় তিনি এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। ঢাকায় রয়েছে একাধিক বাড়ি-প্লট। ব্যবহার করেন দামি গাড়ি।

শুধু তাই নয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে চাকরি করা এই কর্মকর্তা সম্প্রীতি দেশের বাড়িতে দুই কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করেছেন। গ্রামেও রয়েছে তার শত শত কাঠা জমি। অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন শত শত কোটি টাকা।

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) কাস্টমসের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ জমা পড়েছে। দুদকে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, মাহফুজুর রহমান সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। বর্তমানে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে কর্মরত। মাহফুজ ২০০৯ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অধীনস্থ মোংলা কাস্টমসে অফিস সহকারী পদে যোগাদান করে। মোংলা কাস্টমসে থাকাকালীন এই কর্মকর্তা বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

এমনকি দুর্নীতির জন্য কয়েকবার বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অপরদিকে খুব চালাক ও চতুর হওয়ার সুবাধে এই কাস্টমস কর্মকর্তা যে কাউকে বশে নিয়ে নেন। তাই তার দুর্নীতির খবর কাস্টমস বিভাগের অনেকে জানলেও কোন কিছু কেউ বলতে চান না।

এ কাস্টমস কর্মকর্তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ। এরপর ২০১৬ সালে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পায়। কিন্তু কাস্টমসে যোগদান করার সময়ও মাহফুজের বাবা ছিলেন খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলসের একজন সামান্য কর্মচারী। এমনকি তার শ্বশুরও খুলনা ক্রিসেন্ট জুট মিলসের কর্মচারী ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, পরিবারের সদস্যরা সামান্য শ্রমিক ও জুট মিলসের কর্মচারী হয়ে রাতারাতি কীভাবে জীবনযাপন বদলে যায় তার উদাহরণ মাহফুজ।

আরও বলা হয়েছে, কাস্টমসে যোগদান করার পর পাল্টাতে থাকে তার জীবনযাত্রা। ২০১৯ সালের শুরুতে রাজশাহী ভ্যাট থেকে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে ঘুষ দিয়ে বদলি হয়ে আসেন মাহফুজ। এরপর ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে আইন শাখায় কাজ করছেন তিনি। মাহফুজ এমন কর্মকর্তা তার কাছে টাকা ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটে প্রতিটি ফাইলে টাকা নেন। আর টাকা না দিলে ফাইল আটকে রাখেন মাসের পর মাস। যার কারণে বন্ড ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে মাহফুজকে ঘুষ দেয়।

দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এই কাস্টমস কর্মকর্তা অবৈধভাবে হয়েছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক। খুলনার খালিশপুরে বাড়ি নম্বর ১, রোড নম্বর ১১২ তে করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। জমির পরিমাণ ৫ কাঠা। সম্প্রতি ২ কোটি টাকা দিয়ে বাড়িটি করেছেন। এছাড়া ঢাকায় রয়েছেন নিজস্ব গাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট। আর বাবা, স্ত্রী, শ্বশুর, ভাই বোন, শ্যালক, শাশুড়ি ও ভগ্নিপতির নামে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে কোটি টাকার এফডিআর ও সঞ্চয়পত্র। গ্রামের বাড়িতেও কিনেছেন প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদ। যা গ্রামের সবার মুখে মুখে। সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে খুলনা আপিলে যাওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এ আবেদনও জমা দিয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ অফিসার।

এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাহফুজ উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগের ভিত্তি নেই। আমাকে হেয় করার জন্য দুদকে মনগড়া অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।’

অপরদিকে কাস্টমস কর্মকর্তার দুর্নীতি বিষয়ে জানতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের ব্যক্তিগত ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।

কাস্টমস কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব দিলোয়ার বখত উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ আসে। আর অভিযোগ আসার পরে সেটা যাচাই-বাছাই হয়। কোনো দুর্নীতিকারী বা দুর্নীতিবাজ দুর্নীতি করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করলে সেটা ভোগ করা যাবে না। দুদক অবশ্যই বিষয়টি দেখবে। এ ছাড়া দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test