E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৩০ কোটি শিশুর বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই

২০২০ ডিসেম্বর ০১ ১৭:৩৩:৩৯
১৩০ কোটি শিশুর বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই

স্টাফ রিপোর্টার : ইউনিসেফ ও আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী স্কুলবয়সী শিশুদের দুই তৃতীয়াংশ বা  তিন থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৩০ কোটি শিশুর বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। একই অবস্থা ১৫-২৪ বছর বয়সী তরুণদেরও।

তরুণ জনগোষ্ঠীর ৬৩ শতাংশ বা ৭৫ কোটি ৯০ লাখ তরুণ-তরুণীর ঘরে ইন্টারনেট সংযোগ নেই।

‘কত সংখ্যক শিশু ও তরুণের ঘরে ইন্টারনেট সুবিধা আছে?’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে মঙ্গলবার ( ১ ডিসেম্বর) ইউনিসেফ ঢাকা অফিস এ তথ্য জানায়।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা মাল্টি ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬২ শতাংশ পরিবারের বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। একইসঙ্গে একটি জাতীয় গড় ও পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।

বাংলাদেশে সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ পরিবারের মাত্র ৮ দশমিক ৭ শতাংশের বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, যেখানে সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ পরিবারের ক্ষেত্রে এই হার ৭৫ দশমিক ৩ শতাংশ। দূরশিক্ষণের আরেকটি প্রধান মাধ্যম টেলিভিশনের বেলায় জাতীয়ভাবে ৫১ শতাংশ পরিবার টেলিভিশনের মালিক। একইসঙ্গে সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ পরিবারের মাত্র ৪ দশমিক ৮ শতাংশ টেলিভিশনের মালিক, যেখানে সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ পরিবারের মধ্যে এই হার ৯০ দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি টোমো হোযুমি বলেন, দূরশিক্ষণের এই মাধ্যমগুলো ব্যবহারের সুযোগ না পাওয়া শিশুরা ডিজিটাল বিভাজন ও বৈষম্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মহামারি চলাকালীন তারা শিক্ষা গ্রহণের কম সুযোগ পেয়েছে, যা তাদের শিক্ষাজীবন ও ভবিষ্যৎ এলোমেলো করে দিয়েছে। এই বিভাজন আগে থেকে বিদ্যমান বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

কোভিড-১৯ এর কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইন্টারনেট ও টেলিভিশন ছাড়া শিক্ষা কার্যক্রম কার্যকরভাবে এই শিশুদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এমনকী মহামারির আগেও একবিংশ শতাব্দীর অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার জন্য তরুণ জনগোষ্ঠীর একটি ক্রমবর্ধমান অংশের ভিত্তিগত, স্থানান্তরযোগ্য, ডিজিটাল, চাকরিকেন্দ্রিক এবং উদ্যোগী দক্ষতা শেখার প্রয়োজন হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিজিটাল বিভাজন বৈষম্য দীর্ঘস্থায়ী রূপ দিচ্ছে, যা ইতোমধ্যে দেশ ও কমিউনিটিগুলোকে বিভক্ত করে ফেলেছে। দরিদ্রতম পরিবার, গ্রামাঞ্চল ও স্বল্প আয়ের পরিবারের শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠী তাদের সমবয়সী বা সহপাঠীদের চেয়ে আরও পিছিয়ে পড়ছে এবং পুনরায় সহপাঠীদের সঙ্গে একই কাতারে পৌঁছানোর সুযোগও তাদের খুব কম।

বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ধনী পরিবারের স্কুলবয়সী শিশুদের মধ্যে ৫৮ শতাংশের বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে, যেখানে সবেচেয়ে দরিদ্র পরিবারের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ১৬ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আয়ের ভিত্তিতে একই ধরনের বৈষম্য বিদ্যমান। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে স্কুলবয়সী প্রতি ২০ জন শিশুর মধ্যে একজনেরও কম শিশুর বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে, যেখানে উচ্চ-আয়ের দেশগুলোতে প্রতি ১০ জন শিশুর ৯ জনের বাড়িতেই ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে।

দেশ এবং অঞ্চলজুড়ে ভৌগোলিক বৈষম্যও রয়েছে। বিশ্বব্যাপী, শহরাঞ্চলে স্কুলবয়সী শিশুদের প্রায় ৬০ শতাংশের বাড়িতে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই, যেখানে গ্রামে থাকা পরিবারগুলোর স্কুলবয়সী শিশুদের প্রায় তিন চতুর্থাংশ এ সুবিধা পায় না। সাব-সাহারা আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার স্কুলবয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, যেখানে প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে প্রায় ৯ জনই ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে।

গত বছর ইউনিসেফ ও আইটিইউ প্রতিটি স্কুল ও তার আশপাশের কমিউনিটিকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে বৈশ্বিক উদ্যোগ ‘গিগা’ চালু করে। সরকারগুলোর সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে ‘গিগা’ এরইমধ্যে ৩০টি দেশে ৮ লাখেরও বেশি স্কুলের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এই তথ্য নিয়ে ‘গিগা’ ডিজিটাল শিক্ষা সমাধান ও অন্য সেবা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সংযোগের অবকাঠামো তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি মিশ্রিত বিনিয়োগের জন্য বাধ্যতামূলক বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে সরকার, শিল্পখাত, বেসামরিক খাত এবং ব্যক্তিগত খাতের অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test