E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হোটেল নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিনাশী বাণিজ্যিক ধান্দা বন্ধ করুন

২০২১ মে ০৬ ২২:৫৩:২৪
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হোটেল নির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিনাশী বাণিজ্যিক ধান্দা বন্ধ করুন

স্টাফ রিপোর্টার : মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ও সৌন্দর্যের জীবন্ত প্রতীক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল্যবান গাছগাছালি কেটে হোটেল নির্মাণকে কোনো ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বাণিজ্যিক ধান্দাবাজি বলে এ অপকর্মের বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান আবীর আহাদ তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছেন । তিনি অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে বাণিজ্যিক ধান্দাবাজির এ মাফিয়াকর্মের কবল থেকে রক্ষা করার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ।

আজ এক বিবৃতিতে উপরোক্ত মন্তব্য ও আহ্বান জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবীর আহাদ বলেন, ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাথে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অনেকগুলো ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য জড়িত । এ উদ্যান থেকেই ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের বড়লাট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর (Urdu, only urdu shall be the state language of Pakistan) বাংলা ভাষাবিরোধী ঔদ্ধত্যমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে ভাষা আন্দোলন তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে । এ উদ্যানেই ১৯৭০ এর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা বাঙালির মুক্তিসনদ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা কর্মসূচির ওপর দৃঢ় থাকার শপথ গ্রহণ করেন । এ উদ্যানেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ঘোষণা দেন । এ উদ্যানেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমাণ্ডের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নি:শর্ত আত্মসমর্পণ করে ।

এ উদ্যানেই ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে থেকে মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ও ভারতের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এক ঐতিহাসিক গণসংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয় । আরো অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এ উদ্যান । সর্বশেষ এ উদ্যানেই নির্মাণ করা হয়েছে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক স্তম্ভ । মূলত: এ উদ্যানটি হলো আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র উদ্যান । এ উদ্যানেই প্রতি বছর বসে বাঙালির প্রাণের মেলা বইমেলা । এহেন ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও চেতনার ধারক-বাহক ও সৌন্দর্যমণ্ডিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষের বাণিজ্যিক ক্ষেত্র হিশেবে ব্যবহৃত হতে দেয়া যায় না । তাছাড়া এখানে রয়েছে বহু মূল্যবান গাছগাছালি । পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, প্রাকৃতিক অক্সিজেন উৎপাদন, নাগরিক ভ্রমণ ও বিনোদনের অন্যতম পীঠস্থান বলে খ্যাত এ উদ্যানকে কারো অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্র হিশেবে ব্যবহার করার দু:সাহসকে প্রশ্রয় দেয়া যায় না ।

আবীর আহাদ দু:খ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী আওয়ামী লীগ, সরকার প্রধান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা----অথচ এ সরকারের আমলে বারবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের কারসাজি আমরা প্রত্যক্ষ করে আসছি । গতবছর বিদেশীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র বিক্রি করার জন্য সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটা ন্যক্কারজনক পদক্ষেপ নিলে আমিসহ আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে ফেটে পড়লে সেই পদক্ষেপ স্থগিত হয়ে যায় । এখন আবার ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ও চেতনার প্রতীক ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্মৃতি ও ঐতিহ্যকে ম্লান করে বাণিজ্যিক ধান্দার লক্ষ্যে এখানে অনেকগুলো হোটেল নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে ! এ লক্ষ্যে কেটে ফলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর হাতে রোপন করা অনেক মূল্যবান গাছগাছালি । মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র বিক্রয় করে কমিশন খাওয়া ও ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে হোটল ব্যবসার বাণিজ্যিক ধান্দায় পরিণত করার পশ্চাতে কোন দুষ্কৃতকারীর মস্তিষ্ক থেকে এসব অপকর্ম উদয় হচ্ছে এবং কারা এসের অনুমোদন দিচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে তাদের মাথা গুড়িয়ে দেয়া দরকার, যাতে এধরনের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনাবিনাশী কুবুদ্ধি কারো মাথা থেকে উদয় না ঘটে ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আবীর আহাদ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে হোটেল নির্মাণ ও বৃক্ষ নিধনযজ্ঞ বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্যে সর্বস্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, ছাত্র সমাজ ও পরিবেশবাদীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ।

(এ/এসপি/মে ০৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test